Durga Puja Special: সঙ্কীর্ণতার স্থান নেই, ভিনধর্মের আরাধ্য বিগ্রহের মাথার চুল তৈরিই পেশা
করোনা আবহে গতবারের মতো এবারও দুর্গাপুজোর আগে অর্ডার কিছুটা কম, তবে কুলাই গ্রামে পরচুলা তৈরির কাজ থেমে নেই।
হাওড়া: ‘আমার দেবতা আমার কাছে, ওদের দেবতা ওদের কাছে। রাধা-কৃষ্ণকে আমরা দেবতাই ভাবি। আমরা যে চুল তৈরি করি, সেটা দেব-দেবীর মাথায় সম্মানের সঙ্গে পরানো হয়। আমরাও সম্মান জানাই। আমাদেরও পেট আছে। আমরা চুল তৈরির সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে থাকি। যে ঘরে বসে দেব-দেবীর চুল তৈরি করি, সেই ঘর থেকে অনেক দূরে রান্নাঘর। স্নান সেরে কাচা জামা পরে তবে আমরা চুল তৈরি করতে বসি।’
একনিঃশ্বাসে কথাগুলি বলছিলেন শেখ মুজফফর। তাঁর মতোই পরচুলা তৈরি করেন হাওড়ার পাঁচলার কাছে কুলাই গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। যাঁরা এই পেশার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা প্রত্যেকেই মুসলিম। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁরা হিন্দু দেব-দেবীর মাথার চুল, চামর তৈরি করে আসছেন। প্রায় ১০০ বছর ধরে কুলাই গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারের পেশা পরচুলা তৈরি। যাত্রা, নাটকের অভিনেতাদের জন্য পরচুলা তৈরির পাশাপাশি রাধা-কৃষ্ণর চুল এবং চামর তৈরি করছেন তাঁরা। করোনা আবহে ব্যবসা মার খেয়েছে। তবে কাজ থেমে নেই। দুর্গাপুজোর সময় ব্যবস্তা তুঙ্গে।
এই গ্রামের এক পরচুলা শিল্পী শেখ আজিজুল জানালেন,‘আমরা ১০০ বছর ধরে পরচুলা তৈরি করে আসছি। আমার বাবা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে সারা দেশে করমুক্তভাবে পরচুলা পাঠানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। বাবা প্রয়াত হয়েছেন। আমরা তাঁর দেখানো পথেই এগিয়ে চলেছি। তবে এখন যাত্রা-নাটক বন্ধ। তাই শুধু রাধা-কৃষ্ণর চুল আর চামর তৈরির অর্ডার পাচ্ছি। আমাদের তৈরি চুল দিল্লি, বৃন্দাবন, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে যায়।’
কুলাই গ্রামে পরচুলা তৈরি হয় সিন্থেটিক বা নাইলন দিয়ে। প্রথমে সেগুলি ধুয়ে ছাদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এরপর সেগুলি গুছিয়ে নিয়ে বিনুনি করা হয়। তারপর চুল তৈরির চূড়ান্ত কাজ করা হয়। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিনুনি পাকানোর কাজ তাঁরাই করেন। এটাই পরচুলা তৈরির আসল কাজ।
নাজিরা বেগম নামে এক মহিলা বিনুনি পাকাতে পাকাতেই বললেন, ‘আমি সাত-আট বছর ধরে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা ধরে কাজ করি। পরচুলার আসল কাজটাই আমি করি।’
শুধু কুলাই গ্রামই নয়, মেদিনীপুর সহ আরও কয়েকটি জায়গায় পরচুলা তৈরির কাজ হচ্ছে। তবে শুরু হয়েছিল কুলাইতেই। এ বিষয়ে পথ দেখিয়েছেন এই গ্রামের বাসিন্দারাই। নতুন প্রজন্মও পরচুলা তৈরির কাজে এগিয়ে এসেছে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর সবাই।