Srinagar Blast: বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক হরিয়ানা থেকে কাশ্মীরে আনা হল কেন? রাতে নমুনা পরীক্ষা কেন?
Nowgam Police Station Blast: এক বিস্ফোরণেই শ্রীনগরের নওগাম থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, সুকান্ত মুখোপাধ্য়ায় ও শিবাশিস মৌলিক: লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণকাণ্ডে তোলপাড়ের মধ্যেই, শ্রীনগরে থানায় বিস্ফোরণ। নওগাম থানা চত্বরে মজুত বিস্ফোরক ফেটে মৃত্য়ু হয়েছে ন’জনের। কিন্তু প্রশ্ন হল, থানায় একসঙ্গে এত বিস্ফোরক রাখা হয়ছিল কেন? নমুনা সংগ্রহ করে বাকিটা কেন ধ্বংস করে দেওয়া হয়নি? এতগুলো প্রাণ চলে গেল, এর দায় কি কেউ নেবে? (Nowgam Police Station Blast)
এক বিস্ফোরণেই শ্রীনগরের নওগাম থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ভিতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে ছিল পুলিশ কর্মীদের দেহাংশ। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন তদন্তকারী, স্টেট ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একজন অফিসার। ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরোটারির তিন আধিকারিক। দু'জন শুল্ক আধিকারিকেরও মৃত্যু হয়েছে বিস্ফোরণে। এছাড়াও নিহতদের তালিকায় রয়েছে ক্রাইম উইং-এর একজন ফটোগ্রাফার ও এক দর্জি। (Srinagar Blast)
শ্রীনগরে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটার ঘটনায় আদিল আহমেদ নামে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করে নওগাম থানারই পুলিশ। এর পরই সামনে আসে জইশের চিকিৎসক-জঙ্গি মডিউল। (Srinagar Blast)
আদিলকে জেরা করেই হরিয়ানার ফরিদাবাদে মজুত প্রচুর বিস্ফোরকের সন্ধান মেলে। পুলিশের দাবি, বাজেয়াপ্ত সেই অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফরিদাবাদ থেকে আনা হয়েছিল কাশ্মীরে। মজুত রাখা হয়েছিল নওগাম থানা চত্বরের মধ্যে একটি খোলা জায়গায়।
কিন্তু এত বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক হরিয়ানা থেকে কাশ্মীরে আনার আদৌ কি কোনও প্রয়োজন ছিল? নমুনা সংগ্রহ করে বাকিটা কেন আগেই ধ্বংস করে দেওয়া গেল না? থানার মতো জায়গায় একসঙ্গে এত পরিমাণ বিস্ফোরক রাখাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ও নিরাপদ? বিস্ফোরক আনা হলেও, তারজন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা কি করা হয়েছিল? গোটা ঘটনায় এমন একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে।
এ নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজ্যের প্রাক্তন ADG নজরুল ইসলাম বলেন, “থানার গাফিলতি মারাত্মক। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরত থানায় নেওয়াই নিয়মবিরুদ্ধ। প্রয়োজনে নমুনাটুকুই নিত! এটা তো আনারই কথা নয়! বিস্ফোরক প্রতিরোধকারী ব্ল্যাঙ্কেট ব্যবহার করা হল না কেন? কাশ্মীরের মতো একটা জায়গায় অপারেশনের রুলই মানা হয়নি। এগুলো প্রশিক্ষণের সময়ই বলা হয়। ওরা সেই নীতি মানেনি। থানা ও পুলিশের গাফিলতি।”
শুক্রবার রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ নওগাম থানায় বিস্ফোরণ হয়। জম্মু কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকের ফরেন্সিক ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য গত দু’দিন ধরে নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গেই নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে সেই কাজ করার সময়ই দুর্ভাগ্যবশত বিস্ফোরণ ঘটে যায়। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, অত রাতে কেন নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছিল? এই কাজ কি দিনে করা যেত না? রাতে কাজ করার ঝুঁকি কেন নেওয়া হল? তাই BSF-এর প্রাক্তন DIG সমীর মিত্র বলেন, “অ্যাকশন নেওয়ার দরকার ছিল। এত রাতে…আমি তো সাবোটাজের গন্ধ পাচ্ছি, যে ওটাকে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আপনা থেকে হয়নি। সাবোটাজটা কে করল?”
ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধার হওয়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে অন্য কোনওকিছু মেশানো থাকা নিয়ে প্রথম থেকে সন্দেহ ছিল! তাহলে কেন বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হল না? ব্রিগেডিয়ার প্রণব ঘোষ বলেন, “চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এমন জিনিস, বিশুদ্ধ অবস্থায় বিস্ফোরণ ঘটে না। ফরিদাবাদ থেকে উদ্ধারের সময় রাসায়নিক পরীক্ষা হয়েছিল? হিট দিলে অথবা শক দিলে বিস্ফোরণ হতে পারে। জম্মু ও কাশ্মীরের মতো একটা রাজ্যে তাড়াহুড়ো করা উচিত হয়নি। তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ রাজ্য হরিয়ানা থেকে হরিয়ানায় বিস্ফোরক আনার দরকার ছিল না। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ মূর্খের মতো কাজ করেছে।”
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের জম্মু ও কাশ্মীর ডিভিশনের যুগ্ম সচিব প্রশান্ত লোখান্ডে যদিও জানান, নমুনা পরীক্ষা ফরেন্সিক ও রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছিল। কী কারণে এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টির অন্য কোনো ব্যাখ্যা অনাবশ্যক বলেও জানান তিনি।
প্রথমে দিল্লির দেশের রাজধানীতে বিস্ফোরণের চার দিনের মাথায় নওগাম থানায় এই বিস্ফোরণ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে সোশ্য়াল মিডিয়ায় লেখেন, ‘দিল্লির লালকেল্লার সামনে গাড়ি বিস্ফোরণের কয়েকদিনের মধ্যেই এই ঘটনা, কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা এবং সন্ত্রাসবিরোধী কৌশলকে যে আরও শক্তিশালী করতে হবে, তারই সতর্কবাণী। এর জবাবদিহি থেকে কেউ পালাতে পারে না’। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “এত বিস্ফোরক কোথা থেকে এল? সেটা আবার রাখতে গিয়ে থানা উড়ে গেল? আইনশৃঙ্খলা কোথায়? পরিকাঠামো কোথায়।” বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কোর্টেই বল ঠেলেছেন তিনি।নওগাম বিস্ফোরণে আহতদের ভারতীয় সেনার বেস হাসপাতাল এবং শের-ই-কাশ্মীর ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেসে ভর্তি করানো হয়েছে।






















