আবাস যোজনায় ঘর পাইয়ে দিতে বৃদ্ধ দম্পতির কাছে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে
ফুটিফাটা ঘরে একটু বৃষ্টিতেই জল পড়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ স্বামী-স্ত্রীকে সেই ঘরেই অসহায় ভাবে দিন গুজরান করতে হয়। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় পরিচারিকার কাজ করে কোনওরকমে নুন-ভাত জোগাড় করেন বৃদ্ধা স্ত্রী।
অভিজিৎ চৌধুরী, মালদা: চাঁচলে আবাস যোজনায় ঘর পাইয়ে দিতে বৃদ্ধ দম্পতির কাছে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে দম্পতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নথি পঞ্চায়েতে জমা না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যা। ঘটনা ঘিরে শুরু রাজনৈতিক তরজা। অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও।
ফুটিফাটা ঘরে একটু বৃষ্টিতেই জল পড়ে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ স্বামী-স্ত্রীকে সেই ঘরেই অসহায় ভাবে দিন গুজরান করতে হয়। স্বামী অসুস্থ হওয়ায় পরিচারিকার কাজ করে কোনওরকমে নুন-ভাত জোগাড় করেন বৃদ্ধা স্ত্রী। দিনের পর দিন এই অবস্থায় কাটাতে কাটাতে হাঁফিয়ে উঠছেন মালদার চাঁচলের বাসিন্দা গৌর দাস ও তাঁর স্ত্রী গয়া দাস।
বৃদ্ধার অভিযোগ, বাংলা আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকলেও সুবিধা পাইয়ে দিতে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতের সদস্যা পম্পা চৌধুরী ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। প্রশাসনের কাছে এবিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।
মালদা চাঁচলের অভিযোগকারিণী ও বাসিন্দা গয়া দাসের কথায়, বেশিরভাগ দিন নুন দিয়ে ভাত খেয়ে থাকি। শরীরে না কুলোলেও অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হয়। বৃষ্টি হলেই ঘরে জল পড়ে। ত্রিপল মুড়ে সারারাত জেগে বসে থাকি। বার্ধ্যক্য ভাতাটাও মেলেনি। আমার তো একটা টাকাও দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এভাবে বেঁচে থেকে কী লাভ। সরকারি সাহায্য না পেলে মরা ছাড়া পথ নেই। আবাস যোজনার ঘর পেতে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে জানিয়েছেন বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য। আমি লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি।
টাকা চাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে অভিযুক্ত বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্যার দাবি, প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা না দেওয়ায় ঘর পেতে দেরি হচ্ছে ওই পরিবারের।
মালদা চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি নেত্রী ও সদস্য পম্পা চৌধুরীর অভিযোগ, আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকলেও উনি পঞ্চায়েতে নথি জমা দেননি বলে ঘর পাননি। এখন বদনাম করতে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। বাড়ি বসে তো কেউ কিছু করে দেবে না। বার্ধ্যক্য ভাতা বা অন্যান্য সুবিধার জন্য আমার সঙ্গে দেখা করতে হবে, পঞ্চায়েতে যেতে হবে।
অসহায় দম্পতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি তরজা।
মালদার চাঁচলের তৃণমূল নেতা ও বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষের কাছেও অভিযোগ এসেছে। পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য অমিতেশ পাণ্ডে ওদের ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। কিন্তু মহিলা তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। তাই বিজেপির স্থানীয় সদস্যা ওকে ঘর দিচ্ছেন না! টাকা চাইছেন। আমি বিডিওকে বিষয়টি জানিয়েছি। সব খতিয়ে দেখে বৃদ্ধার সঙ্গে বঞ্চনা হলে এফআইআর করার কথা বলেছি।
মালদার বিজেপি সম্পাদক কিষাণ কেডিয়ার কথায়, বিজেপি কখনো কাটমানি ইস্যুতে বিশ্বাসী নয়। বিজেপিকে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে এ সমস্ত অভিযোগ তোলা হচ্ছে। এগুলো তৃণমূলের পরিকল্পিত চক্রান্ত। আমাদের দলের যদি কেউ যুক্ত থাকে তাহলে প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ব্লক জেলা পরিষদ সমস্ত জায়গাতেই তৃণমূলের শাসন চলছে। বিজেপির সদস্যদের কোন পাত্তা দেওয়া হয় না।
অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিডিও। কবে মিলবে সরকারি সাহায্য? এখন সেই অপেক্ষায় দিন গুণছেন চাঁচলের ওই দম্পতি।