নয়াদিল্লি: সূর্যালোকে এক চন্দ্রদিবস কাজের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত সফল ভাবেই সেই পরীক্ষায় উতরানো গিয়েছে। কিন্তু সূর্য ডোবার মুহূর্ত এগিয়ে আসছে, আঁধার নামছে চন্দ্রপৃষ্ঠে। তার আগে তৎপরতা শুরু হয়ে গেল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র অন্দরেও। ঘুমপাড়ানি গান গেয়ে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'কে ঘুমের দেশে পাঠানোর উদ্যোগ শুরু হল। শনিবার মহাকাশে প্রথম সৌরযান আদিত্য় L1 পাঠানোর পরই 'বিক্রম' এবং 'প্রজ্ঞান'কে ঘুম পাড়ানোর ঘোষণা করলেন ISRO প্রধান এস সোমনাথ।


গত ২৩ অগাস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ হয় ল্যান্ডার 'বিক্রমে'র। তার পর চাঁদের মাটিতে নেমে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করে দেয় রোভার 'প্রজ্ঞান'ও। সূর্যালোকে একচন্দ্রদিবস চাঁদের বুকে কাজ চালানোর লক্ষ্য় নিয়ে অবতরণ করেছিল তারা, পৃথিবীর হিসেবে যা প্রায় ১৪ দিন। অর্থাৎ পৃথিবীর বুকে যেমন ১২ ঘণ্টা আলো এবং ১২ ঘণ্টা অন্ধকারের নিরিখে গোটা দিনের হিসেব হয়, চাঁদের বুকে এই হিসেব হয় ১৪ দিনের নিরিখে। অর্থাৎ পৃথিবীর হিসেবে, ১৪ দিন সূর্যের আলো পায় চাঁদ, বাকি ১৪ দিন কাটে অন্ধকারে, প্রচণ্ড ঠান্ডায়।


সূর্যের আলোয় চন্দ্রবক্ষে ইতিমধ্যেই প্রায় ১২ দিন (পৃথিবীর হিসেবে) কাটিয়ে ফেলেছে ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞান'। আর সোমবার থেকে রাত নামছে চাঁদের বুকে। তার মধ্যে পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলতে হবে তাদের। শনিবার আদিত্য L1 পৃথিবী থেকে রওনা দেওয়ার পর, সেই প্রস্তুতি শুরুর ঘোষণা করেন ISRO প্রধান সোমনাথ। তিনি বলেন, "ল্যান্ডার থেকে ইতিমধ্যেই ১০০ মিটার পথ অতিক্রম করে ফেলেছে রোভারটি। এক-দু'দিনের মধ্যে ল্যান্ডার এবং রোভারটিকে ঘুম পাড়ানোর কাজ শুরু করব আমরা, যাতে চাঁদের বুকে দীর্ঘমেয়াদি রাতের মোকাবিলা করতে পারে তারা।"


গোড়াতেই এক চন্দ্রদিবসের জন্য চন্দ্রপৃষ্ঠে কাজের মেয়াদ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ল্যান্ডার 'বিক্রম' এবং রোভার 'প্রজ্ঞানে'র জন্য। চাঁদের বুকে রাত নামলে, অন্ধকারে কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। সূর্যাস্তের পর চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও -১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যেতে পারে। অত ঠান্ডাও সহ্য করতে পারবে না 'বিক্রম' এবং 'প্রজ্ঞান'। তাই তাদের ঘুম পাড়িয়ে রাখার সিদ্ধান্ত। ১৪ দিন পর ফের সূর্য উঠলে যদি ঘুম ভাঙানো সম্ভব হয়, তাহলে আবারও কাজ শুরু করবে তারা। 


তবে এই রাত্রিকালীন ১৪ দিনে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের চতুর্থ পেলোড লেজার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে (LRA) সক্রিয় থাকবে। সক্রিয় থাকবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এ যে আরও তিনটি পেলোড রয়েছে, রেডিও অ্যানাটমি অফ মুনবাউন্ড হাইপার সেনসিটিভ আয়োনোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার (RAMBHA), চন্দ্রাজ সারফেস থার্মো ফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট (ChaSTE) এবং ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি (ILSA)-ও।


এর মধ্যে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র গোদার্দ স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে তৈরি হয়েছে LRA-টি।লেজার লাইটের সাহায্যে ল্যান্ডারটির অবস্থান নির্ধারণ করার পাশাপাশি চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে অরবিটারের দূরত্বেরও হিসেব রাখবে এই LRA. চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানের অভিযান শেষ হয়ে গেলেওষ ভবিষ্যতের অভিযানেও LRA কাজে লাগবে।