Nawsad Siddique Exclusive: বার বার অভিষেককে হারানোর হুঙ্কার, অথচ ডায়মন্ড হারবার নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি? যা বলছেন নৌশাদ
Diamond Harbour Constituency: এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন নৌশাদ।
ঊজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: নির্বাচনী নির্ঘণ্ট প্রকাশের আগেই রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে দেয় তৃণমূল। জোড়াফুলের তরফে আবারও ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখে তাঁকে বার বার হারানোর কথা বললেও, এখনও পর্যন্ত না BJP, না CPM, না কংগ্রেস, না ISF, কেউই এখনও পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী দিতে পারেনি। অভিষেকের বিরুদ্ধে ডায়মন্ড হারবারে লড়ার কথা বললেও, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা নিয়ে বর্তমানে ISF বিধায়ক নৌশাদ সিদ্দিকি (Nawsad Siddique) কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘাত দেখা দিয়েছে তাঁর। এমন পরিস্থিতিত এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন নৌশাদ। (Diamond Harbour Constituency)
এদিন নৌশাদকে প্রশ্ন করা হয়-
প্রশ্ন: শেষ পর্যন্ত তাহলে বামেদের সঙ্গে জোট হল না?
নৌশাদ: আজকের রাত পর্যন্ত অপেক্ষায় আছি। এখনও পর্যন্ত আশা করছি জোট হবে। ছাড়তে ছাড়তে আমরা সাতে এসে পৌঁছেছি। আশা করব বামেরা এবার এগিয়ে আসবেন। বারাসাত, বসিরহাট, দমদম, ব্যারাকপুর, বনগাঁ, পাঁচটির মধ্যে দু'টি চেয়েছি আমরা।
প্রশ্ন: তিনটি দল একসঙ্গে লড়লে সংখ্যালঘু ভোটটা এলে তো আপনারা জিততে পারেন?
নৌশাদ: সর্বপ্রথম তো আমরাই বলেছি। I.N.D.I. জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসে একসঙ্গে লড়তে বলেছিলাম।
প্রশ্ন: আপনাদের ভোট কাটুয়া বলবে না কি? রাজনীতিতে এই শব্দটির প্রচলন রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীকে ভোট কাটুয়া বলা হয়। ISF-এর গায়ে যদি এই তকমা লাগে?
নৌশাদ: ISF যদি সেই কাজ করে, গায়ে লাগবে!
প্রশ্ন: এই মুহূর্তে যদি ১৫-২০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে BJP-কে সুবিধা করে দেন, তাহলে যদি আপনাদের ভোট কাটুয়া বলে?
নৌশাদ:১৫-২০-২৭টাও হতে পারে। সেটা সময় কথা কথা বলবে। আমাদের দল ঠিক করবে।
প্রশ্ন: ডায়মন্ড হারবারে না দাঁড়ানোর নেপথ্যে কি তৃণমূলের প্রভাব রয়েছে?
নৌশাদ: আমরা ভোট কাটি না, বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই। BJP-র থেকে টাকা নিয়ে নাকি দল চালাচ্ছি আমরা! কিছু তৃণমূলী বন্ধুরা একথা ছড়াচ্ছে। তাদের বলব, গোপনে নয়, প্রকাশ্যে টাকা নেব বিজেপি-র থেকে, তার ৯০ শতাংশ তোমাকে দিয়ে দেব। তুমি লাইনটা করে দাও।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক ভাবে চর্চা শুরু হয়েছে যে নৌশাদের সঙ্গে BJP-র বোঝাপড়ার কারণেই বামেদের সঙ্গে নাকি জোটে যাচ্ছে না ISF?
নৌশাদ: না। প্রমাণ আমি দিচ্ছি। BJP কোনও ভাবেই আমার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে পারে না। BJP আমার কাছে হার্ড, সেই তুলনায় তৃণমূল অনেক সফ্ট। আমাকে কেনার চেষ্টাও করেছিল। কী অফার করেনি? টাকার অঙ্ক আপনারাও জানেন। তৃণমূল যেখানে পারেনি, BJP পারবে?
প্রশ্ন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাতে আপনার উপর ক্ষুব্ধ না হন, তাই নাকি আপনি ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হতে চাইছেন না?
নৌশাদ: অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়কে খুশি করে আমার লাভ কী? যাদের জন্য় ভাঙড়ে আমাদের কর্মীরা খুন হয়েছেন, আমি ৪২ দিন জেল খেটেছি, আমাদের কর্মীদের নামে মিথ্যে মামলা হয়েছে, হেনস্থা করা হয়েছে, আমাদের মহিলা কর্মীরা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন, বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছে, বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ভেঙে পুকুর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের সেকেন্ড বস অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দুঃখ, খুশি নিয়ে আমি ভেঙে পড়ি না।
কিন্তু নৌশাদ নিজেই যেখানে একসময় ডায়মন্ড হারবার থেকে প্রার্থী হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিলেন, এখন কেন সেখান থেকে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা করছেন না তিনি? জোটে থেকে বাম-কংগ্রেসই বা সেখানে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি। বরং নৌশাদের কোর্টেই বল ঠেলেছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে নৌশাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই নিয়েও প্রশ্ন করা হয় নৌশাদকে।
প্রশ্ন: কেন ডায়মন্ড হারবার থেকে ঘোষণা করছেন না?
নৌশাদ: শুধু ডায়মন্ড হারবারেই কেন আপসে এত আগ্রহ? বাকি সাতটি আসনে কেন আপস করছে না বাম-কংগ্রেস? কংগ্রেস শ্রীরামপুরে আটকে রয়েছে। কথা হয়েছিল, শ্রীরামপুর এবং যাদবপুরে প্রার্থিঘোষণা স্থগিত রাখার। সবার আগে আমরা বলেছি। I.N.D.I. জোট থেকে বেরিয়ে এসে একসঙ্গে লড়াইয়ের কথা বলেছিলাম।
প্রশ্ন: বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে যে রসায়ন তৈরি হয়েছিল, সেটা আপনি কি নিজেহাতে ভেঙে দিলেন, আলাদা লড়াইয়ের কথা ভাবছেন আপনারা?
নৌশাদ: বাম-কংগ্রেস চায়নি, কংগ্রেস তো শুরু থেকে চাইছে না! গোড়ায় বামেদের কিছুটা মনোভাব থাকলেও, তারাও চাইছে না এ রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি-র বিরুদ্ধে অবিজেপি-অতৃণমূল শক্তি একসঙ্গে লড়াই করুক। যদি তারা চাইত, তাহলে আজ ISF-কে ১৪ থেকে সাতে নামাত না। তাদের সম্মানজনক জায়গায় রেখে জোটটা তৈরি করত।
আগামী ১ জুন ডায়মন্ড হারবারে ভোটগ্রহণ। কিন্তু এখনও সেখানে প্রার্থী দিতে পারেনি কোনও বিরোধী দলই। সিপিএম-এর একটি অংশ বলছেন, ১ জুন আসতে এখনও দেরি আছে। তার আগে তৃণমূল এবং বিজেপি-র বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস এবং ISF-কে একছাতার তলায় আনার চেষ্টা চলছে। কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, ডায়মন্ড হারবার নিয়ে কার্যতই দায় ঠেলাঠেলি চলছে। একদিন আগেও সিপিএম-এর রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, নৌশাদ ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হলে তাঁরা খুশিই হবেন। নৌশাদের হয়ে প্রচারেও যাবেন তাঁরা। সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলেও জানান সেলিম। কিন্তু নৌশাদের তরফে এ নিয়ে কোনও সাড়া মিলছে না বলে খবর। নিজে অভিষেকের বিরুদ্ধে লড়ার কথা বলে এখন কেন উচ্চবাচ্য় করছেন না নৌশাদ, প্রশ্ন তুলছে বাম-কংগ্রেস। ফলে ডায়মন্ড হারবার নিয়ে জোটের জট এখনও অব্যাহত।