Kali Puja 2021 Exclusive: শিবপুরে রায়চৌধুরী পরিবারে দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজোয় অত্যাচারী সাহেবদের রূপক হিসেবে হত সাদা পাঁঠা বলি !
Shibpur Roy Chowdhuri Family Kali Puja : ' সাদা পাঁঠা ছিল অত্যাচারী ব্রিটিশ সাহেবদের রূপক ! মা লক্ষ্মী ধনসম্পত্তি, শ্রীবৃদ্ধির দেবী। ব্রিটিশ-বিদায় না হলে দেশের উন্নতি হবে কী করে ? সেই ভেবেই বলি '
হাওড়া : ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি। শিবপুরে তখন রায়চৌধুরী পরিবারের প্রতিপত্তিই আলাদা। জমিদার রাজা রামব্রহ্ম রায়চৌধুরীর মেয়ের খেলার সাথী হিসেবে দর্শন দিয়েছিলেন দেবী দুর্গা। স্বপ্নে এসে বলেছিলেন পুজো করার কথা। সেই ১৬৮৫ সাল (মতান্তরে ১৬৮১ সালে) থেকে শুরু হয়েছে আটচালায় মা দুর্গার পুজো (Durga Puja )। সেই সঙ্গেই ওই দালানে শুরু কালীপুজোও (Kali Puja)। কিন্তু দুর্গাপুজোর মতোই শিবপুরের (Shibpur) রায়চৌধুরী পরিবারের কালীপুজোর আছে বিশেষ নিয়ম, যা স্বাতন্ত্র্যের দাবি রাখে। পরিবারের প্রবীণ সদস্য অরুণ রায়চৌধুরী এবিপি লাইভের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন তাঁর পারিবারিক পুজোর ইতিহাস ও পরম্পরার কথা।
যে কোনও পরিবারেই দুর্গাপুজো হলে সেই সঙ্গে আরও একটি বড়পুজো করার রীতি থাকে। তাই যবে থেকে এই দালানে মা দুর্গার পুজো শুরু হল, ঠিক তখন থেকেই শুরু মা কালীর পুজো। এ বাড়়ির মা কৃ্ষ্ণবর্ণা। পরিবারে প্রথা ছিল, যে দিন কালীপুজো, সেদিনই কুমোর দালানে এসে গড়বেন মূর্তি। সেদিই লাগবে রঙের প্রলেপ। সেদিনই হবে পুজো। সেদিনই বিসর্জন। স্বাভাবিকভাবেই রায়চৌধুরী বাড়ির কালীপুজো মানেই ব্যস্ততা ছিল চরমে। একে বনেদি বাড়ি, নানা লোকের সমাগম, তার উপর এতকিছু সারতে হত একদিনেই ! তারপর অবশ্য নিয়ম কিছুটা শিথিল হয়। এক-মাটি করে রেখে দেওয়া শুরু হয়। পুজোর দিন সকালে দোমেটে করে রঙ করা হত একসময়ে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগুন আঁচে শোকানো হত প্রতিমা। এখন সেটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। কালীপ্রতিমার রঙ এখন পুজোর দিন হলেও, প্রতিমা আগে থেকেই তৈরি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুন :
একসময় মন্দিরে গা-ঢাকা দিয়েছিল মারাঠা দস্যু ভাস্কর পণ্ডিত ! সেই থেকেই মালঞ্চের দেবী হলেন ডাকাত-কালী
এই বাড়ির লক্ষ্মী (Laxmi Puja) হাঁড়িতে বসত করেন। তিনিই কালীপুজোর দিন পূজিত হন। তার আগে হয় অলক্ষ্মী বিদায় । এখনও সেই রীতি অব্যাহত। স্বাধীনতার আগে অবধি দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজোর সময় সাদা পাঁঠা বলি হত। পরিবারের সদস্য অরুণ রায়চৌধুরী জানালেন, সাদা পাঁঠা ছিল অত্যাচারী ব্রিটিশ সাহেবদের রূপক ! মা লক্ষ্মী ধনসম্পত্তি, শ্রীবৃদ্ধির দেবী। ব্রিটিশ-বিদায় না হলে দেশের উন্নতি হবে কীকরে ? সেই ভাবনা থেকেই সাদা পাঁঠা বলি হত এই বাড়িতে । ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে অবশ্য এই বলি বন্ধ হয়েছে।
রায়চৌধুরী পরিবারে কালীপুজোর রাতেই পুজো শেষ হলে সূর্য ওঠার আগেই দেবীর বিসর্জন করা হয়। প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কাঠামোর পাটাতনটি কেটে ফিরিয়ে আনা হয়। পরের বছর সেখানেই তৈরি হত নতুন মূর্তি।