এক্সপ্লোর
Advertisement
শিলের ওপর দাঁড়িয়ে পড়ছে নোড়া! অলৌকিক বা অস্বাভাবিক নয়, নেপথ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট কারণ, বলছেন রাজ্যের বিজ্ঞান মঞ্চের সম্পাদক
অনেকেই ধরে নিয়েছেন, এটা মহাজাগতিক কোনও দৃশ্য। অদ্ভুত এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে বিভিন্ন বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশিরা। করোনা লকডাউনের পরোয়া না করে।
কলকাতা: বাড়ির মশলা বাটার শিলের ওপর আচমকাই দাঁড়িয়ে পড়েছে নোড়া! হেলছে না। দুলছে না। একেবারে টানটান।
রবিবার সন্ধে থেকে এই ছবি দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। অনেকেই ধরে নিয়েছেন, এটা মহাজাগতিক কোনও দৃশ্য। অদ্ভুত এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে বিভিন্ন বাড়িতে ভিড় জমিয়েছেন প্রতিবেশিরা। করোনা লকডাউনের পরোয়া না করে।
ব্যাপারটা নিয়ে সবচেয়ে বেশি হইচই হয় হুগলিতে। শ্রীরামপুর ও সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় শিলের ওপর নোড়া দাঁড় করিয়ে চলে পূজাপাঠ। দুধ দিয়ে স্নান করিয়ে দেওয়া হয় নোড়াকে। বলাবলি শুরু হয়ে যায়, করোনা ভাইরাসের অভিশাপ থেকে মুক্তির ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঘটনা!
যদিও গোটা ঘটনার কথা জেনে প্রবল বিরক্ত পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ মহাপাত্র। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ফোনে এবিপি আনন্দকে বললেন, ‘পুরোটাই অন্ধবিশ্বাস। এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও যোগ নেই।’ তিনি যোগ করলেন, ‘জানি না আচমকা এটা কীভাবে রটল। রবিবার সন্ধ্যায় আমার স্ত্রী প্রথমে জানায়। আমি নিজেই শিলের ওপর নোড়া দাঁড় করিয়ে দেখিয়ে দিই। যে কোনও দিনই এটা করা সম্ভব।’
কিন্তু কীভাবে সম্ভব ব্যাপারটা? ব্যাখ্যা করে দিলেন প্রদীপবাবু। বললেন, ‘পুরোটাই ভারসাম্যের ব্যাপার। সহজ বিজ্ঞান। কোনও বস্তুর তলভাগের ঠিক মাঝ বরাবর অ্যাকশন অফ গ্র্যাভিটিশনাল ফোর্স গেলে সেটি সটান দাঁড়াবে, তলভাগের বাইরে দিয়ে গেলে দাঁড়াবে না। সব ক্ষেত্রে বস্তুটি দাঁড়াবেই তার মানে নেই। কখনও দাঁড়াবে, কখনও দাঁড়াবে না। বস্তুর আকার-আকৃতির ওপর নির্ভর করে। বস্তু সুস্থির হওয়ার বিজ্ঞান এটাই। এর নেপথ্যে চৌম্বক ক্ষেত্র বা মধ্যাকর্ষণ শক্তির হেরফেরের মতো কোনও রহস্য নেই। এর সঙ্গে করোনা ভাইরাস, আলো জ্বালানো, নেভানো, এসবেরও কোনও সম্পর্ক নেই।’
রবিবার সন্ধেবেলা হুগলির উগারদহের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ ঘোষের বাড়িতেও দেখা গিয়েছিল শিলের ওপর নোড়া দাঁড়িয়ে পড়ার দৃশ্য। ভিডিও, ছবি তোলার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল। বিশ্বজিৎ বললেন, ‘আমার ডোমজুড় নিবাসী এক আত্মীয়ের থেকে ফোনে খবর পাই এমন হচ্ছে বলে। বাড়িতে চেষ্টা করে দেখলাম সত্যিই নোড়াটা দাঁড়াচ্ছে। ভেবেছিলাম এটা মহাজাগতিক কোনও তারতম্যের জন্য ঘটছে।’
এই ধরনের অন্ধবিশ্বাসের কারণ কী? বিজ্ঞান মঞ্চের আধিকারিক প্রদীপবাবু বললেন, ‘করোনা লকডাউনের জেরে বাড়ির মধ্যে সকলে আবদ্ধ। সকলের মনে ভয় কাজ করছে। এটা যে সে আতঙ্ক নয়, একেবারে মৃত্যুভয়। তাই সকলে কার্যকারণ সম্পর্ক বা যুক্তি দিয়ে সব কিছু বিচার করতে পারছেন না। অন্ধবিশ্বাস গ্রাস করছে।’ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার উপায়ও বলে দিচ্ছেন তিনি। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘সামাজিক ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় ভরসা থাকলে এটা কাটবে। করোনা পরিস্থিতি সামলানোর ব্যাপারে মানুষকে আশ্বস্ত করতে হবে সরকারকেই। চিকিৎসা, করোনা পরীক্ষার পরিকাঠামো ঠিক থাকলে মানুষ আশ্বস্ত হবে। পাশাপাশি আইসোলেশনে থাকা মানুষের অন্ন সংস্থানের চিন্তা না থাকলে অন্ধবিশ্বাসের পিছনে কেউ ছুটবে না। গৃহবন্দি থাকার জন্য অবসাদের মতো নানারকম মানসিক সমস্যা হতে পারে। তাই আমরা সকলকে বলছি, একে অপরের সঙ্গে কথা বলুন। ফোন করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। ব্যক্তিগতভাবে কেউ করোনার সমস্যাটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। সকলে মিলে লড়াই করতে হবে।’
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
জেলার
জেলার
খুঁটিনাটি
খুঁটিনাটি
Advertisement