Jyotipriya Mallick: 'দুর্নীতির কথা জানতেন জ্য়োতিপ্রিয়, স্বীকারও করেছেন', রিপোর্টে দাবি ইডির
Ration Scam:কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জ্যোতিপ্রিয় খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি, উল্টে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
প্রকাশ সিনহা, কলকাতা: রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জেরায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডির পেশ করা রিপোর্টে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। সূত্রের খবর, আদালতে পেশ করা রিপোর্টে ইডি দাবি করেছে 'খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর দফতরে রেশন বণ্টনে দুর্নীতির কথা জানতেন বালু'। এমনটা নাকি জেরায় স্বীকার করেছেন খোদ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
আর কী বলা হয়েছে রিপোর্টে?
ব্যাঙ্কশাল আদালতে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে ইডি, তাতে দাবি করা হয়েছে, 'চালকল-গমকল মালিক থেকে শুরু করে ডিলার, ডিস্ট্রিবিউটরদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। এফআইআর দায়ের থেকে সিআইডি তদন্ত, খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সবই গোচরে ছিল জ্যোতিপ্রিয়র। গত ৩১ অক্টোবর জেরায় স্বীকার করেছেন ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।'
দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলেও অভিযোগ এনেছে ইডি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, জ্যোতিপ্রিয় খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি, উল্টে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি জানতেন রেশনে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মিল মালিক, রেশন ডিস্ট্রিবিউটর, রেশন ডিলার, কো অপারেটিভ সোসাইটি এবং একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাও গোচরে ছিল তাঁর! তিনি এও জানতেন যে, সেইসব দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত পুলিশ এমনকি CID-এর হাতেও রয়েছে। রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত ও প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে এরকমই দাবি করে আসছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। এবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে ৬৫ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়ে এমনই জানাল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আর এখানেই তদন্তকারীদের প্রশ্ন, দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সবই যখন জানতেন, তাহলে সেইসময়ই কেন কোনও পদক্ষেপ করলেন না তিনি? তা হলে তো যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তা শুরুতেই ঠেকানো সম্ভব হত!
রেশন দুর্নীতি মামলায় তৃণমূল পরিচালিত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে গ্রেফতারের পরে ইডি সূত্রে দাবি করা হয়, রেশন দুর্নীতির অঙ্কটা প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা শুধু দুবাইয়েই পাচার করা হয়েছে। কিন্তু কী করে এতবড় দুর্নীতি হল? কোথায় ছিল প্রশাসনের নজরদারি?
জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীনই, রেশন দুর্নীতিতে একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে নদিয়া ও কলকাতায় বেশ কয়েকটি FIR দায়ের হয়। প্রথমে পুলিশ ও পরে CID-ও সেই মামলায় তদন্তও শুরু করে!এই প্রেক্ষাপটে আদালতে জমা দেওয়া ইডি-র রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে,গত বছরের ৩১ অক্টোবর, জেরার মুখে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, রেশনে যে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তা তিনি জানতেন।
রেশন দুর্নীতির তদন্তে এর আগে কখনও ইডি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নির্দেশেই টাকা তুলতেন তাঁর প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক! আবার কখনও দাবি করা হয়েছে, প্রতি কুইন্টাল ধান পিছু কমিশন নিতেন বালু! সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় এজেন্সির এখানেই প্রশ্ন, খাদ্যমন্ত্রীর পদে থেকে রেশন বণ্টনে দুর্নীতির কথা জেনেও এইসব কারণেই কি কোনও পদক্ষেপ করেননি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক? আদতে নিষ্ক্রিয় থেকে পরোক্ষে কি তিনি দুর্নীতিকেই সমর্থন করেছেন? রেশন বণ্টন দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার পিছনে কি জ্যোতিপ্রিয়রই নির্দেশ ছিল? কি এর পিছনে আরও বৃহত্তর কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে? ইডি সূত্রে দাবি, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে যখন এই প্রশ্ন করা হয়, তখন তিনি জানান যে, পুলিশ তদন্ত করছিল বলেই তিনি এ নিয়ে আলাদা করে আর কোনও পদক্ষেপ নেননি। যদিও ইডি সূত্রে দাবি, নদিয়া ও কলকাতায় রেশন দুর্নীতি নিয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও, ওপর ওপর দায়সারা তদন্ত করে চার্জশিট দিয়ে দেওয়া হয়েছে! দুর্নীতির গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি!