নয়াদিল্লি: মহাকাশে পৌঁছে এই প্রথম বার 'Halo Orbit' সম্পূর্ণ করল ভারতের সৌরযান Aditya L1. সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যিখানে যে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট L1 রয়েছে, তার চারিদিকে একবার পাক খেল Aditya L1, ভারতের প্রথম সৌরযান। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র তরফে মঙ্গলবার এই ঘোষণা করা হল। ২০২৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর Aditya L1 সৌরযানের উৎক্ষেপণ হয়। এর পর ২০২৪ সালের ৬ জানুয়ারি সেটি 'Halo Orbit-'এ প্রবেশ করে। সবমিলিয়ে ১৭৮ দিনে L1-কে প্রদক্ষিণ করল Aditya L1. সেখান থেকে নজরদারি চালাল সূর্যের উপর। (Aditya L1 Halo Orbit)
ভারতের প্রথম সৌরযান Aditya L1. সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে। গত ছ'মাসে সূর্যের উপর নজরদারি চালিয়েছে সেটি। এই ১৭৮ দিনে সৌরঝড়ের গতিবিধির উপরও নজরদারি চালিয়েছে। মে মাসের শুরুতেই পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে সৌরঝড়ের প্রভাব পড়ে। সেই সময় সূর্যপৃষ্ঠে কী ঘটছিল, কাছ থেকে তা লক্ষ্য করে Aditya L1. (Science News)
তবে এই যাত্রাপথ মোটেই সহজ ছিল না বলে জানিয়েছে ISRO. তারা জানিয়েছে, গত ছ'মাসে বহু বাধা-বিপত্তি পেরোতে হয়েছে Aditya L1-কে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে অভীষ্ট কক্ষপথ ছেড়ে বেরিয়েও যেতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় অভিকর্ষীয় টান। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে পড়ে টালমাটাল অবস্থা হয় ভারতের সৌরযানের। কক্ষপথচ্যুত হয়ে যায় সেটি এমনকি শক্তি হারানোর উপক্রমও হয়।
ISRO-র বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্য এবং পৃথিবীর অভিকর্ষীয় টানেই অভীষ্ট কক্ষপথচ্যুত হয় Aditya L1. সাময়িক ভাবে দিকবিদিগ হারিয়ে ফেলে। পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে স্যর আইজ্যাক নিউটনের গতিসূত্রর দ্বারস্থ হন ভারতের বিজ্ঞানীরা। নিউটনের গতিসূত্র বলছে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করা হলে, স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে, গতিশীল বস্তু সমবেগে সরলরেখায় চলতে থাকবে।
নিউটনের গতিসূত্র অনুযায়ীই অভিকর্ষীয় শক্তির মোকাবিলায় Station Keeping Manoeuvres-এর রাস্তা বাছেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। ISRO-র তরফে তিনটি ধাপে বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করা হয়। প্রথমে Aditya L1-এর থ্রাস্টার চালু করা হয়। সৌরযানের ভিতরে যে মিনি মোটর ইঞ্জিনগুলি রয়েছে, সেগুলি চালু হয়ে যায়। প্রথমে ২২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় বার ৭ জুন এবং তৃতীয় বার ২ জুলাই এভাবে বল প্রয়োগ করে কক্ষপথে ধরে রাখা হয় Aditya L1-কে।
কীভাবে কক্ষপথচ্যুত হয়ে পড়া Aditya L1-কে কক্ষপথে ফেরানো হয়, তার বিশদ বর্ণনাও দিয়েছে ISRO. ইঞ্জিনে চাপ না দেওয়ার সময় কী অবস্থা ন ছিল এবং ইঞ্জিনে চাপ দেওয়ার পর কী হয়, তার ফারাক বোঝানো হয়েছে গ্রাফিক সহযোগে। L1 থেকে দ্বিতীয় পরিক্রমণ শুরু করেছে Aditya L1. সূর্য সম্পর্কে বিশদ তথ্য তুলে আনতে আগ্রহী সেটি। নির্ধারিত কক্ষপথ ধরেই যাতে সেটি এগোয়, তার জন্য় আগামী দিনেও বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ করতে পারেন বিজ্ঞানীরা।
সূর্যের উপর নজরদারি চালাতে Aditya L1-কে মহাকাশে পাঠানো গয়েছে। মহাশূন্যে সূর্য এবং পৃথিবীর মতো দুই বস্তুর পারস্পরিক আকর্ষণ এবং বিকির্ষণের ফলে মাঝে যে স্থিতিশীল অঞ্চল গড়ে ওঠে, তাকে বলে ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট। এই ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টকে মহাকাশযানের পার্কিং স্পটও বলা হয়। কারণ কম জ্বালানি খরচ করে, সেখান থেকে মহাজাগতিক কর্মকাণ্ডের উপর নির্বিঘ্নে নজরদারি চালানো যায়। এমন পাঁচটি ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্টের হদিশ মিলেছে, যার মধ্যে L1-এ ছ'মাস আগেই পৌঁছে গিয়েছিল Aditya L1. আর 'Halo Orbit' হল ল্যাগরাঞ্জ পয়েন্ট L1, L2 এবং L3-কে ঘিরে থাকা পর্যায়ক্রমিক, ত্রিমাত্রিক কক্ষপথ। দূর থেকে জ্যোতির্বলয়ের মতো দেখায়। কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশযানগুলিকে ‘Halo Orbit’-এ প্রবেশ করানো হয়। এখানে মহাকাশযান স্থিতিশীল থাকে। অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয় না। ধাক্কা লাগে না অন্য মহাজাগতিক বস্তুর সঙ্গে।
কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, জেমস ওয়েবের মতো স্পেস টেলিস্কোপের অভিযানে এই ‘Halo Orbit’ ব্যবহৃত হয়েছে। ‘Halo Orbit’-এ প্রবেশের ক্ষেত্রে পূর্ব-নির্ধারিত গতিপথ ধরেই এগোয় মহাকাশযান। কোথাও কোনও ভুলচুক যাতে না হয়, দিক-নির্দেশে যাতে ভুল না হয়, তার জন্য মহাকাশযানের গতির নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। Aditya L1-এর ক্ষেত্রেও তৎপর ছিলেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র বিজ্ঞানীরা। অবশেষে সেটি 'Halo Orbit' ধরে এগিয়ে L1-কে প্রদক্ষিণ করতে সফল হল।