Durga Puja 2025: কালো রংয়ের দুর্গা! ভোগের পাতে পান্তা ভাত, কাঁচা লঙ্কা, টক দই, ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক
Durga Puja: দেবী দুর্গার (Durga Puja 2025) মৃন্ময়ী রূপ দেখলে চমকে উঠতে হয়। একচালার প্রতিমায় দশভূজার রং কালো!

কমলকৃষ্ণ দে, বর্ধমান: দেবী দুর্গার (Durga Puja 2025) মৃন্ময়ী রূপ দেখলে চমকে উঠতে হয়। একচালার প্রতিমায় দশভূজার রং কালো! দশমীর দিন 'মা'-কে ভোগে নিবেদন করা হয় পান্তা ভাত, কাঁচা লঙ্কা, টক দই, ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক!
বর্ধমানের ৫নং ইছলাবাদ সাউথ ব্লক এলাকার বাসিন্দা জয়ানন্দ তীর্থনাথ ওরফে জয়ন্ত ভট্টাচার্যের বাড়িতে এই কালো দুর্গাপুজোর প্রচলন শুরু হয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। তবে বংশ পরম্পরায় প্রায় ৩০০ বছর ধরে হয়ে আসছে 'কালো দুর্গা'র পুজো। পরিবারের লোকজন বলেন 'ভদ্রকালীরূপী দুর্গা'।
জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন, বর্তমান বাংলাদেশের স্থল-এর পাকড়াশী বংশের পূর্বপুরুষ হরিদেব ভট্টাচার্যের প্রথম এই পুজো শুরু করেন প্রায় আটপুরুষ আগে। জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন, শোনা যায় হরিদেব ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পান দেবীকে এই ভদ্রকালীরূপী দুর্গা রূপেই পুজো করার জন্য। সেই থেকে শুরু হয় বিশেষ এই দুর্গার আরাধনা। তিনি জানিয়েছেন, যদিও কেউ কেউ বলেন মূর্তিশিল্পী ভুল করে কালো রং করে দিয়েছিলেন, সময় না থাকায় সেই রূপেই পুজো শুরু হয় – তবে এ ব্যাপারটি বংশের কেউ মানেন না।
একটানা এই পুজো চলতে থাকার পর ১৯৩৫ সালে জয়ন্তবাবুর বড় জ্যাঠা নীরদগোপাল ভট্টাচার্য আসানসোলে চলে আসেন কর্মসূত্রে। ১৯৩৯ সালে কলকাতায় আসেন তাঁর সেজ জ্যাঠারা। ১৯৪৬ সালে দেশভাগের আগে তাঁর বাবা সহ পরিবারের বাকি সদস্যরা কলকাতায় চলে আসেন। জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন, তাঁর ঠাকুর্দা কালিদয়াল ভট্টাচার্য পাবনা হাইকোর্টের উকিল ছিলেন। বাংলাদেশ থেকে চলে আসার পর কালনার গুপ্তিপাড়ায় কিছুদিন পুজো হয়। এরপর জয়ন্তবাবুর বড় জ্যাঠা আসানসোলে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এই পুজো করেন। ১৯৭৬ -১৯৮০ পর্যন্ত দুর্গাপুরে পুজো হয়। এরপর কলকাতার বেলেঘাটায় পরিবারের সদস্যরা এই পুজো শুরু করেন। এখনও তা চলছে।
জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে তাঁর গুরুদেব ব্রহ্মানন্দ গিরি গুরু পরম্পরায় তাঁর বাড়িতে পুজোর নির্দেশ দেন এবং তাঁর বাড়িতে এই পুজো শুরু করেন। বিশেষ তন্ত্রমতে এই পুজো হয়। প্রচলিত ধারণার কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে এই পুজোয়। ষষ্ঠী থেকে পুজো শুরু। প্রতিদিনই মায়ের ভোগে থাকে আড় মাছ, বোয়াল মাছ, কাতলা, পাবদা প্রভৃতি মাছ। নবমীর দিন দেওয়া হয় ইলিশ মাছ। সন্ধিপুজোয় ভদ্রকালী দুর্গারূপীনি চামুণ্ডার পুজো হয়। দশমীর দিন দেওয়া হয় পান্তা ভাত, লেবু, কাঁচা লঙ্কা, টক দই, ইলিশের মাথা দিয়ে কচুশাক, ৫ রকম ভাজা সহ দুরকম তরকারী। সপ্তমীর দিন খিচুরি ভোগ এবং অষ্টমীতে পোলাও সহ নিরামিষ ভোগ। নবমীতে ফ্রায়েড রাইস, দুরকম মাছ ছাড়াও পাঁঠা বলি হয়। সপ্তমী, সন্ধি পুজো এবং নবমী - মোট তিনদিন পাঁঠা বলি হয়। ভোগে থাকে চাটনী, পায়েস, লুচি, নারকেল নাড়ু প্রভৃতি।
বর্ধমানে মূর্তি গড়েন দীনবন্ধু পাল। একচালের দুর্গাপ্রতিমা চতুর্ভূজা ভদ্রকালী, দয়াময়ী মূর্তি। জয়ন্তবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের এই প্রতিমায় বিশেষত্ব হল কার্তিক ও গণেশ অন্যান্য মূর্তির মতো থাকে না। এখানে তাঁরা বিপরীতে থাকেন। দেবীর বামদিকে থাকেন গণেশ এবং ডানদিকে থাকেন কার্তিক। পঞ্চমীতে গুরুপুজো দিয়ে শুরু হয়। প্রত্যেকদিন চণ্ডীপাঠ হয়।






















