শ্রীহরিকোটা: ২৭ অগাস্ট, বিকেল ৫টা ৪৭ মিনিট। সব ঠিকঠাক চললে, ওই সময়েই চাঁদের মাটিতে পা রাখার কথা চন্দ্রযান-৩-এর (Chandrayaan 3) । এবং অভিযান পুরোদস্তুর সফল হলে, পূর্বসূরির থেকে দু'টি বিষয়ে এগিয়ে যাবে চন্দ্রযান-৩। প্রথমত, চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং আর দ্বিতীয়ত রোভারের সাহায্যে চাঁদের মাটির তত্ত্বতালাশ করা। কিন্তু এই সফট ল্যান্ডিং (Soft Landing)বিষয়টি ঠিক কী? কেনই বা এটি কঠিন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা?


খুঁটিয়ে দেখা..
অরবিটার, ল্যান্ডার এবং রোভার---এই তিনটি মউিডল নিয়ে তৈরি চন্দ্রযান-৩। এছাড়া রয়েছে প্রোপালশান মউিডল যেটি কিনা ল্যান্ডার ও রোভারকে চাঁদে পৌঁছে দেবে। তবে প্রোপালশান মডিউল নিজে চাঁদে যাবে  না। এটি চাঁদের নির্দিষ্ট কক্ষপথে (১০০ কিমি*১০০ কিমি) স্থাপিত হওয়ার কথা। তবে ল্যান্ডার এবং রোভার এটির থেকে আলাদা হয়ে চাঁদের মাটিতে পৌঁছে যাবে। ল্যান্ডারের মধ্যেই থাকবে রোভার। ল্যান্ডিংয়ের পর (চাঁদের মাটিতে অবতরণ) ল্যান্ডার সেখানে থাকলেও রোভার ঘুরে ঘুরে চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে তথ্য় জোগাড় করবে। এবারের ল্যান্ডারটি এমন আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েই তৈরি করা হয়েছে যা কিনা সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম। কী কী রয়েছে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারে?


ল্যান্ডারে যা থাকছে...
উচ্চতা মাপার জন্য অল্টিমিটার্স, গতিবেগ মাপার জন্য ভেলোসিমিটার্স, বিপদের আঁচ করা এবং তা এড়ানোর জন্য ক্যামেরা তো রয়েছেই, পাশাপাশি অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন লেজার ডপলার ভেলোসিটি মিটার-ও থাকছে এই ল্যান্ডারে। অবতরণের আগে চন্দ্রপৃষ্ঠের গতিপ্রকৃতি ভাল করে বুঝে নেওয়ার জন্য এই  'লেজার ডপলার ভেলোসিটি মিটার' ব্যবহার করা হয়। চন্দ্রযান-২-এর নির্ধারিত পথেই এগিয়ে যাওয়ার কথা চন্দ্রযান-৩-এর। চাঁদের মাটির দিকে অবতরণের জন্য তিনটি আলাদা পর্যায়ে এগোনোর কথা এটির। প্রথম পর্যারে নাম, Earth orbit manoeuvres। দ্বিতীয় পর্যায়, Trans-lunar injection এবং তৃতীয় পর্যায়ে থাকছে Lunar orbit manoeuvres। এই তিনটি পর্যায় শেষ হলে প্রোপালশান মডিউল থেকে আলাদা হয়ে যাবে ল্যান্ডার। চাঁদের আরও এক কক্ষপথ কাছে চলে যাবে সেটি। সফট ল্যান্ডিং প্রক্রিয়া শুরু হবে এর পর থেকে। 

পৃথিবীর চার দিকে পাঁচটি orbit manoeuvre করবে চন্দ্রযান-৩। প্রত্যেক বার একটু একটু করে পৃথিবী থেকে দূরত্ব বাড়ানোই লক্ষ্য এই orbit manoeuvre-র। পঞ্চম বারের পর এটির চাঁদের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা। এখান থেকে শুরু  Trans-lunar injection পর্যায়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এক ধাক্কায় মোটেও চাঁদের মাটিতে আছড়ে পড়ার কথা নয় চন্দ্রযান-৩-এর। বরং পৃথিবীর মতো চাঁদেরও চারপাশে চার বার পাক খাওয়ার কথা চন্দ্রযান-৩-এর। তবে এক্ষেত্রে উল্টোটা হবে। প্রতি বার পাক খাওয়ার সময় চাঁদের থেকে দূরত্ব কমাবে চন্দ্রযান-৩। ঠিক যখন  (১০০ কিমি*১০০ কিমি) কক্ষপথে এটি পৌঁছবে, তখনই প্রোপালশান মডিউল থেকে ল্যান্ডার আলাদা হয়ে যাবে। এর পরই সফট ল্যান্ডিংয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাবে এই যান। এখানেই বড় পরীক্ষা। কারণ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব পার করা যতটা কঠিন, ততটাই কঠিন সফট ল্যান্ডিংয়ের ১৫ মিনিট। বিজ্ঞানীদের ভাষায় 'ফিফটিন মিনিটস অফ টেরর'। এই সময়টায় ল্যান্ডারকে একেবারে নিখুঁত ভাবে নিজের জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে, তাও আবার নিখুঁত উচ্চতা থেকে এবং অবশ্যই নিখুঁত সময়ে। একই সঙ্গে চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে সেই জায়গাটিও স্ক্যান করে নিতে হবে। গোটাটাই নিজে থেকে করার কথা ল্যান্ডারের। ইসরোর কিছুই করার নেই ওই পর্যায়ে। কাজেই ওই সময়টা ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠার মুহূর্ত।
তবে এবার সেটা ঠিকঠাকই হবে বলে আশা বিজ্ঞানীদের। আর তা হলে বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে নিজের নাম লেখাতে পারবে ভারত।


আরও পড়ুন:কালই চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা চন্দ্রযানের,সাফল্য কামনা করে তিরুপতি মন্দিরে পুজো ইসরো কর্তাদের