Calcutta University: ‘ভবিষ্যতে এমন অনুরোধ যেন না আসে’, শাসককে বার্তা উপাচার্যের, কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ে নির্বিঘ্নেই হল পরীক্ষা
Santa Datta De: জানালেন, ভবিষ্যতে যেন এমন অনুরোধ না আসে।

কলকাতা: সরকার এবং শাসকদলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই নির্বিঘ্নে পরীক্ষা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলেও, শেষ পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকারের জয় দেখছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য শান্তা দত্ত দে। জানিয়ে দিলেন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসে পরীক্ষা রাখা যাবে না বলে যে চাপসৃষ্টি করা হয়েছিল, তার সামনে মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই ছিল না। স্বাধিকার লঙ্ঘন করে কাউকে যে মাথায় উঠে নাচতে দেওয়া যাবে না, সেই বার্তা দিতে পেরেও খুশি তিনি। পাশাপাশি, মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বার্তা দিয়েছেন তিনি। জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যেন এমন অনুরোধ না আসে। (Santa Datta De)
বৃহস্পতিবার মেয়ো রোডে যখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান চলছে, মঞ্চে উঠে বক্তৃতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে। ৯৬ শতাংশ ছেলেমেয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য, যার মধ্যে জয় দেখতে পাচ্ছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, "অনেক লড়াই লড়তে হয়েছে, দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয়েছে। সিন্ডিকেটের মিটিংয়ে সরকারের সিনিয়র অধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। ওমপ্রকাশবাবু সেদিন যারপরনাই খারাপ আচরণ করেছেন, যা সকলেই দেখেছেন।" (Calcutta University)
সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর নাম করেই তাঁকে পরীক্ষা পিছনোর কথা বলা হয়েছিল বলে এদিনও জানান উপাচার্য। তাঁর কথায়, "ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অনুরোধের কথা উল্লেখ করেন, যেটা আমার ভাল লাগছিল না। না করলেই পারতেন। তার পর সিন্ডিকেটের সকলে আমাদের সত্যের পাশে দাঁড়ালেন যে, বিশ্ববিদ্যালয় যখন পরীক্ষার তারিখ ঠিক করেছে, পরীক্ষা হবে। সাধারণ কারণে তা পিছোতে পারে না। সবাই যখন একসঙ্গে বলে উঠলেন, সেদিনই আসল জয় হয়ে গিয়েছে। আমি ঠিক করেছিলাম, শক্ত হাতে এই জয় ধরে রাখতে হবে।"
উপাচার্য জানিয়েছেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে স্বায়ত্তশাসনের দিকে এগোচ্ছে। গত দুই বছর দুই মাস ধরে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যাতে অধ্যাপকরাও অত্যন্ত আনন্দিত। সকলেই যোগদান করছেন। তাঁর বক্তব্য, "এটাই তো বড় আনন্দ। নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা। শাসককে বলতে চাই, ভবিষ্যতে যেন এমন অনুরোধ না করেন।"
কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পরীক্ষা নিয়ে এই টানাপোড়েন, ছাত্রদের আচরণ নিয়ে মেয়ো রোডের সভা থেকে কেন কিছু বললেন না মুখ্যমন্ত্রী, প্রশ্ন তুলেছেন উপাচার্য। তাঁর বক্তব্য, "ভেবেচিন্তেই হয়ত মঞ্চ থেকে কিছু বলেননি। আমি খুশি হতাম। যে ছাত্ররা পাশ করে বেরিয়ে গিয়েছেন, তারা বিভিন্ন জায়গায় নানা অপরাধমূলক কাজকর্মে যুক্ত হয়েছেন। আজ মঞ্চ থেকে যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তোলেননি, তেমনই এই কথাগুলোও বলা উচিত ছিল ছাত্রদের উদ্দেশে। মুখ্যমন্ত্রী নয়, দলের সুপ্রিমো হিসেবে গিয়েছিলেন। বাঘাযতীন, ক্ষুদিরাম, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কথা বলছিলেন। তাঁদের আদর্শ তোমাদের মধ্যেও ঢুকুক! সেকথা বলার দরকার ছিল। কেন সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এমন ঘটনা ঘটবে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে উপাচার্যকে এত খারাপ গালিগালাজ করবে কেন? এটা তো বলতে পারতেন! বলেননি, কোনওটাই বলেননি। বাচ্চাদের বার্তা দেওয়া দরকার ছিল। চরিত্রগঠনের বার্তা দিতে হবে না? কই সেই বার্তা?"
পরীক্ষা নিয়ে এই টানাপোড়েন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকটা এগিয়ে দিল বলে মত উপাচার্যের। তাঁর মতে, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকা উচিত। বোঝাতে হবে যে, চাইলেই কেউ মাথায় উঠে নাচতে পারে না। একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত যে নেওয়া যায়, সেই শিক্ষা পাওয়া গেল বলে মত তাঁর। উপাচার্যের কথায়, "জানি না কতদিন আছি। কিন্তু শিক্ষা রেখে যাচ্ছি। সঠিক এবং যৌক্তিক বিষয়ের উপর স্বাধীনচেতা হওয়া যায়। যা ইচ্ছে তাই করা যায় না। আজ পর্যন্ত নয়ছয় করিনি। যা করার সিন্ডিকেটের মধ্যে দিয়েই করেছি।" কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের সামনে রাজনীতি পিছনে পড়ে গেল বলেই মনে করছেন উপাচার্য।






















