Murshidabad : লক্ষ্য বিজ্ঞানী হওয়া, পথে ফের 'কাঁটা' মাধ্যমিকের কৃতী আলমের !
Murshidabad Student : এবার মাধ্যমিকে ৬২৫ নম্বর পেয়ে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে
রাজীব চৌধুরী, বহরমপুর : অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আর তার জেরেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়ে জয়। শারীরিক ও আর্থিক...দুই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়েই প্রাথমিক জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) মহম্মদ আলম (Md. Alam)। এবার মাধ্যমিকে ৬২৫ নম্বর পেয়ে এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। এবার তার লক্ষ্য, বিজ্ঞানী হওয়া। যে লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য তাকে উজ্জীবিত করছে মাধ্যমিকের ফলাফল। কিন্তু, রয়েছে অন্য অন্তরায়।
মহম্মদ আলমের সাফল্য-
শরীরের অর্ধেক অংশই আর পাঁচজনের মতো কাজ করে না। তা সত্ত্বেও হার না মেনে লড়াইটা চালিয়ে গেছে। আর তার জেরে মাধ্য়মিকে তার মোট প্রাপ্ত নম্বর ৬২৫। বিষয়ভিত্তিক নম্বর- বাংলায় ৯১, ইংরেজিতে ৮৬, অঙ্কে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৪, জীবনবিজ্ঞানে ৭৭, ইতিহাসে ৮৪, ভূগোলে ৯৫। নিজের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ সে পার করে ফেলেছে। এবার লক্ষ্য পূরণের আশা। শুধু তো শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নয়; ছোট থেকেই দরিদ্র সংসারে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এসেছে। তবে কোনও বাধাই বাধা হতে দেয়নি আলম। পাশে ছিলেন বাবা- মা, বন্ধুরা। আলম বলছে, “মনের জোরটাই আসল। আমি আরও ভাল ফল আশা করেছিলাম। আব্বা - মা, আমার শিক্ষকরা সবাই আমায় অনেক সাহায্য করেছেন। আমি তো একা কিছুই করতে পারি না।”
আলমের মা জানিয়েছেন, ছেলেকে এখনও খাইয়ে দিতে হয়। বইপত্র এগিয়ে দিতে হয়। কিন্তু ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ভীষণ আগ্রহ। কোনওদিন স্কুল যাওয়া বন্ধ করেনি। ওর বাবা ওকে বেশিরভাগ দিন সাইকেল করে দিয়ে আসত। কোনওদিন আটকে রাখলে কান্নাকাটি করত স্কুলে যাওয়ার জন্য!”
আলম পা দিয়ে লেখে। বেশি ক্ষণ নিচু হয়ে লেখা বা পড়া সম্ভব নয়। বেশি ক্ষণ ঘাড় ঝুঁকিয়ে পড়াশোনা করলে শিরদাঁড়ায় শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। তবুও তাঁর ইচ্ছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার। চোখে স্বপ্ন, বিজ্ঞানী হওয়ার, গবেষণা করার। নিজের দেশের জন্য, জেলার জন্য কিছু করার। আলম অবসর সময়ে গল্পের বই পড়ে। কবিতা লেখে। বিজ্ঞানের পাশাপাশি সাহিত্যপ্রেমীও সে। পা দিয়েই ছবিও আঁকে। সেই ছবি প্রদর্শিত হয় বহরমপুরের সম্মেলনে।
আলমের বাবা পেশায় মুদি ব্যবসায়ী, মা গৃহবধূ। আর রয়েছে দুই ভাইবোন। অভাবের সংসার। তবুও ছেলের স্বপ্ন পূরণে কোনও খামতি রাখেনি বাবা ও মা। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আলমের মা নিজেই পড়িয়েছেন। কিন্তু তারপরে দুই গৃহশিক্ষক দিতে হয়েছিল। ছেলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে আলমের মায়ের গলা যেন বন্ধ হয়ে আসছিল কান্নায়। তবে এটা আনন্দের অশ্রু। আলমের সাফল্যে খুশি তার পরিবার, বন্ধু বান্ধব সকলে। আলম বলে, আমি তো কিছু করতে পারি না। স্কুলে আমায় টিফিন খাইয়ে দেওয়া, জল দেওয়া, বই বের করে দেওয়া, সবই আমার বন্ধুরা করত ! স্যাররাও আমায় খুব সাহায্য করেছেন।”
তবে বর্তমানে আলমের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা, তার স্বপ্ন পূরণ। কারণ ওই গ্রামে ভাল স্কুল নেই। পড়তে হলে আসতে হবে শহরের স্কুলে। কীভাবে ছেলের স্বপ্ন পূরণ হবে চিন্তায় বাবা-মা। এই পরিস্থিতিতে ছেলের স্বপ্ন যাতে পূরণ হয় তার জন্য সরকারের কাছেও আবেদন জানাচ্ছেন তাঁর বাবা-মা। এবার দেখার পালা আলম নিজের স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারে!