নয়াদিল্লি: সূর্যের একেবারে কাছাকাছি অবস্থান। তাই দূর থেকেই চোখাচোখি। বুধগ্রহের মাটিতে এখনও পা রাখতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কাছাকাছি অবস্থান থেকে দেখে যেটুকু বোঝা গিয়েছে, তাতে বুধগ্রহের মাটিতে হিরের ভাণ্ডার থাকতে পারে বলে অনুমান বিজ্ঞানীদের। কয়েকটি খণ্ড বা একটি দু'টি খনি নয়, বুধের মাটির নীচের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে হিরের পুরু আস্তরণ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। (Diamonds on Mercury)


Nature Communications জার্নালে একটি নয়া গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে গত ১৪ জুন, তাতেই এই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, বুধের মাটিতে হিরের আস্তরণই গ্রহটির গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জোগাতে পারে। তার চৌম্বকীয় ক্ষেত্র সম্পর্কেও জানা যেতে পারে আগামী দিনে। 
বুধের মাটিতে ধূসর ছোপ দেখা যায়। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র Messanger সেগুলিকে গ্রাফাইট বলে চিহ্নিত করেছে, যা কার্বনেরই আর একটি রূপ। সেই নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন বেজিংয়ের সেন্টার ফর হাই প্রেসার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাডভান্সড রিসার্চের বিজ্ঞানী ইয়াংহো লিন। (Science News)


ইয়াংহো জানিয়েছেন, বুধে যে অত্যধিক পরিমাণ কার্বন রয়েছে, তা-ই গ্রহটির মাটির গঠন সম্পর্কে কৌতূহলী করে তোলে তাঁকে। বিজ্ঞানীদের মতে অন্য গ্রহের মতোই বুধের সৃষ্টি।  লাভায় পূর্ণ মহাসাগর ঠান্ডা হয়ে গ্রহটি বর্তমানের অবস্থায় পৌঁছেছে। কিন্তু বুধের ক্ষেত্রে ওই মহাসাগর কার্বন এবং সিলিকেট সমৃদ্ধ ছিল। ধাতব উপাদানগুলি জমাট বাঁধে প্রথমে, তাকে ঘিরে স্ফটিকের আকারে জমা হয় লাভা। 


আরও পড়ুন: Sunita Williams: গবেষণায় কাটছে সময়, কিন্তু পদে পদে বিপদ, সুনীতার স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ


বুধের তাপমাত্রার নিরিখে সেখানে কার্বন রূপান্তরিত হয়ে গ্রাফাইটে পরিণত হয়েছে বলে এতদিন মনে করতেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু ২০১৯৮ সালে একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়, বিজ্ঞানীরা যতটা ভেবেছিলেন, তার চেয়েও গভীর বুধের মাটির স্তর, প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেশি।  এর ফলে অন্তঃস্থল এবং বহিরাবরণের তাপমাত্রার মধ্যে ফারাক রয়েছে। তাপমাত্রা এবং পারিপার্শ্বিক চাপের ফলে সেখানে স্ফটিকাকারে জমা হয়ে রয়েছে কার্বন, যা আসলে হিরে। 


সেই মতো বেলজিয়াম এবং চিনের বিজ্ঞানীরা গবেষণার কাজে হাত দেন। লৌহ, সিলিকা এবং কার্বন নিয়ে শুরু হয় গবেষণা, তার সঙ্গে যোগ করা হয় সালফারও। ১৯৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং ৭ গিগাপ্যাসক্যাল চাপ সৃষ্টি করা হয়। এর পর কম্পিউটার সিমুলেশন্স  ব্যবহার করে দেখা যায়, বুধের মাটিতে এই অবস্থায় হিরের স্তর সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। হিসেব নিকেশের পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বুধের মাটিতে ৯ মাইল অর্থাৎ ১৫ কিলোমিটার পুরু হিরের আস্তরণ তৈরি হয়েছে, মাটির ৪৮৫ কিলোমিটার গভীরে।


বুধ সৌরজগতের অন্যতম রহস্যজনক একটি গ্রহ। পৃথিবীর মতো বুধেরও নিজস্ব চৌম্বকীয় ক্ষেত্র রয়েছে, কিন্তু তুলনায় সেটি দুর্বলতর। কিন্তু বুধের মতো ছোট গ্রহের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র হল কী করে, এই প্রশ্ন আজকের নয়। শুধু তাই নয়, সূর্যের সবচেয়ে কাছে থেকেও বুধ ভৌগলিক ভাবে সক্রিয় রয়েছে কীভাবে, তাও কৌতূহলের উদ্রেক করেছে।