স্মরণে সুষমা স্বরাজ: একজন দক্ষ বক্তা, প্রকৃত জনপ্রতিনিধি, অনেক কিছুর পথিকৃৎ
মঙ্গলবার গভীর রাতে দিল্লির এইমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুষমা স্বরাজ। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর।
নয়াদিল্লি: একজন প্রকৃত সুবক্তা যাঁর কথা সকলের মনে প্রভাব ফেলত, একজন মন্ত্রী যাঁর সঙ্গে সহজেই সাক্ষাৎ করা যেত এবং একজন রাজনীতিবিদ যিনি অনেক বিষয়ের পথিকৃৎ -- প্রয়াত প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ছিলেন দলের একনিষ্ঠ সৈনিক যিনি যে কোনও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে প্রস্তুত ছিলেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে দিল্লির এইমস হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুষমা স্বরাজ। বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। অথচ, তার কয়েক ঘণ্টা আগেও, কেউ ঘুনাক্ষরে টেরও পাননি যে গভীর রাতে এমন দুঃসংবাদ আসতে পারে। মঙ্গলবারই, সংসদে পাস হয় ঐতিহাসিক জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। সেই আনন্দে সন্ধেবেলা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইটারে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ। আজকের দিনটি দেখার জন্যই জীবনে অপেক্ষা করেছিলাম। এর কয়েক ঘণ্টা পরই, রাতে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুরু হয় বুকে ব্যথা। সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির এইএমস হাসপাতালে। ২০১৬ সালে এইমসে কিডনি প্রতিস্থাপন অস্ত্রোপচারও করা হয় তাঁর। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এ বছর গত লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি তিনি। প্রথম মোদি সরকারের আমলে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তিনি বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন। কিন্তু, এবার তাঁর জায়গায় আসেন এস জয়শঙ্কর। কিন্তু, বিদেশমন্ত্রী হিসেবে অনেক কিছু নতুনত্ব আমদানি করে নিজের একটা আলাদা ছার রেখে গিয়েছেন সুষমা। বিশেষ করে, প্রবাসে যে সকল ভারতীয়রা সমস্যায় পড়েছেন, তাঁদের সহায়তায় সর্বদা এগিয়ে এসেছেন তিনি। টুইটারকে কার্যত হেল্পলাইনে রূপান্তর করে বিদেশে সমস্যায় পড়া বা আটকে পড়া বহু ভারতীয়রকে উদ্ধার করেন। তিনি এমন এক মন্ত্রী ছিলেন, যাঁর সঙ্গে খুব সহজেই সাক্ষাৎ করা যেত, বা পাওয়া যেত। ইন্দিরা গাঁধীর পর সুষমাই ছিলেন ভারতের দ্বিতীয় মহিলা যিনি বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এর পাশাপাশি, আরও অনেক কিছু ক্ষেত্রে পথিকৃৎ ছিলেন। তিনি হরিয়ানা মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন। তিনি দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। দেশের কোনও জাতীয় দলের প্রথম মহিলা মুখপাত্র। ১৯৫২-র ১৪ ফেব্রুয়ারি পঞ্জাবের অম্বালা ক্যান্টনমেন্ট জন্ম সুষমার। পড়াশোনার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, কবিতা, নাটকে সমান অনুরাগী ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সংস্কৃতে স্নাতক। পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করার পর, ১৯৭৩-এ সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে পেশা শুরু করেন সুষমা স্বরাজ। আদ্যন্ত রাজনৈতিক পরিবারে মানুষ সুষমা স্বরাজ। তাঁর বাবা ছিলেন আরএসএস কর্মী। কলেজে পড়ার সময়ই জড়িয়ে পড়েন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে। ছাত্রাবস্থায় তিনি এবিভিপি-র সদস্য হন। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হন। ১৯৯০-এ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে লোকসভা ভোটে জয়ী হন সুষমা। ১৯৯৮-এর ৩ ডিসেম্বর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ২০০০ সালে ফের রাজ্যসভার সদস্য। বাজপেয়ী মন্ত্রিসভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন সুষমা। ২০০৯-এ লালকৃষ্ণ আডবাণীর জায়গায় লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী হন। ২০১৪-তে মোদি মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব পান সুষমা স্বরাজ। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সাতবারের সাংসদ হওয়ার পাশাপাশি তিনবার বিধানসভার সদস্যও ছিলেন সুষমা। বিদেশমন্ত্রকের পাশাপাশি সুষমা টেলি-যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ও সংসদ-বিষয়ক মন্ত্রক সামলেছেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী স্বরাজ কৌশলের সঙ্গে বিয়ে হয় সুষমার। কৌশল ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মিজোরামের রাজ্যপাল ছিলেন। পরে, ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত তিনি সাংসদও ছিলেন। বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ভারত-পাক ও ভারত-চিনের মতো স্পর্শকাতর কূটনৈতিক বিষয়গুলি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন। বিশেষ করে, ডোকলাম-কাণ্ডে বেজিংকে তিনি যেভাবে সামলেছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।