ABP Exclusive: ১৯৮০ সালে কেন ইস্টবেঙ্গল ছেড়েছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত?
Surajit Sengupta: ইস্টবেঙ্গলকে সাতের দশকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দেওয়ার পরেও, ১৯৮০ সালে দল ছেড়েছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। তাঁর সঙ্গেই মহমেডান স্পোর্টিংয়ে যোগ দেন একাধিক সতীর্থ। যা নিয়ে ময়দান উত্তাল হয়।
কলকাতা: গত শতাব্দীর সাতের দশকটা ছিল ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal Club)। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত লাল-হলুদ বাহিনী সেই সময় যেন অশ্বমেধের ঘোড়া। সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Surajit Sengupta), সমরেশ চৌধুরী (Samaresh Chowdhury), গৌতম সরকার (Gautam Sarkar), ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় (Vaskar Ganguly), সুভাষ ভৌমিকরা (Subhash Bhowmick) তখন দলকে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছিলেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত কলকাতায় একবারও ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে পারেনি মোহনবাগান (Mohun Bagan)। ১৯৭৫-এর আইএফএ শিল্ড (IFA Shield) ফাইনালে মোহনবাগানকে ৫-০ গোলে হারায় ইস্টবেঙ্গল। বড় ম্যাচ বা কলকাতা ডার্বির ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়।
সাতের দশকে ইস্টবেঙ্গলের এই দুর্দান্ত সাফল্যের অন্যতম নায়ক ছিলেন সুরজিৎ সেনগুপ্ত। কিন্তু সেই তিনিই ১৯৮০ সালে কয়েকজন সতীর্থকে নিয়ে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল ছেড়েছিলেন। তাঁরা সবাই মিলে যোগ দিয়েছিলেন মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে (Mohammedan Sporting Club)।
আরও পড়ুন প্রয়াত প্রাক্তন ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত
ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের নয়নের মণি সুরজিৎ সেনগুপ্ত কেন দল ছেড়েছিলেন? ইস্টবেঙ্গলের তৎকালীন ফুটবল সচিব পরেশ সাহা জানালেন, ‘সুরজিৎ অসাধারণ ফুটবলার ছিল। এত বড় ফুটবলার খুব কমই দেখেছি। আমাদের সঙ্গে ওর কোনও সমস্যা হয়নি। সেই সময় আমাদের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন হরিপদ দাস। ওঁর সঙ্গে পিন্টুর (সমরেশ চৌধুরী) ঝামেলা হয়। হরিপদবাবু পিন্টুর নামে সচিব নিশীথ ঘোষের কাছে নালিশ করেন। সে কথা শুনে সচিব বলেন, পিন্টুকে দলে রাখা হবে না। সুরজিৎরা সবাই পিন্টুকে ভালবাসত। ওকে দলে রাখা হবে না শুনে সাত-আটজন ফুটবলার একসঙ্গে দল ছেড়ে মহমেডানে চলে যায়। সেই সময় পল্টু দাস-জীবন চক্রবর্তীরা ক্লাবে আমাদের বিরোধী গোষ্ঠীতে ছিলেন। তাঁরাও সুরজিৎদের দল ছাড়ায় মদত দেন।’
সমরেশ চৌধুরী জানালেন, ‘আমাদের তখন অসাধারণ দল ছিল। সবাই দুর্দান্ত খেলত। ১৯৭৮ সালের ডুরান্ড কাপ ফাইনালে মোহনবাগানকে তিন গোল দিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ন হলাম। তখন আমি দলে সিনিয়র ফুটবলার ছিলাম। সুরজিৎরা আমার কথা মানত খুব। কর্মকর্তাদের সেটা পছন্দ হত না। ওঁরা আমাকে বলতেন, আমরা কর্মকর্তা। আমাদের কথা না শুনে ফুটবলাররা তোমার কথা শোনে কেন? আমি বলেছিলাম, দলের সবাই যদি আমার কথা শোনে, তাতে আমি কী করব! কিন্তু কর্মকর্তাদের সেটা পছন্দ হয়নি। তাই ১৯৭৯ সালে আমি দল ছেড়ে মহমেডানে চলে যাই। এরপর সুরজিৎদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের কী সমস্যা হয়েছিল জানি না। ১৯৮০ সালে মরসুম শুরু হওয়ার আগে আমার কাছে আসে সুরজিৎ, সাবির আলি, ভাস্কর, শ্যামলরা (ঘোষ)। আমি ওদের বলি, মহমেডানের তৎকালীন সচিব গোলাম মোস্তাফার সঙ্গে কথা বলতে পারি। কিন্তু টাকার ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। এরপর মোস্তাফা সাহেবকে বলি, সুরজিৎরা মহমেডানে খেলতে চায়। উনি সবার সঙ্গে কথা বলে দলে নেন। সুরজিৎ, ভাস্কর, সাবির আলি, শ্যামলরা চলে আসায় আমাদের দল দারুণ শক্তিশালী হয়। আমরা সাফল্য পাই।’
পরেশ সাহা ও সমরেশ চৌধুরী, দু’জনেই বুঝিয়ে দিলেন, সুরজিৎ সেনগুপ্ত শুধু বড় ফুটবলারই ছিলেন না, সিনিয়রদের সম্মান দেওয়া, অন্য়ায়ের প্রতিবাদ করাও তাঁর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল।