Durga Puja 2022 : গঙ্গায় ভেসে আসে কাঠ, গৃহকর্তা পান পুজোর স্বপ্নাদেশ, সেই থেকে আজও জৌলুসপূর্ণ দে-সরকার পরিবারের পুজো
রমানাথ দে সরকারের আমলে মা দুর্গার বেনারসি শাড়ি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হত। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ আসতেন এখানে।
কলকাতা : এক সময় দক্ষিণ কলকাতার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ছিল দে-সরকার পরিবারের জমিদারি। শতাধিক কাল পেরিয়ে গেলেও এই পুজোর জৌলুস কমেনি। বরং পরবর্তী প্রজন্মগুলি মহাসমারোহে এগিয়ে নিয়ে চলেছে পুজো।
পুজোর ইতিহাস
এ পুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীনয শ্রী রাজ নারায়ণ দে সরকারের ছেলে শ্রী রমানাথ দে সরকার ১৮৮৯ সালে প্রথম দুর্গাপুজো শুরু করেন। দেবী দুর্গা প্রতিমা প্রথম তৈরি করেন নগেন পাল। তারপর থেকেই এই পুজো করে চলেছেন কৃষ্ণনগরের রবীন পাল।
ডাকের সাজের প্রতিমা
এই পরিবারের এক চালচিত্রের প্রতিমা নয়নাভিরাম। ডাকের সাজের এই প্রতিমার উপর গয়নার বাহারে সকলের চোখ আটকাবে। এ বাড়ির প্রতিমার অস্ত্র সোনালী, রুপো এবং হীরে দিয়ে তৈরি। রমানাথ দে সরকারের আমলে মা দুর্গার বেনারসি শাড়ি প্রতিদিন পরিবর্তন করা হত। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ আসতেন এখানে।
কীভাবে শুরু পুজো
কথিত আছে, জন্মাষ্টমীর আগের দিন সকালে এ পরিবারের গৃহবধূ শ্রীমতি হেমাঙ্গিনী দে সরকার গঙ্গার তীরে একটি কাঠের তক্তা (গরান কাঠ) দেখতে পান। তিনি সেই তক্তাটি নিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন কিন্তু রমানাথ দে সরকার তার প্রধান সেবক রামবাবুকে সেই তক্তাটি আবার গঙ্গা নদীতে ফেলে দিতে বলেন। পরে সেই রাতে শ্রী রমানাথ দে সরকার একটি স্বপ্ন দেখেন।
এ বাড়ির পুত্রবধূ চিকিৎসক অগ্নিমিতা গিরি সরকার জানালেন, স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি গঙ্গা থেকে সেই তক্তাটি এনে দেবী দুর্গা রূপে পুজা করার পরিকল্পনা করেন। সেই বছর থেকে দে সরকার পরিবার নারায়ণপুরে (বর্তমানে বৈষ্ণবঘাটা) দুর্গাপুজো শুরু করেন। প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর দিনে কাঠের তক্তাটি পুজো করা হয়।
চণ্ডীর ঘটের বিশেষ আসন
এই পরিবারের নিয়ম বাড়ির বড় বউ চণ্ডীর ঘটের আসন তৈরি করতে হয়। ৪-৫ ঘণ্টার সময় ধরে এই আসন করতে হয়। আগে এই আসন সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক রঙে তৈরি করতে হত। এখন সাধারণ রঙ ব্যবহার করা হয়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত ১৮০টি জিনিস দিয়ে মা দুর্গাকে স্নান করানো হয়।
অষ্টমীতে সাবিত্রী ব্রত এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ। অষ্টমীতে দে সরকার পরিবারের পুত্রবধূ বিবাহিত ব্রাহ্মণ মহিলাকে শাড়ি এবং অন্যান্য অনেক কিছু নিবেদন করেন। সপ্তমীতে শসা বলি হয়। অষ্টমীতে হয় সাদা করলা বলি। এ বাড়ির দুর্গাপুজোর একটি অবিচ্ছেদ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সন্ধিপুজো। অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধি পুজোয় আখের মূল বলি দেওয়া হয়। নবমীতে কুমারী পুজো হয়। নবমীতে বাতাবি লেবু বলি দেওয়া হয়।
দশমীতে দর্পণ বিসর্জনের পর থেকে সারা বছর ঘট পুজো চলে। দশমীতে সবার আগে বাড়ির বড় কোনও বিবাহিত মহিলা বরণ করেন। তারপর একে একে বাকিরা।