Exclusive: জরায়ু নয়! মায়ের শরীরে অন্যত্র বাড়ছিল শিশু! জন্ম দিয়ে 'অসাধ্যসাধন' ন্যাশনাল মেডিক্যালের
গত ১২ ডিসেম্বর ক্যালকাটা ন্য়াশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয় নাজিমাকে। ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসক শ্যামাপদ পতি এবং পি পি শর্মার বিশেষজ্ঞ টিম সিজার ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেন।
কলকাতা: ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta National Medical College) 'অসাধ্যসধান'। জরায়ুর বাইরে বেড়ে উঠছিল শিশু! অত্যন্ত জটিল অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি (Abdominal Pregnancy) নিয়ে ভর্তি হল এক রোগিনী। বিরল এই সমস্যা। প্রতি ২৫০০০-এ একজনের মধ্যে দেখা যায়। প্রথমে যা বোঝার কোনও উপায় কার্যত নেই। সম্প্রতি অস্ত্রোপচারের টেবিলে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তবে তাঁদের সুবাদে অত্যন্ত এই জটিল অস্ত্রোপচার সাফল্য পেয়েছে। বাঁচানো সম্ভব হয়েছে মা এবং শিশুকে।
১২ ডিসেম্বরের ঘটনা। হঠাৎ তীব্র পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta National Medical College) নিয়ে আসা হয় ক্যানিং-এর বাসিন্দা নাজিয়া লস্করকে। তখন ৩৯ সপ্তাহর গর্ভাবস্থা বছর ২৭-এর নাজিমার। কয়েকবারের আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে তখনও কিছু বোঝা যায়নি। মনে করা হয়েছিল জরায়ুর মুখে একটি টিউমার রয়েছে। তাই তড়িঘড়ি সিজারিয়ান ডেলিভারির (Caesar Delivery) সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। এই অবধি সবটা স্বাভাবিক থাকলেও অপারেশনের সময়ে কার্যত মাথায় হাত পড়ে চিকিৎসকদের।
গত ১২ ডিসেম্বর বারুইপুর হাসপাতাল থেকে ক্যালকাটা ন্য়াশনাল মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয় নাজিমাকে। ১৩ ডিসেম্বর চিকিৎসক শ্যামাপদ পতি এবং পি পি শর্মার বিশেষজ্ঞ টিম সিজারিয়ান ডেলিভারির সিদ্ধান্ত নেন।
ডেলিভারির সময়ে দেখা যায়, ফ্যালোপিয়ান টিউব ফেটে বেরিয়ে বাচ্চা বেড়ে উঠেছে জরায়ুর বাইরে। চিকিৎসার ভাষায় যাকে বলা হয় অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি। যা কার্যত বিরল ঘটনা। নাজিমার ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর থেকে জরায়ুটি সম্পূর্ণ আলাদা। শিশুটি মায়ের পেটে পেরিটোনিয়ামের (উদরের আবরক ঝিল্লি) মধ্যে রয়েছে। সেখান থেকে শিশুকে বের করার পরেই অস্বাভাবিক রক্তপাত শুরু হয় মায়ের। শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।
শল্য চিকিৎসক অধ্যাপক উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের পরামর্শে প্লাসেন্টার বেশ কিছু অংশ বাদ দেওয়ার পরেও রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় আপদকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দুটি সার্জিক্যাল মপ পেটের মধ্যে রেখে সেটি সেলাই করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেওয়া হয় রক্তও। মা-কে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় দীর্ঘসময়। ধীরে ধীরে মায়ের অবস্থার উন্নতি হলে ৪৮ ঘণ্টা পর সার্জিক্য়াল মপ দুটি আবার অস্ত্রোপচার করে বের করে আনা হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ রয়েছে। দিন দুয়েক পর্যবেক্ষণে রেখে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে নাজিনমা এবং সদ্যোজাতকে।
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক শ্যামাপদ পতি বলছেন, 'গর্ভাবস্থায় প্রথম পর্যায়ে মায়ের মৃত্যুর কারণগুলির অন্যতম এই এক্টোপিক প্রেগন্যান্সি। অন্তঃসত্ত্বার জীবনহানির পাশাপাশি শিশুর বিকলাঙ্ক হওয়ারও প্রবণতা থাকে। অধ্যাপক শ্যামাপদ পতি জানান, গত তিন বছরে ২টি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি এসেছিল। তবে দুটি ক্ষেত্রেই শিশুকে বাঁচানো যায়নি'।
এ প্রসঙ্গে ক্যালক্যাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি চিকিৎসক অর্ঘদীপ মৈত্র জানিয়েছেন, 'এই সাফল্যের সম্পূর্ণ কৃতিত্বই ডাঃ শ্য়ামাপদ পতির। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণের কারণে শিশু তো দূরের কথা মা-কেও বাঁচানো যায় না তবে ডাঃ পতি কার্যত অসাধ্যসাধন করেছেন। আমরা হাসপাতালের তরফে ওঁর কাছে কৃতজ্ঞ। ওঁর জন্যই এই জটিল কাজ সম্ভব হয়েছে'।
কী এই অ্যাক্টোপিক অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি? অ্যাক্টোপিক প্রেগন্যান্সি এমন একটি গর্ভাবস্থা যেখানে জরায়ুর প্রধান গহ্বরের বাইরে বৃদ্ধি পায় ভ্রুণ। অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থায় শিশু শরীরের অন্যান্য অংশেও বেড়ে উঠতে পারে যেমন জরায়ুর নিচের অংশ, ডিম্বাশয় বা পেটের গহ্বরে। অধ্যাপক শ্যামাপদ পতির কথায়, প্রতি ২৫,০০০-এ ১ জন মহিলার অ্যাক্টোপিক গর্ভাবস্থা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অ্যাক্টোপিক প্রেগনেন্সির ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সোনোগ্রাফিতেও পরেও ধরা পড়ে না। ফলে পরিস্থিতি সহজে সনাক্ত করা যায় না। দেরিতে ধরা পড়ার কারণে মা এবং সন্তানকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
চিকিৎসক শ্যামাপদ পতি বলছেন, এই কেসগুলোয় দেখা যায় ভ্রুণটি ফ্যালোপিয়ান টিউবের (Fallopian Tube) বাইরে আসার পর মায়ের পেটের ভিতরে পেরিটোনিয়ামে (Peritoneum) থাকে। শুরু হয়ে যায় ভ্রুণের রক্ত সঞ্চালন। আর প্লাসেন্টা থাকে পেরিটোনিয়ামের ভিতর। সাধারণত এ ক্ষেত্রে অ্যামনিয়ম, পেরিটোনিয়াম একত্রিত হয়ে ভ্রুণের চারদিকে আবরণ তৈরি করে।
আরও পড়ুন: New Born Cataract: শুধু বয়স্কদের নয়, চিন্তা বাড়াচ্ছে ছোটদের ছানিও! সতর্ক হন গোড়াতেই