Mohammed Ali Qamar Exclusive: লভলিনা পারলে বাংলার বক্সাররাও পারবে, দরকার পরিকাঠামো, উপলব্ধি পদকজয়ীর কোচের
বাঙালি বক্সিং কোচের আক্ষেপ, টোকিও থেকে ফেরার পর বাংলার কোনও কর্তা বা রাজ্য প্রশাসনের কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি।
কলকাতা: টোকিওয় দেশকে গর্বের মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তাঁর ছাত্রী লভলিনা বরগোহাঁই। ভারতের মহিলা বক্সার অলিম্পিক্সে জিতে নিয়েছেন ব্রোঞ্জ পদক। অসমের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে টোকিও পর্যন্ত বক্সিং রিংয়ে লভলিনার চমকপ্রদ এই সফরে সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিলেন খিদিরপুরের মহম্মদ আলি কামার। ম্যাঞ্চেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী প্রাক্তন বক্সার ভারতের মহিলা দলের কোচ। ছাত্রীর সাফল্যে গর্বিত হলেও নিজের রাজ্যের বক্সিংয়ের করুণ ছবি দেখে বিষণ্ণ বাঙালি কোচ। টোকিও থেকে কলকাতায় ফিরে বাংলার বক্সিংয়ের বেহাল দশা নিয়ে সরব আলি কামার।
এ রাজ্যে প্রায় সব বক্সিং রিংই সিমেন্টের তৈরি। সেখানেই বছরভর প্রস্তুতি নিতে বাধ্য হন বাংলার উদীয়মান বক্সাররা। আন্তর্জাতিক মানের রিং হোক বা আধুনিক পরিকাঠামো, বাংলার বক্সাররা সব কিছু থেকেই বঞ্চিত। যার প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সে। আন্তর্জাতিক স্তরে তো নয়ই, এমনকী, জাতীয় স্তরেও বাংলা থেকে সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যাচ্ছে না কোনও বক্সারকে।
টোকিও থেকে নয়াদিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরে এবিপি লাইভকে আলি কামার বলছেন, 'বাংলায় বক্সার তৈরি হচ্ছে। তবে সেটা আশানুরূপ নয়। আমাদের এখানে সুযোগসুবিধা নেই। বাংলায় সব রিং সিমেন্টের। সবই প্রাইভেট রিং। রাজ্য সরকারের তরফে হোক বা স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (সাই), কেউই এ ব্যাপারে উদ্যোগী নয়। এই ছবিটা বদলাতে হবে। প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হবে। সকলে বলেন ক্রিকেটের কথা। ক্রিকেটে সারা বছর কত টুর্নামেন্ট হয় দেখুন। লভলিনা অসমের গ্রাম থেকে উঠে এসেছে। আমরা কেন পারব না?'
কামার আরও বলছেন, 'আমরা যখন বক্সিং করতাম, জাতীয় স্তরে কোনও সাহায্য পাইনি। এখন তো সেই সুযোগও রয়েছে। আমি নিজে ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। কিন্তু কোনও ভাল ছেলে চোখে পড়েনি বাংলায়। এখন জাতীয় মহিলা বক্সিং দলের কোচ। কিন্তু কোনও প্রতিশ্রুতিমান মহিলা বক্সারকে বাংলা থেকে লড়তে দেখছি না।'
বাংলায় বক্সিংয়ের করুণ ছবিটা পাল্টাবে কী করে? উপায় বলে দিচ্ছেন ২০০২ সালে ম্যাঞ্চেস্টার কমনোয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী বক্সার। আলি কামার বলছেন, 'আমরাও ছবিটা বদলাতে পারি। বছরে এক-আধটা টুর্নামেন্ট করলে হবে না। তৃণমূল স্তর থেকে ছেলেমেয়েদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দিতে হবে। তাতেই ওদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অভিজ্ঞতা বাড়বে। আমাদের এখানেও রেসিডেন্সিয়াল অ্যাকাডেমি করা উচিত। অনেকে ফোন করে বলে, আমি বক্সিং শিখতে চাই। কিন্তু থাকে অনেক দূরে। আমি তো কলকাতা থেকে সেখানে গিয়ে শেখাতে পারব না। তবে যদি একটা আবাসিক অ্যাকাডেমি তৈরি হয়, তাহলে আমার পক্ষেও উদীয়মান বক্সারদের তালিম দেওয়া সম্ভব। শুধু কলকাতা নয়, জেলা থেকেও বক্সার তুলে আনায় জোর দিতে হবে।'
ভারতীয় মহিলা বক্সিং দলের জাতীয় কোচ আরও বলছেন, 'প্রতিভা অণ্বেষণ করতে হবে। শুরুতেই দেখে নিতে হবে একটা ছেলে বা মেয়ে বক্সিং করতে পারবে কি পারবে না। আধুনিক ট্রেনিং সরঞ্জাম দিতে হবে। প্রাথমিক ব্যাপারগুলোয় জোর দিতে হবে।'
বাঙালি বক্সিং কোচের আক্ষেপ, টোকিও থেকে ফেরার পর বাংলার কোনও কর্তা বা রাজ্য প্রশাসনের কেউই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। আপাতত বাংলার বক্সিংয়ের দিন বদলের আশায় মহম্মদ আলি কামার।