Rekha Birthday:শ্যামবর্ণা, ভারিক্কি চেহারার কিশোরী থেকে মোহময়ী নায়িকা, রহস্যের রূপান্তরণ ভানুরেখা গণেশনের
Actress Rekha Birthday: তিনি যে একদিন 'উমরাওজান' হয়ে জাতীয় পুরস্কার জিতবেন, বলিউডের 'গ্রেতা গার্বো' হয়ে উঠবেন, তা কি জানা ছিল মুম্বইয়ের? ভানুরেখা গণেশন নিজেও কি জানতেন?
পায়েল মজুমদার, কলকাতা: লম্বা, ফর্সা, ছিপছিপে নায়িকাদের এমন রমরমার মধ্যে শ্যামবর্ণা, ভারিক্কি চেহারা নিয়ে কোন আক্কেলে মুম্বই এলে? কখনও স্পষ্ট, কখনও ঠারেঠোরে কঠিন কথাটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিশোরীকে। হায় রে মুম্বই (Bollywood Diva hanurekha Ganesan AKA Rekha) ! যাকে সে দিন দূরে ঠেলেছিলে, সেই তিনি যে একদিন 'উমরাওজান' হয়ে জাতীয় পুরস্কার জিতবেন, বলিউডের 'গ্রেতা গার্বো' হয়ে উঠবেন, পরনের চোখধাঁধানো কাঞ্জিভরমের মতো রহস্যময় জীবনকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরবেন, তা কি জানা ছিল তোমার? ভানুরেখা গণেশন (Rekha Birthday) নিজেও কি জানতেন?
ছোটবেলা...
ভানুরেখা জেমিনি গণেশন। জন্মসূত্রে পাওয়া রেখার এই নামটি এখনও ইন্টারনেট ঘাঁটলে পাওয়া যাবে। সঙ্গে পাওয়া যাবে শৈশবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আলো-আঁধারির বহু তথ্য়। ১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর তামিল পরিবারে জন্মায় এক কন্যাসন্তান। বাবা জেমিনি, বিখ্যাত তামিল চিত্রতারকা। মা, পুষ্পাভাল্লি আবার তেলুগু অভিনেত্রী। তারকা-পরিবারে জন্ম, সাধারণ নিয়মে শৈশব সুখেরই হওয়ার কথা। কিন্তু হয়নি। গনেশন পরিবারের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, রেখা ও তাঁর ছোট বোনকে মানতেই চাননি জেমিনি। শোনা যায়, পুষ্পাভাল্লির সঙ্গে বিয়ের আগে থেকেই বিবাহিত ছিলেন তামিল চিত্রতারকা। সব মিলিয়ে সম্পর্কের টানাপড়েন সেই শৈশব থেকে দেখতে শুরু করে খুদে ভানুরেখা। শুধু তাই নয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে 'রংগুলা রতনম' নামে এক তেলুগু ছবিতে অভিনয় করতে হয়েছিল কিশোরীকে। বলা ভাল, বাবা-ই মেয়েকে অভিনয়ে বাধ্য করেছিলেন। মা তখন জুয়ার নেশায় সর্বস্বান্ত। বাবা কানাকড়িও সাহায্য করেন না। পরিবারের হাল ধরতে 'লাইটস, ক্যামেরা, অ্যাকশন, কাট'-এর জগতে পাকাপাকিভাবে চলে আসে কিশোরী রেখা। ১৫ বছর বয়সে কন্নড় ছবি Operation Jackpot Nalli C.I.D 999-তে পূর্ণবয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করে সে। কিন্তু এখানে থামলে চলবে না, এর পরের লক্ষ্য মুম্বই। জোর করে বড় হয়ে যেতে হয় কিশোরীকে। সেই যন্ত্রণা, কষ্ট কে জানত ?
অতঃ বলিউড...
১৯৭০ সালে 'সাওয়ান ভাদো'দিয়ে বলিউডে প্রথম আত্মপ্রকাশ রেখার। ফিল্ম হিট, কিন্তু নবাগতা অভিনেত্রী কার্যত হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়িয়েছেন সর্বত্র। শ্যামবর্ণা, ভারিক্কি চেহারা, তার উপর হিন্দি বলতে পারেন না! ইনি মুম্বইয়ে এলেন কী ভাবে? আজ শুনতে অবাক লাগে? কিন্তু সত্তরের দশকে বডিশেমিং-বিরোধী, বর্ণবৈষম্য-বিরোধী আন্দোলন কোথায়? শুধু তাই নয়। শোনা যায়, এই ছবির আগে আরও একটি হিন্দি ছবির শ্যুটিং করেছিল কিশোরী রেখা। সেই শ্যুটিংয়ে সমসাময়িক এক বিখ্যাত নায়ক তাকে হেনস্থা করেছিলেন, প্রকাশ্যে, শ্যুটিং সেটে। আজকের দিন হলে, #metoo থেকে বাঁচতে পারতেন? প্রশ্ন থেকে যায়। রেখা অবশ্য সেই সময় সমস্ত হেনস্থা, খোরাক সহ্য করে একের পর এক কাজ করে গিয়েছেন। ফিল্ম হিট করেছে। খোরাক হওয়া, বিতর্ক, বন্ধ হয়নি।
তাতে কী? আশৈশব যিনি লড়তে শিখেছেন, তিনি ময়দান ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন তাও কি হয়? ফিরে আসবেন। তবে কথা নয়, কাজ দিয়ে।
দুরন্ত রেখা...
যোগব্যায়াম, হিন্দি প্রশিক্ষণ, পাশাপাশি অভিনয়ের খুঁটিনাটির দিকে নজর। ওজন ঝরানো, মুম্বই বিনোদন দুনিয়ার জন্য নিজের ভাষাগত শিক্ষা বাড়ানো ও অভিনয়ের মান উন্নত করা, মন দিয়ে তিনটি কাজ করার চেষ্টা করে গেলেন রেখা। ফল? একের পর এক বক্স অফিস হিট ছবি। যেমন ধরুন, নাগিন (১৯৭৬), মুকদ্দার কা সিকন্দার (১৯৭৮), মিস্টার নটওয়রলাল (১৯৭৯), খুবসুরত (১৯৮০), উমরাও জান (১৯৮১), খুন ভরি মাঙ্গ (১৯৮৮)। এর মধ্যে উমরাও জান (১৯৮১) ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পান তিনি। একসময়ে সমালোচকদের লাগাতার বিরূপ মন্তব্যের মুখে পড়া, সেই ভানুরেখা গনেশনকে কুর্নিশ জানায় বলিউড। মোহময়ী চোখের আবেদনে ভেসে যায় কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী। স্রেফ সৌন্দর্য নয়, তাঁর অভিনয়ের রেঞ্জ-ও যে অনন্য, সেটাও বুঝিয়ে দেন। কোথাও তিনি হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের 'খুবসুরত'ছবির নিয়নকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখানো তরুণী মঞ্জু দয়াল, কোথাও আবার, গিরিশ কারনাড পরিচালিত 'উৎসব' ছবির প্রতিভাময়ী গানেওয়ালি, বসন্তসেনা।
ব্যক্তিগত জীবন...
অভিনয়ের রেঞ্জ তাঁর যতটা ছড়ানো, ব্যক্তিগত জীবন ঠিক ততটাই রহস্যে ঢাকা। কখনও শোনা যায়,তিনি বিনোদ মেহরাকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু অভিনেতার মা তাঁকে মানতে পারেননি। তাই সেই বিয়ে প্রকাশ্যে আসেনি। কখনও আবার অভিনেতা কিরণ কুমারের সঙ্গেও নাম জড়িয়েছে তাঁর। তবে বলিউডে যদি কোনও ত্রিকোণপ্রেমের আখ্যান এখনও রহস্যে ঘেরা থাকে, তা হলে তার শুরু অবশ্যই সিলসিলা ছবির সেটে। শোনা যায়, অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল রেখার। এমনকি গোপনে বিয়েও করেন তাঁরা। কিন্তু অমিতাভ-পত্নী জয়া বচ্চনের কারণে সে সম্পর্কে ইতি পড়ে।
সত্য়িটা ঠিক কী? অমিতাভের প্রতি মুগ্ধতার কথা ঘটা করে সিমি গ্রেওয়ালের শোয়ে স্বীকার করেছিলেন অভিনেত্রী। কিন্তু সঙ্গে রহস্যের খাসমহল তৈরি করেছিলেন। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, অমিতাভে মুগ্ধ নন, এমন মহিলা আছেন কি? শুধুই কি সেই মুগ্ধতা ছিল তাঁর? নাকি আরও কিছু? জানা নেই। জানা যাবে না। ওখানেই অদৃশ্য দেওয়াল তুলে দিয়েছেন বলিউডের গ্রেতা গার্বো। তবে বিয়ে যে তিনি করেছিলেন, সেটা মানেন। ১৯৯০ সাল। দিল্লির ব্যবসায়ী মুকেশ আগরওয়ালের সঙ্গে বিয়ে হয় রেখার। কিন্তু অদ্ভুত। সে বিয়েও টেঁকেনি। আত্মঘাতী হন মুকেশ। রেখা তখন লন্ডনে।
এমন কী হল? জানা নেই। লোকমুখে অনেক কিছু শোনা যায়। কিন্তু সত্যি কি? জানা নেই, বা হয়তো জানা। যিনি জানেন, তিনি এই ৬৯ বছরেও লাস্যময়ী, রহস্যে ঘেরা। বান্দ্রা(ওয়েস্ট)-এর বাংলোয় একাকী থাকেন। আরব সাগরের ঢেউ গোনেন। তিনি ছাড়া শুধু সে-ই ঢেউ-উ জানে, ভানুরেখা থেকে রেখার রূপান্তরণ।