International Women's Day 2024 : 'হাল ছাড়ব না, পারতে আমাকে হবেই', অসুস্থ মা-দাদাকে সামলে ভাগ্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুজাতা
Sujata Saha : তাঁর জীবনের লড়াই যে কতটা কঠিন তা চাক্ষুষ করলে চোখে জল আসবে সকলের।
সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ : ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, মাতঙ্গিনী হাজরা হোক কিংবা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার বা মহাকাশচারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রয়াত কল্পনা চাওলা। সব যুগেই সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এসেছেন ভারতীয় নারীরা। যে ধারা আজও অব্যাহত। জীবন বাজি রেখে 'যুদ্ধে' এগিয়ে যেতে পিছপা হননি এঁরা। আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এমনই এক নারীর কথা এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যিনি অভাব অনটন সহ হাজার প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন সমানে।
নাম সুজাতা সাহা। যার অর্থ- সুন্দর। মেয়ের জীবনকে সৌন্দর্য্যে ভরিয়ে তুলতে অনেক শখ করেই বাবা-মা নামটি রেখেছিলেন। রায়গঞ্জ শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দা সাহা পরিবারের একমাত্র মেয়ে সুজাতা। বাড়ির ছোট মেয়ে, বড় আদুরে। আজ ভাগ্যের জাঁতাকলে সেই আদুরে মেয়েই পুরো পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে হয়ে উঠেছেন 'দশভূজা'। পরিবারে একদিকে চরম অনটন, অপরদিকে দু-দু'টি অসুস্থ মানুষ। এ যেন 'অগ্নীপরীক্ষা'। চলতে চলতে মন-শরীর দুইই ভেঙে আসে। কিন্তু না, থামলে তো চলবে না।
তাঁর জীবন বিলাসিতায় কাটানোর নয়। তাই সামনের দিকে এগিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। যুদ্ধ জয় করতেই হবে। সাফল্য আনতে সবরকমভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। আমরা আজ নারী দিবসে পৌঁছে গিয়েছিলাম সুজাতার বাড়িতে। তাঁর জীবনের লড়াই যে কতটা কঠিন তা চাক্ষুষ করলে চোখে জল আসবে সকলের।
পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধা মা ও এক দাদা। ২৬ বছর আগে বাবা প্রয়াত হয়েছেন। বাবার মৃত্যুর পর মা টুকটাক সেলাই, এদিক ওদিকে কাজ করে উপার্জন করতেন। সুজাতা টিউশন করতেন। দাদাও সামান্য রোজগার করতেন। মোটামুটি ভালই চলছিল। কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হল না। মায়ের শরীরে বাসা বাঁধল ক্যানসার। দাদা স্নায়ু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লেন বিছানায়। ব্যাস, তারপরই অথৈ জলে সংসার। একদিকে মা ও দাদার চিকিৎসা, অন্যদিকে সংসারের খরচ, বাড়ির কাজকর্ম। সব দায়িত্ব গিয়ে পড়ল সুজাতার কাঁধে। জীবনটা যেন স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে চলতে লাগল।
প্রথমে কিছুটা ভেঙে পড়লেও। মনে অদম্য জোর নিয়ে লড়াইয়ের ময়দানে নেমে পড়লেন তিনি। একা হাতে সবটা সামলে চলেছেন। তাঁর একটাই বক্তব্য, "কঠিন লড়াই হলেও হাল ছাড়ব না। পারতে আমাকে হবেই।"
মেয়ের এমন লড়াই দেখে তাঁর মা দীপিকা সাহাও মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। সব মায়েরাই যখন স্বপ্ন দেখেন মেয়েকে সুখের জীবন দিতে, তখন সুজাতা যে পিছিয়ে যাচ্ছেন। তা ভাবতেই চোখে জল আসে মায়ের। দীপিকা দেবী জানান, শরীরে একটি ফোঁড়া থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত হন তিনি। কলকাতায় ২টো কেমো নিয়েছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না। ছেলেরও চিকিৎসা চলছে। মা ছেলে দু'জনই এখন বিছানায়। তাই মেয়ে টিউশন, বাড়ি বাড়ি জিনিসপত্র ডেলিভারি, টুকটাক কাপড় বিক্রি করে খরচ জোগাচ্ছেন।
কিন্তু এ লড়াই কতদিন চলবে তা জানা নেই তাঁদের। তাই সাহায্যের আর্তি জানিয়েছেন সুজাতার মা। সুজাতার এই কর্মকাণ্ডে হতবাক তাঁর প্রতিবেশীরাও। একজন মেয়ে হয়ে এমন লড়াই করে সংসারকে বাঁচিয়ে রাখা, এ সত্যিই অকল্পনীয়। প্রতিবেশীরা জানান, সামান্য পয়সায় ২ জনের চিকিৎসা, তারপর সংসার চালানো দুঃসহ। তাই সকলের কাছে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানালেন প্রতিবেশীরা।
আজ ৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। যুগে যুগে নারীরা যেভাবে সমাজ গড়ার কাজ করে চলেছেন, তাতে সুজাতার এই কর্মযজ্ঞ যে অনুপ্রেরণা জোগাবে, তাই নিঃসন্দেহে বলাই যায়।