কলকাতা: সারাদিন কাজের পরে ক্লান্তিতে চোখের পাতা ভারী হয়ে যায়। তখন হয়তো খিদে-তেষ্টার থেকেও বেশি জরুরি মনে হয় ঘুম। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন শারীরবৃত্তীয় কাজ ঠিকমতো চলার জন্য এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম জরুরি।


কতক্ষণ না ঘুমিয়ে থাকতে পারেন এক ব্যক্তি? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে বহুকাল ধরে। একসময় না ঘুমনোর বা জেগে থাকার রেকর্ডও জায়গা পেল গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে। কিন্তু সেই রেকর্ড অনুয়ায়ী ১৭ বছরের ব়্যান্ডি গার্ডেনার ১১ দিন ২৫ মিনিট জেগে বিশ্ব রেকর্ড বানিয়েছিল যা ১৯৬৩ সালে গিনেসে জায়গা পেয়েছিল। আরও কিছু কিছু রেকর্ডের কথা শোনা যায় কিন্তু ব়্যান্ডির রেকর্ডে ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন ফলে সেটাকেই প্রামাণ্য মানা হয়ে থাকে। এই রেকর্ড তৈরির বিষয়টি গিনেস বন্ধ করে দেয় ১৯৯৭ সালে। কারণ ঘুমের অভাবের কারণে যে বিপদ তৈরি হয় তার কথা মাথায় রেখেই এই সংক্রান্ত কোনও তথ্য আর নেওয়া হবে না বলে জানায় গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড।


শারীরবৃত্তীয় কাজ, মানসিক ক্ষমতা, চিন্তাশক্তি-সব কিছুই ঠিকমতো চালানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুমের। আমেরিকার সরকারি স্বাস্থ্য়সংস্থা CDC-এর মতে ঘুমের অভাবে ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, ওবেসিটি- যেকোনও কিছু হতে পারে। প্রতিটি ব্য়ক্তি পরতি ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিন্তু অনেকেই সেই ঘুম ঘুমোন না।


কী হতে পারে?
তাহলে কী হয়? স্লিপ মেডিসিনের গবেষক ওরেন কোহেন (Oren Cohen) জানাচ্ছেন, ঘুমের অভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে। যদি কেউ ২৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে জেগে থাকার চেষ্টা করে তাহলে তার প্রভাব মস্তিষ্কে পড়বেই। Sleep-Wake Border-এ চলে যাবে মস্তিষ্ক। আপাতদৃষ্টিতে জেগে থাকলেও আদতে ঘুমের অবস্থায় চলে যেতে পারে মস্তিষ্ক। 


এই পরিস্থিতিকেই বলে intrusion বা Micro Sleep. যাঁরা টানা জেগে থাকেন তাঁদের মস্তিষ্ক নিজে থেকেই এমন পর্যায়ে চলে যায়, সেখানে হ্যালুসিনেশন হতে পারে, সময়ের খেয়াল না থাকতে পারে। বা হঠাৎ হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য মনোযোগ হারিয়ে যেতে পারে। লস অ্য়াঞ্জেলস-এর Sleep Disorders Center-এর বিজ্ঞানী ড. অ্যালোন আভিদান জানাচ্ছেন, যাঁরা বলেন টানা কয়েকদিন না ঘুমিয়েই রয়েছেন, তাঁদের সেটা মনে হলেও আদতে সেটা সম্ভব নয়। তাঁদের মস্তিষ্ক Abnormal Sleep-এ থেকেছে মাঝেমাঝেই। এই অবস্থা ছাড়া টানা ২৪ ঘণ্টা স্বাভাবিকভাবে জেগে থাকা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।


স্বাভাবিক ভাবে না ঘুমোলে কী হতে পারে তা পরীক্ষা করে দেখা সম্ভব নয়। কারণ এর ফলে শরীরে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মনস্তাত্বিক ক্ষেত্রেও ক্ষতি হতে পারে। সেই কারণেই এই পরীক্ষা হয় না। যাঁদের  fatal familial insomnia (FFI) রয়েছে তাঁরা একটি জেনেটিক মিউটেশনের কারণে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেন না। এটি একটি অতি বিরল রোগ। এদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে একটি বিশেষ প্রোটিন তৈরি হয় যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়। এটি টানা চললে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।


২০১৯ সালে Nature and Science of Sleep-জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র বলছে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে জেগে থাকা যায়। তারপরেই ক্রমশ মনোযোগ এবং সতর্ক থাকার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। টানা জেগে থাকলে (২৪ ঘণ্টারও বেশি) Hand-Eye coordination-এর ঘাটতি হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে। ৩৬ ঘণ্টার বেশি হয়ে গেলে  হরমোনের ভারসাম্য় বিঘ্নিত হতে থাকে, শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। অবসাদের মতো সমস্য়াও দেখা যায় বলে জানাচ্ছে ক্লিভল্যান্ড ক্নিনিকে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ।


আরও পড়ুন: রাতের আকাশে এবার পাঁচ গ্রহের মিলন! মহাকাশে 'ম্যাজিক' দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব