"একটা দৃশ্য থেকে বেরোলেন, আবার একটা দৃশ্যে দেখা হবে," স্বাতীলেখার স্মৃতিচারণায় দেবশঙ্কর
ওঁর সম্বন্ধে স্মৃতিচারণা করতে হবে, এটাই তো ভাবতে পারিনি কোনওদিন, বললেন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার
কলকাতা: প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্ব স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। দীর্ঘদিন কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এদিন তাঁর স্মৃতিচারণায় অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার বলেন, "সবটাই তো বিশেষ। কখনও স্মৃতিচারণা করতে হবে ভাবিনি। ওঁর সঙ্গেই আমার বেড়ে ওঠা। অভিনয় জীবন শুরু হয়েছে ওঁর সঙ্গে। নান্দীকারে যখন অভিনয়ের জন্য প্রথম পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম, সেই পরীক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। আমার শিক্ষিকা ছিলেন উনি। একসঙ্গে একাধিক অভিনয় করেছি। অভিভাবক ,আত্মীয়, বন্ধু ছিলেনষ সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে ওঁর পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছি। কীভাবে যে এত স্মৃতি বলব।"
তাঁর কথায়, "নাটকে যখন দুটি মানুষ পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া করে, আদর করে, ঝডগড়া করে, ভালবাসে, রাগ করে সেটা জীবনের থেকেও সত্য। জীবনের থেকেই সেই সব নির্যাস নিয়ে প্রকাশ করে। ওঁর সঙ্গে পরিচয় এত সুদৃঢ়, এত রক্ত মাংসের, উনি যে চলে গেলেন সেটা মনে হচ্ছে একটা নাটক চলছে তার দৃশ্য থেকে বেরোলেন। সাজ ঘরে বিশ্রাম নেবেন, মেকআপ ঠিক করে নেবেন, আবার একটা অন্য দৃশ্যে দেখা হবে। জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন। উনি বেহালা, পিয়ানো বাজাতে পারতেন। আবার ইংরাজি, হিন্দি বলতে পারতেন ভাল, তেমনই বাংলা ভাষাতে নাটকও করতেন। শেখবার জন্য অসম্ভব ভাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো।"
আজ, বুধবার হাসপাতালেই প্রয়াত হন স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। বিগত ২৫ দিন ধরে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। আজ দুপুরে হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন স্বাতীলেখা। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিন কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
নাট্যমঞ্চ এবং সিনেমা, দুই মাধ্যমেই তাঁর অভিনয় সম্বৃদ্ধ করেছে বাংলার শিল্পকলাকে। সাতের দশকে এলাহাবাদে নাট্যমঞ্চে তাঁর অভিনয়জীবন শুরু। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী স্বাতীলেখা কলকাতায় আসার পর ১৯৭৮ সালে যোগ দেন নাট্যদল নান্দীকারে। অভিনয়ের পাশাপাশি নাট্যমঞ্চে সঙ্গীতউপস্থাপনার গুরুদায়িত্বও তিনি নিজের কাঁধে নিয়েছিলেন। সত্যজিত রায়ের পরিচালনায় ‘ঘরে বাইরে’-তে বিমলার চরিত্রে তাঁর অভিনয় ভোলার নয়। নাট্যমঞ্চে পাঞ্চজন্য, বিপন্নতা, নাচনী, অযত্নবাস, পাতা ঝরে যায়-এর মতো বহু নাটকে তাঁর অভিনয় অবিস্মরণীয়।