![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/Premium-ad-Icon.png)
Buddhadeb Guha: জীবনজুড়ে জঙ্গল, কলমজুড়ে প্রেম! টপ্পায় বুঁদ করতেন 'ঋজুদা' বুদ্ধদেব
Buddhadeb Guha Birth Anniversary: খুব কাছ থেকে দেখেছেন জঙ্গলের জীবন, মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের। তাই সেই জঙ্গলপ্রেম, সেই অভিজ্ঞতাই বারবার উঠে এসেছে তাঁর কলমে। সৃষ্টি করেছে একের পর এক চরিত্র।
![Buddhadeb Guha: জীবনজুড়ে জঙ্গল, কলমজুড়ে প্রেম! টপ্পায় বুঁদ করতেন 'ঋজুদা' বুদ্ধদেব Buddhadeb Guha, Eminent writer and Forest Lover, his works, life and unknown facts Buddhadeb Guha: জীবনজুড়ে জঙ্গল, কলমজুড়ে প্রেম! টপ্পায় বুঁদ করতেন 'ঋজুদা' বুদ্ধদেব](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2023/06/27/5901a48c3daf9a195de8545a938cb6271687805645593385_original.jpg?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: তাঁর লেখায় নায়ক 'বাঘের মতো বাঁচতে চায়'। তাঁর কাহিনীতে নায়ক ঘন জঙ্গলের ঘ্রাণকে ভালবাসে। তাঁর উপন্যাসে এক প্রেমিকের কাছে প্রেমিকা 'হলুদ বসন্ত'। কেউ তাঁকে চেনেন শিকারের কাহিনীকার হিসেবে। কেউ আবার চেনেন অরণ্যপ্রেমী এক লেখক হিসেবে। সেই তিনিই তাঁর প্রায় সব লেখায় অক্ষরে অক্ষরে ফুটিয়ে তুলেছেন আরও একটি সত্ত্বা। প্রেমিকের সত্ত্বা--হয়তো এই সত্ত্বাটিই কোনও না কোনও ভাবে সবসময়ে বেঁধে রেখেছে তাঁর লেখনীকে আর পাঠককুলের হদস্পন্দন কমেছে-বেড়েছে তাঁরই লেখনীর ছন্দে। তিনি বুদ্ধদেব গুহ।
গানেও পারদর্শী:
২৯ জুন তাঁর জন্মদিন। ১৯৩৬ সালে বাংলাদেশের রঙপুরে জন্মেছিলেন বুদ্ধদেব গুহ। সেখানেই বেড়ে ওঠা। প্রথমে রংপুরের কারমাইকেল কলেজ, তারপরে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা। একদিকে পড়াশোনা আর অন্যদিকে গান। রবীন্দ্রসঙ্গীতে পারদর্শী বুদ্ধদেব গুহ টপ্পা গানেও পটু ছিলেন। বহুসময় অনেকেই তাঁর গানের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। গানের সূত্রেই ভালবাসা- বিয়েও করেন গায়িকা ঋতু গুহকে। গান যেমন তাঁর মনপ্রাণ জুড়ে ছিল, তেমনই পেশাগত জীবনেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পাশ করে বাবার চার্টার্ড ফার্মে যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর জীবনজুড়ে ছিল অরণ্য। প্রকৃতির প্রতি নিখাদ প্রেম। যে প্রেমের ছোঁয়া পেয়েছে তামাম পাঠককুল। বুদ্ধদেব গুহর প্রথম গল্প সংকলন জঙ্গল মহল- ষাটের দশকে প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে একের পর এক উপহার দিয়েছে বুদ্ধদেব গুহর লেখনী।
একের পর এক সৃষ্টি:
বুদ্ধদেব গুহ ব্যক্তিগত জীবনে প্রকৃতিপ্রেমিক ছিলেন। ঘুরতে ভালবাসতেন। পছন্দ ছিল জঙ্গল। খুব কাছ থেকে দেখেছেন জঙ্গলের জীবন, মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষদের। তাই সেই জঙ্গলপ্রেম, সেই অভিজ্ঞতাই বারবার উঠে এসেছে তাঁর কলমে। সৃষ্টি করেছে একের পর এক চরিত্র।
১৯৭৬ সাল। এই বছরেই আনন্দ পুরস্কার পায় বুদ্ধদেব গুহর সৃষ্টি হলুদ বসন্ত। ঋজু এবং নয়নার সম্পর্কের রসায়ন-এই উপন্যাসের মূল আধার। কিন্তু আর পাঁচটা প্রেমের উপন্যাস নয়। প্রেম কী, প্রেমের অপেক্ষা কী--সঙ্গীর সুখ? নাকি নিজের সুখ? মাত্র নব্বই পাতার উপন্যাসে ঘুরে-ফিরে এসেছে নানা প্রশ্ন। উপন্যাসের তালিকা করতে বসলে প্রথমেই থাকবে আরও একটি উপন্যাস- মাধুকরী। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস জনপ্রিয়তার বিচারে এখনও পাল্লা দেয়। বাঙালি মধ্যবিত্তের চেনা ছকের বাইরের গল্প। কিন্তু সেটাই যেন ক্রমাগত হাতছানি দিয়ে ডাকে। শ্লীলতা-অশ্লীলতা, সমাজ-নিয়ম সব বেড়া ভেঙে দেয় মাধুকরীর চলন। ছোট হোক বা বড় সব চরিত্রই যেন ভীষণ দাগ কেটে যায়। এমন করেই পাঠক মনে রাখে তাঁর আরও একটি উপন্যাস- একটু উষ্ণতার খোঁজে। তালিকা অনেকটাই দীর্ঘ- কোজাগর, কোয়েলের কাছে, চাপরাশ, পঞ্চম প্রবাস, শাল ডুংরী, সারেং মিঞা, মাণ্ডুর রূপমতী, বাবলি, নগ্ন নির্জন- আরও কত কত।
বাঙালিকে জঙ্গলের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন, অ্যাডভেঞ্চার চিনিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাকিটা চিনিয়েছেন, জঙ্গলকে ভালবাসতে শিখিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ। আরও একটি উপহার হয়েছে তাঁর। 'দাদাময়' বাংলা সাহিত্যে বাঙালিকে আরও একটি দাদা উপহার দিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ- ঋজুদা। তবে বাকি 'দাদা'-দের তুলনায় ইনি অনেকটাই আলাদা। গুগনোগুম্বারের দেশে, রুআহা-তে মারকাটারি অ্যাকশন-নিনিকুমারীর বাঘ, ছোটডোঙ্গরির চিতা, ঝিঙ্গাঝিরিয়ার মানুষখেকোর-রুদ্ধশ্বাস কাহিনী কিংবা মউলির রাতের রহস্যঘেরা ডাক--বাঙালি কিশোর পাঠকের মনের অন্তঃস্থলে 'আইডল' হয়ে ওঠে ঋজুদা। শিকার কাহিনী শুধু নয়, বনজঙ্গলের প্রতি, বন্যপ্রাণীদের প্রতি-সর্বোপরি জঙ্গলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অসংখ্য প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের প্রতি নির্ভেজাল মমত্ব বারবার ফুটে উঠেছে ঋজুদার চরিত্রে। অথচ তিনি নিজে আপাদমস্তক সাহেবিকেতার শহুরে মানুষ। যাঁর মনপ্রাণ পড়ে থাকে জঙ্গলের সূর্যাস্তে, পাখির ডাকে কিংবা ছোট জংলি ঝোরাতে। আদতে বুদ্ধদেব গুহ মানুষটাও তাইই ছিলেন। ঋজুদা চরিত্রে কি তাঁরই ছায়া পড়েছে? এ প্রশ্ন আসতেই পারে পাঠকের মনে।
বড় হয়ে ওঠার সঙ্গী:
প্রথমেই বলা হয়েছিল শিকারিসত্ত্বা, অরণ্যপ্রেমী সত্ত্বা ছাপিয়ে বারবার তাঁর নানা লেখায় উঠে এসেছিল প্রেমিক সত্ত্বা। একাধিক উপন্যাসে বিভিন্ন আঙ্গিকে ধরা দিয়েছে প্রেম। বাংলায় কিশোর সাহিত্য প্রচুর রয়েছে। কিন্তু কিশোর থেকে তরুণ হয়ে ওঠা কিংবা কোনও কিশোরীর যুবতী হয়ে ওঠা অথবা ভীরু প্রেমের সাহসী হয়ে ওঠার যে পথটা--এই সময়টাই সেতু দিয়ে জুড়েছেন বুদ্ধদেব গুহ। তাঁর লেখা পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই যেন বড় হয়ে যায় কোনও কৈশোরের শেষপ্রান্তে থাকা কোনও পাঠক। আবার বুদ্ধদেব গুহর লেখায় যেন সেই বয়সেই ফের ঢুঁ মেরে আসতে পারেন পরিণতবয়স্ক কেউ। কৈশোর থেকে উত্তরণের কথা বললে, বলতে হবে শৈশব থেকে ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠার সেই সময়ের কথাও। বুদ্ধদেব গুহর কলমে সৃষ্টি হয়েছিল ঋভু চরিত্রটি। ফেলে আসা ছেলেবেলার টুকরো টুকরো স্মৃতি দিয়েই হয়তো বুনেছিলেন চরিত্রটি।
'২১-এর আগস্ট। কলম থামল তাঁর। প্রকৃতিতেই মিশে গেলেন সারাজীবন প্রকৃতিকে ভালবাসা মানুষটি। রয়ে গেল তাঁর সৃষ্টি। পাতায় পাতায় মিশে থাকল প্রেম-অপ্রেম-জঙ্গল-অ্যাডভেঞ্চার। রয়ে গেল মাসাইমারার রূপকথা...রয়ে গেল মাধুকরীর হাটচান্দ্রা আর কিবরু।
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ড 'জয়' করলেন কিন্তু দেশে ফিরলেন না 'রাজা'
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)