Trevor James Morgan on Euro Cup: একসঙ্গে ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, গ্রুপ এফ থেকেই পাওয়া যেতে পারে চ্য়াম্পিয়ন
UEFA EURO: এবারের ইউরো কাপের ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ গ্রুপ এফ৷ জার্মানি, ফ্রান্স, পর্তুগাল কতটা তৈরি? বিশ্লেষণে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ ট্রেভর জেমস মর্গ্য়ান৷
কলকাতা: এবারের ইউরো কাপে ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে গ্রুপ এফ-কে। আর হবে না-ই বা কেন? ইউরোপ তো বটেই, বিশ্বের অন্য়তম সেরা তিন দল, বর্তমান বিশ্বচ্য়াম্পিয়ন ফ্রান্স, ২০১৪ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি ও গত ইউরো কাপের চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল একই গ্রুপে। এই তিন দলের সঙ্গে আছে একসময় বিশ্বের অন্যতম সেরা দল হাঙ্গেরি। অতীত গৌরব না থাকলেও, চমক দিতেই পারে হাঙ্গেরি। ফলে গ্রুপ এফ-এর লড়াই সবচেয়ে আকর্ষণীয় হতে চলেছে। সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের মতোই আমিও এই গ্রুপের লড়াইয়ের দিকে তাকিয়ে। এই গ্রুপ থেকেই কোনও দল এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিশ্বের অন্য়তম শক্তিশালী ও লড়াকু দল জার্মানি। ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা ২০১৬ ইউরো এবং ২০১৮ বিশ্বকাপে খুব একটা ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও, জোয়াকিম লো-র কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে দলটাকে ফের শক্তিশালী করে তুলেছেন বায়ার্ন মিউনিখের প্রাক্তন কোচ হ্যান্সি ফ্লিক। এবারের ইউরো কাপে গ্রুপের তিনটি ম্যাচটি জার্মানি খেলবে মিউনিখে। ফলে টমাস মুলার, ম্যানুয়েল ন্যুয়েরদের সুবিধা হবে বলেই মনে হচ্ছে। জার্মানি শেষবার ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। সেবার তারা ফাইনালে হারিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্রকে। তার আগে ১৯৭২ ও ১৯৮০ সালেও ইউরো চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি। এবার তারা খেতাব জিততে পারবে কি না বলা যাচ্ছে না, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই লড়াই করবে। ২০০২ বিশ্বকাপে জার্মানির দল মোটেই শক্তিশালী ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল। ফলে জার্মানদের কোনওভাবেই খাটো করে দেখা যায় না।
১৬ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানি। সেই ম্যাচে যদি জার্মানি জয় পায়, তাহলে কিন্তু দলের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। প্রতিযোগিতার শুরুটা ভাল হওয়া যে কোনও দলের কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লো-র দলের জন্যও প্রথম ম্যাচ জেতা জরুরি।
ইউরোর জন্য় ঘোষিত জার্মানির দলে আছে তিন গোলকিপার ম্য়ানুয়েল ন্যুয়ের, বার্নড লিনো ও কেভিন ট্র্য়াপ। রক্ষণে আছেন এমরে চান, ম্যাথিয়াস জিন্টার, রবিন গসেনস, ক্রিশ্চিয়ান গান্টার, মার্সেল হালস্টানবার্গ, ম্যাটস হুমেলস, লুকাস ক্লস্টারমান, রবিন কখ, অ্যান্টনিও রাডিগার ও নিকলাস সুলে। জার্মানির মিডফিল্ডে আছে সের্গি গানবরি, লিওন গোরেৎজকা, ইলিকে গান্দোগান, জোনাস হফম্যান, জোশুয়া কিমিচ, টনি ক্রুস, জামাল মুসিয়ালা, ফ্লোরিয়ান ন্যুহাস ও লেরয় সেন। জার্মানির আক্রমণভাগে আছে কাই হাভেরৎজ, টমাস মুলার, কেভিন ভল্যান্ড ও টিমো ওয়ার্নার।
এবারের ইউরো কাপ শুরু হওয়ার ঠিক আগে অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার করিম বেনজেমাকে দলে ফিরিয়েছে ফ্রান্স। যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া এবং সতীর্থ ম্যাথু ভালবুয়েনাকে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগে দল থেকে বাদ পড়েছিল রিয়াল মাদ্রিদের এই স্ট্রাইকার। ২০১৫ সালের নভেম্বরের পর আর জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ পায়নি বেনজেমা। ২০১৬ ইউরোতেও খেলার সুযোগ পায়নি ও। তবে এবার ওকে দলে ফেরাল বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ফলে নিঃসন্দেহে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের শক্তি বাড়বে। ওর সঙ্গে কিলিয়ান এমপাবের জুটি বিপক্ষ দলগুলির কাছে চিন্তার হবে।
ফ্রান্সের পুরো দল এরকম-তিন গোলকিপার হুগো লরিস, স্টিভ মান্দানা ও মাইক মাইগন্যান। রক্ষণে আছে লুকাস দিগনি, লিও ডুবোইস, লুকাস হার্নান্দেজ, প্রেসনেল কিমপেম্বে, জুলস কুন্দে, ক্লেমেন্ট লেঙ্গলেৎ, বেঞ্জামিন পাভার্ড, রাফায়েল ভারান ও কার্ট জুমা। ফরাসিদের মাঝমাঠ সামলানোর দায়িত্বে থাকছে কিংসলে কোম্যান, এন’গোলো কান্তে, টমাস লেমার, পল পোগবা, আদ্রিয়েন রাবিয়ত, মুসা সিসোকো ও কোরেন্তিন টোসিলো। ফ্রান্সের স্ট্রাইকার হিসেবে থাকছে উইস্যাম ইয়েদার, করিম বেনজেমা, উসমানে ডেমবেলে, অলিভিয়ের জিরুড, আঁতোয়া গ্রিজম্যান, কিলিয়ান এমবাপে ও মার্কাস থুরাম।
গতবারের ইউরো চ্য়াম্পিয়ন পর্তুগালের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ অবশ্যই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সবাই তাকিয়ে থাকবে বিশ্বের সেরা ফুটবলারের দিকে। গতবার ফাইনালে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলেও, সাইডলাইন থেকে ক্রমাগত চিৎকার করে যেভাবে দলকে জিতিয়েছিল রোনাল্ডো, তাতে ওকে নিয়ে পর্তুগালের সমর্থকদের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছে। রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্তাসে যাওয়ার পর রোনাল্ডোর পারফরম্যান্স গ্রাফ কিছুটা তলানিতে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওর দক্ষতা কিন্তু এতটুকু কমেনি। ফর্মে ফিরতে ওর বেশি সময় লাগবে না। এটাই হয়তো ওর শেষ ইউরো কাপ। ফলে ফের দলকে চ্যাম্পিয়ন করেই বিদায় নিতে চাইবে ও।
এবারের ইউরোতে পর্তুগালের তিন গোলকিপার অ্য়ান্টনি লোপেজ, রুই প্য়াট্রিসিও, রুই সিলভা। রক্ষণে আছে হোয়াও ক্যানসেলো, নেলসন সিমিদো, হোসে ফন্তে, পেপে, রুবেন দিয়াজ, নুনো মেন্দেজ ও রাফায়েল গুরেরইরো। মিডফিল্ডে আছে ড্যানিলো পেরেইরা, হোয়াও পালহিনহা, রুবেন নেভেস, ব্রুনো ফার্নান্ডেজ, হোয়াও মৌতিনহো, রেনাতো স্যাঞ্চেজ, সের্জিও অলিভিয়েরা ও উইলিয়াম কার্ভালহো। পর্তুগালের স্ট্রাইকার হিসেবে আছে পেড্রো গনকালভেজ, আন্দ্রে সিলভা, বার্নার্ডো সিলভা, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, দিয়োগো হোতা, গনকালো গুয়েডেজ, হোয়াও ফেলিক্স ও রাফা সিলভা।
হাঙ্গেরি দলের বেশিরভাগ ফুটবলারই অনামী৷ ফলে ওদের উপর বিশেষ চাপ নেই৷ গ্রুপের বাকি তিন দলের চেয়ে খাতায়-কলমে পিছিয়ে থেকেই মাঠে নামছে হাঙ্গেরি৷ ওরা কোনও ম্য়াচ জিতলে সেটা অঘটন হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে থাকবে৷
*সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন-সৌম্য় গঙ্গোপাধ্য়ায়