Kasba Student Death : 'মা ছোট বেলায় ছেড়ে চলে গেছে, বাবা অত্য়ন্ত রাগী', কসবার স্কুল পড়ুয়া মৃত্যুতে এবার 'ডিপ্রেশনের তত্ত্ব'
Kasba Student Death: পারিবারিক কারণে ডিপ্রেসন থেকেই এই ঘটনা। কসবার সকুলে দশম শ্রেণির পড়ুয়ার মৃত্য়ুতে অনুমান রাজ্য় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের।
সন্দীপ সরকার, ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা: খুন না আত্মহত্য়া? চাপা অভিমানেই কি নিজেকে শেষ করল দশম শ্রেণির পড়ুয়া? নাকি ঘটনার নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ? কসবার স্কুলে ছাত্রের মৃত্য়ুর কারণ ঘিরে এখনও ধোঁয়াশা। শেখ শানের মৃত্য়ু কীভাবে হয়েছে? উত্তর হাতড়াচ্ছে পুলিশ।
এই ঘটনা ঘিরে মঙ্গলবার রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কসবা। (Kasba Student Death) ছাত্রমৃত্য়ুর প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভের ঢেউ আছড়ে পড়ে রাস্তায়। পাঁচিল টপকে থানায় ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। দেহ নিয়ে আত্মীয় ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গেও তাদের ধস্তাধস্তি বাধে। রেলিং টপকে কসবা থানার মধ্যে ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।
এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার স্কুল পরিদর্শনে যান রাজ্য় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। (Kasba school student death)
কমিশনের অনুমান, চাপা অভিমান ও রাগ ছাত্রের মৃত্য়ুর কারণ হতে পারে। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের উপদেষ্টা অনন্যা চক্রবর্তী চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'বাচ্চাটি অত্য়ন্ত ডিপ্রেসড ছিল। ওর ভিতরে ভীষণ চাপা রাগ ছিল। নিশ্চয়ই খুব অভিমান ছিল ওর মা ছোট বেলায় ওকে ছেড়ে চলে গেছে। বাবা অত্য়ন্ত রাগী ছিল। ছোট বেলা থেকে কেউ রাগ দেখলে সে সেটাকে নর্মালাইজ করে ফেলে।'
মৃত ছাত্রের বাবার প্রশ্ন , 'উনি কী করে জানলেন? নিজেদের মতো বলছেন স্কুলের তরফে টাকা দেওয়া হয়েছে এইসব বলার জন্য়।'
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একসঙ্গে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে এই মৃত্য়ুর নেপথ্যে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
জয়রঞ্জন রাম বললেন, 'আমরা বড়রা ছোটদের শাসন করব। কিন্তু, দেখতে হবে যাতে শাসনটা অপমান না হয়। এরকম ঘটনা নির্দিষ্ট একটা কারণে হয় না। অনেকগুলো কারণের সমষ্টি।'
খুন না আত্মহত্য়া? লালবাজার সূত্রে খবর, শেখ শান আত্মঘাতী হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। এনিয়েই মৃত ছাত্রের পরিবার ও স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চলছে বাগবিতণ্ডা। মৃতের পরিবারের দাবি, সোমবার প্রথমে সকুল কর্তৃপক্ষের তরফে বাড়িতে ফোন করে জানানো হয়, সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে শান । পরিবারের দাবি, পড়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়েছে দশম শ্রেণির পড়ুয়া। মৃতের পরিবারের আরও দাবি, প্রজেক্ট জমা দিতে না পারায় সহপাঠীদের সামনে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় শেখ শানকে। অন্য আরেকজন পড়ুয়ার সঙ্গে তাঁকে ৫ তলায় নিয়ে যান শিক্ষিকারা। সহপাঠীকে নেমে যেতে বলা হলেও নামতে দেওয়া হয়নি শানকে। সূত্রের খবর, পুলিশকে ইমেল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, শেখ শানকে অঙ্কের প্রজেক্ট জমা দিতে বলা হয়। তার জন্য মৃত ছাত্র খারাপ ব্য়বহার করে। এরপর তাকে স্টাফরুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ২ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখার পর ক্লাসে যেতে বলা হলেও সে যায়নি। একইসঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মৃত ছাত্রের বাবা চাঞ্চল্য়কর অভিযোগও এনেছেন।
সূত্রের খবর, ওপর থেকে পড়ে মৃত্য়ু হলেও ওই ছাত্রের শরীরের হাড় ভাঙেনি। তা কী করে সম্ভব? শুধু কান দিয়ে রক্ত বেরোল কেন? স্কুল থেকে ওই ছাত্রের বাড়ি ১ কিলোমিটার দূরে। সেখানে খবর দিতে স্কুলের ২ ঘণ্টা সময় লাগল কেন?
স্কুলের কাছে একাধিক হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও ওই ছাত্রকে মুকুন্দপুরে নিয়ে যাওয়া হল কেন? এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
এনআরএস হাসপাতালের (NRS Hospital) চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিক্য়াল বোর্ড মৃত ছাত্রের দেহের ময়নাতদন্ত করে গোটা ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া ভিডিওগ্রাফি করা হয়। কসবার সিলভার পয়েন্ট সকুলে এদিন ফের যায় ফরেন্সিক দল। যেখানে ছাত্রের দেহ পাওয়া গিয়েছে সেই স্থান ঘুরে দেখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে যে জানালা থেকে ওই ছাত্র ঝাঁপ দিয়েছিল বলে সকুল কর্তৃপক্ষের দাবি, সেই জানালাও দেখেন ফরেন্সিক দলের সদস্য়রা।
মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘিরে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ছাত্রের মৃতদেহ নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা।
রাস্তা আটকে বিক্ষোভের জেরে রুবি থেকে গড়িয়াহাট অবধি যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় পরপর আটকে পড়ে গাড়ি। চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হন পথচারীরা।