Justice Abhijit Gangopadhyay : কীভাবে পেলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সারমেয়দের জন্য ফ্ল্যাটের খোঁজ ? কী জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
GhantaKhanek Sange Suman : 'আমি মনে রাখি জীবনানন্দ দাশকে। যিনি তাঁর জীবনে স্বীকৃতি পাননি। স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মারা যাওয়ার পরে।'
কলকাতা : শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে (SSC Scam) গ্রেফতার প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) সারমেয়দের রাখার জন্য নাকতলায় ছিল আলাদা ফ্ল্যাট। ইডি-সিবিআই তদন্তে যে তথ্য সামনে উঠে আসার বহু আগেই এজলাসে বসে যে তথ্যের উল্লেখ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Gangopadhyay)।
কীভাবে সেই তথ্য পেলেন তিনি ? পাশাপাশি একের পর এক রায়ে অনেক চাকরিপ্রার্থীর চোখেই আলাদা জায়গা পেয়েছেন তিনি, তাহলে কি ইতিহাসে স্থান পাওয়ার বাসনা রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিচারপতির ? এবিপি আনন্দের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুমন দে-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় একাধিক বিষয়ে মুখে খুলেছেন তিনি।
'আপনি কি গোয়েন্দা ?'
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের উল্লেখ করা সারমেয়দের ফ্ল্যাটের তথ্য তুলে ধরে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, 'অপনি কি গোয়েন্দা ?' যে প্রশ্নের উত্তরে বন্ধুদের থেকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর সারময়েরদের জন্য ফ্ল্যাট ও পরে ফ্ল্যাটবদলের প্রসঙ্গও তোলেন তিনি। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, 'আমি তো সাধারণ মানুষ-ই। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সারমেয়-রা থাকত নাকতলায় একজন প্রোমোটারের ফ্ল্যাটে। খুব কাছের প্রোমোটার। নাকতলায় আমার বহু বন্ধু-বান্ধব আছে। তাঁদের কাছ থেকে আমি শুনেছিলাম। এই ধরণের পাবলিক রাইটস তো আমরা এক্সারসাইজ করতেই পারি। কেউ যদি জানান কোনও রাস্তা খারাপ আছে, তখন কি সেটা দেখতে আমি কাউকে পাঠাবো, ধরুণ সেই রাস্তা দিয়ে আমি রোজ আসি। আমি বলব হ্যাঁ, আমি রোজ আসি আমি জানি। তেমনই। পরে দেখা গেল এই কথা বলার পর সারমেয়দের নিয়ে গিয়ে অন্য ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ সেই কুকুরের ফ্ল্যাট কুকুরেরই রইল, সেখানের কেয়ারটেকার বদলে গেল। ঠিকানা বদল হল। আজ তো প্রমাণ হয়ে গেছে যে ছিল।'
'ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার লোভ?'
একাধিক নজিরবিহীন রায়, তার পিছনে ঠিক কী কারণ? বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি ইতিহাসে ঠাঁই পাওয়ার লোভ রাখেন? জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, 'লোভ রয়েছে অন্যরকম। বহু জাজমেন্ট আছে, আমরা পড়ি ভুলে যাই। ভারতবর্ষে অল্প কিছু জাজমেন্ট রয়েছে যা মাইলস্টোন হয়ে থেকে গিয়েছে। আমি সেই ধরণের জাজমেন্ট দেওয়ার মতো জায়গায় যেতেই পারব না, তার আগেই আমার অবসরের দিন চলে আসবে। আমি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। কিন্তু আমি মনে রাখি জীবনানন্দ দাশকে। যিনি তাঁর জীবনে স্বীকৃতি পাননি। স্বীকৃতি পেয়েছিলেন মারা যাওয়ার পরে। আমি এরকম অন্তত একটা দুটো রায় দিয়ে যেতে চাই, নজির স্থাপন করে যেতে চাই, যেটা আমি যখন থাকব না, অনেক পরে হয়তো কোনও গবেষকের তথ্যে উঠে আসবে একজন জাজ ছিলেন, তিনি এরকম করতেন। সেটা পাগলামো হতে পারে, অন্যকিছু হতে পারে। আমি শুধু সেই আশা নিয়ে, বেঁচে কেউ থাকে না। ইতিহাস কাউকেই মনে রাখে না। হয়তো মনে থাকবে জ্যোতি বসু তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ইতিহাস কাউকে মনে রাখে না, আমাকেও রাখবে না।'
পাশাপাশি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, 'এই একটা কাজ আমি করেছি বিচারপতি হিসেবে, সৎভাবে, তখন যে কাজটা করা একান্ত দরকার ছিল। আমি তো মনে করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই প্রতিটা মুহূর্তে করা উচিত। পাশাপাশি এও জানি, হিমালয়ে না চলে গেলে সমাজে টিকে থাকতে হলে দুর্নীতির সঙ্গে কিছুটা সমঝোতা করে নিতে হয়। এটা আমার কথা নয়, এটা আমাকে কফি হাউসে বসে বুঝিয়েছিলেন নির্মাল্য আচার্য। আর তিনি এটা বুঝে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়ের থেকে।'
দেখুন পুরো সাক্ষাৎকার-
আরও পড়ুন-বাংলা মিডিয়াম স্কুল, ছোটবেলায় পিতৃবিয়োগ, স্ট্রাগল পেরিয়ে আইনচর্চা, মন-খোলা বিচারপতি