Soumitra Chatterjee Death: ‘ওই তো দিল্লি গিয়েছিলাম দাদাসাহেব ফালকেটা আনতে, যেন বাজার করে ফিরলেন!’ ‘সৌমিত্রকাকু’-র স্মৃতি ভীড় করছে মুকুলের মনে
‘সোনার কেল্লা’ থেকে ‘সমান্তরাল’, প্রায় ৪৫ বছরের সম্পর্ক ‘ফেলুদা’ আর ‘মুকুল’-এর। আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর শোনবার পর থেকে অজস্র স্মৃতি ভীড় করে আসছে কুশল চক্রবর্তীর মনে।
কলকাতা: ‘হঠাৎ ফোন, শুনলাম সৌমিত্রকাকুকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে। তখন একটু রাত হয়েছে। দেখে মনে হল, ওনার শরীরটা ভালো নেই। জিজ্ঞাসা করায় উনি বললেন, দিল্লি গিয়েছিলাম, ফ্লাইট লেট ছিল। শ্যুটিং ছিল? সৌমিত্রকাকু বললেন, না না, ওই দাদাসাহেব ফালকে আনতে গিয়েছিলাম। বলার ভঙ্গি এমন, যেন বাজার করে ফিরলেন। এমনই সাদামাটা মানুষ ছিল সৌমিত্রকাকু।’ এক নিঃশ্বাসে ঘটনাটা বলে থামলেন কুশল চক্রবর্তী। ‘সোনার কেল্লা’ থেকে ‘সমান্তরাল’, প্রায় ৪৫ বছরের সম্পর্ক ‘ফেলুদা’ আর ‘মুকুল’-এর। আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবর শোনবার পর থেকে অজস্র স্মৃতি ভীড় করে আসছে অভিনেতার মনে।
একবার ‘এবং তুমি আর আমি’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল কুশল আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কমেডি ছবিতে অভিনয় করতে কুশল বললেন, ‘আমি সৌমিত্রকাকুকে বলেছিলাম, কমেডি চরিত্রে অভিনয় করার অভিজ্ঞতা তো আমার নেই। আমায় বললেন, একদিন ফোন করে বাড়ি চলে আয়। যেদিন গেলাম, আমায় আড়াই ঘণ্টা ধরে সমস্ত খুঁটিনাটি শিখিয়েছিলেন সৌমিত্রকাকু। শেষে আমায় মজা করে বলেছিলেন, আমার চুলটা যদি এখন তোর মতো থাকত, পাঠটা আমিই করতাম।’
কখনও নিন্দা পছন্দ করতেন না সৌমিত্র। আড্ডায় কথা উঠলে এড়িয়ে যেতেন পূর্ব কথা। কুশল বলছেন, ‘যে কোনও বিষয়েই গল্প জমিয়ে দিতে পারতেন সৌমিত্রকাকু। কিন্তু কখনও কারও নামে খারাপ কথা বলতে চাইতেন না। প্রসঙ্গ উঠলে বলতেন, ওইসব আগের কথা ছেড়ে দাও।’
মানুষ কুশলকে মনে রেখেছে ‘মুকুল’ হিসাবে। রুপোলি পর্দায় যে চরিত্রের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। জীবনের প্রথম সিনেমায় সত্যজিৎ রায়-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় যুগলবন্দির সাক্ষী। ‘সত্যজিতের ফেলুদা’র প্রয়াণে ‘মুকুল’ মর্মাহত। সৌমিত্রর সঙ্গে সোনার কেল্লা-য় অভিনয়ের কথা ভেবে এখনও রোমাঞ্চিত হন কুশল। যদিও শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা খুব একটা মনে পড়ে না। কুশল বলছেন, ‘সোনার কেল্লার শ্যুটিংয়ের সময়ে আমি অনেকটা ছোট। মাত্র ৫-৬ বছর বয়স তখন। তাই স্পষ্টভাবে মনে পড়ে না শ্যুটিংয়ের খুঁটিনাটি। তবে আমার সঙ্গে সৌমিত্রকাকু যে খুব গল্প করতেন, তা বেশ মনে আছে।’
মুকুলকে চিরকালই স্নেহের চোখে দেখতেন ফেলুদা। কুশলের মনে পড়ছে, ’একসঙ্গে শ্যুটিং থাকলে কখনও আমায় না বলে বাড়ি যেতেন না। প্যাক আপের পর বলে যেতেন, আমি বাড়ি যাচ্ছি, কাল তোর সঙ্গে আবার দেখা হবে তো?’ ‘সৌমিত্রকাকু’-র সঙ্গে সত্যিই আর দেখা হবে না! মানতে পারছেন না কুশল।