Sovan Chatterjee: '৬ বছর ধরে...', কোন চক্রান্তের শিকার শোভন?
Narada Sting Case:সম্প্রতি নারদ মামলায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়।
সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: ক্য়ামেরার সামনে হাত পেতে টাকা নিচ্ছেন সাংসদ, মন্ত্রী-বিধায়ক। ২০১৬ সালে বিধানসভা (Assembly Election) ভোটের ঠিক আগে এমন ভিডিও ফুটেজ কাঁপিয়ে দিয়েছিল রাজ্য-রাজনীতির অন্দরমহল। ভিডিওতে যাঁদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁরা সকলেই সেই সময়ে তৃণমূলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মুখ। নারদা স্টিং অপারেশন (Narada Sting Operation) কাণ্ডে তৃণমূল (TMC Leaders) নেতাদের দেখা নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছিল বিরোধীরা। তারপর সময় পেরিয়েছে, ফের মসনদে এসেছে তৃণমূল, অনেক দলবদলও হয়েছে। সেই ঘটনায় গোড়া থেকেই চক্রান্তের অভিযোগ করেছিলেন প্রায় সব অভিযুক্ত নেতাই। এবার সেই সুর শোনা গেল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের (Sovan Chatterjee) মুখেও। নারদা মামলায় হাজিরা দিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী ও কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়রের দাবি, তিনি চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। হাজিরা দিয়ে তিনি বলেন, 'আজকে আমরা ৬ বছর ধরে একটা চক্রান্তের শিকার।'
নতুন নয় চক্রান্ত তত্ত্ব:
প্রথমে চক্রান্তের কথা বলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তারপরে ফিরহাদ হাকিম, সেই একই সুর শোনা গিয়েছিল সৌগত রায়ের মুখেও। এবার চক্রান্ত তত্ত্বের কথা বললেন খোদ শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। সম্প্রতি নারদ মামলায় ব্যাঙ্কশাল কোর্টের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন মন্ত্রী ও মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। হাজিরা দিয়ে বেরনোর পরে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মুখ শোনা যায় ওই মন্তব্য। তিনি বলেন, 'আজকে আমরা ৬ বছর ধরে একটা চক্রান্তের শিকার। আজ ৬ বছর ধরে আমরা কোর্টে অ্যাটেন্ড করে যাচ্ছি। কিন্তু যারা, আরও মানুষজন আছে, আরও রাজনৈতিক নেতা আছে, তাদের অবস্থান কোথায়?' মেয়র ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) বলেন, 'এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। সত্য একদিন সামনে আসবেই।'
২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে আগে, রাজ্যে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল, নারদ স্টিং অপারেশনের ভিডিও। পরে শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, তিনি তৃণমূলে থাকতেই নারদকাণ্ড ছিল ষড়যন্ত্র। গত ২৩ অগাস্ট শুভেন্দু বলেন, 'ভাইপো মনে করে ওর পলিটিক্যালি এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি একমাত্র বাধা। দলের ভিতরে যখন ছিলাম তখনও এটাই মনে করতো। সেই জন্যই ম্যাথুকে আমদানি করা, কেডি সিংহের মাধ্যমে দলের ভেতরে থাকা ১৩ জন নেতাকে ফাঁসানো, সবাই জানে এটা, নতুন করে বলার কিছু নেই।' গত বছরেই রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের আক্রমণের জবাব দিতে গিয়ে, শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যের প্রসঙ্গই টেনে এনেছিলেন ফিরহাদ হাকিম। গত বছরের অগাস্টে এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, 'আমার একটা কেস হয়েছিল, সেই জন্য আমি গ্রেফতার হয়েছিলাম। আমি হাসপাতালে থাকিনি, আমি জেলে ছিলাম। আমাকে আদালত বলেছিল জেলে থাকতে, আমি জেলে ছিলাম। কিন্তু সেই কেসের বিষয়ে বিরোধী দলনেতা ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন।' তখন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, রাজনৈতিক কারণে নারদ স্টিং অপারেশন করা হয়েছিল কিনা? তার উত্তরে ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, 'সেটা বিরোধী দলনেতা বলে দিয়েছেন, এটা নিয়ে আমি রিপিট করব না। এটা রিপিট করা যায় না।'
ফিরহাদের এই মন্তব্যের পরই রাজনৈতিকমহলে প্রশ্ন উঠেছিল, নারদ স্টিং অপারেশনের উদ্দেশ্য নিয়ে শুভেনদু অধিকারী যা বলেছেন, তাকেই কি সমর্থন করেছেন ফিরহাদ? এরই মধ্যে শুভেন্দুর সুর শোনা গিয়েছিল তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের (Saugata Roy) মুখেও। তিনি বলেছিলেন, 'একবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। এফআইআর হয়েছিল। চার্জশিট দেয়নি। এর কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কিছুই হবে না। এটা ট্র্যাপ ছিল, কিন্তু কিছুই হবে না।'
দুর্নীতি ইস্যুতে বুধবার শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা যখন বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে চোর স্লোগান দিচ্ছিলেন, তখন পাল্টা নারদ-কাণ্ডের প্রসঙ্গে শুভেন্দুকে বিঁধেছিল শাসক শিবির। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের স্নেহভাজন হিসেবে পরিচিত শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মুখে উঠে এল চক্রান্ত তত্ত্ব।
বৃহস্পতিবার হাজিরার পরে পরবর্তী হাজিরা তারিখ ঠিক হয়েছে ১৩ ফেব্রুয়ারি।