পুলওয়ামাকাণ্ড: মার্কিন মুলুক থেকে চালু হওয়া ‘ভারচুয়াল সিম’ ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা, আমেরিকার সাহায্য চাইবে ভারত
শ্রীনগর: জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল তদন্তকারী দলের হাতে। জানা গিয়েছে, হামলায় জড়িত জঙ্গিরা নিজেদের হ্যান্ডলার সঙ্গে কথা বলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা ‘ভারচুয়াল সিম’ ব্যবহার করেছিল। হামলাস্থল থেকে পাওয়া একাধিক তথ্যপ্রমাণকে একত্রিত করে এবং সেইসঙ্গে ত্রাল সহ বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রতিককালে যেখানে সেনা-জঙ্গি সংঘর্ষ হয়েছে বা নাশকতামূলক হামলা হয়েছে--সেই সব জায়গায় খানা-তল্লাশি চালায় জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একাধিক তদন্তকারী দল। তাতে তাদের হাতে বিস্তর নতুন তথ্য আসে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সীমান্তের ওপারে থাকা জইশ-ই-মহম্মদ হ্যান্ডলারদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছিল পুলওয়ামা হামলার আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল দার। ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড মুদাস্সির খান ত্রালে সেনার সঙ্গে গুলি বিনিময়ে খতম হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এটা একেবারে নতুন পন্থা, যা অবলম্বন করেছে জঙ্গিরা। কারণ, এই ‘ভারচুয়াল সিম’ চালু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তিতে কম্পিউটারের মাধ্যমে একটি টেলিফোন নম্বর জেনারেট হয়। একটি ওই সংস্থার পরিচালিত অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সেই নম্বর নিজের স্মার্টফোনে ডাউনলোড করে থাকেন। এই নম্বরটি হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও টুইটারের সঙ্গে যুক্ত করা থাকে। এই সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট মারফৎ যে ভেরিফিকেশন কোড জেনারেট হয় তা ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে ডাউনলোড হয়। পুলওয়ামাকাণ্ডের তদন্তকারীরা জানান, এই প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করেই জইশ হ্যান্ডলার এবং মুদাস্সির খানের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল দার। ফোন নম্বরের আগে (+১) নম্বর ছিল, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোবাইল স্টেশন সাবস্ক্রাইবার ডিরেক্টরি নম্বর (এমএসআইএসডিএন)। জঙ্গিরা যে ‘ভারচুয়াল সিম’ ব্যবহার করেছিল, তা তদন্তকারীদের হাতে এসেছে। এখন ওই সিম ও তার সঙ্গে জড়িত নম্বরের তালিকা মার্কিন প্রশাসনকে শীঘ্রই পাঠাতে চলেছে ভারত। ওই সিম সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য ও কথোকথনের বিস্তারিত চাইবে নয়াদিল্লি। জানতে চাওয়া হবে, ওই সিম দিয়ে কখন কোন নম্বর জেনারেট হয়েছে এবং তা দিয়ে কোথায় ফোনে কী কথা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ-ও জানতে চাওয়া হবে, কোন সংস্থা ওই সিম অ্যাক্টিভেট করেছে। সেই প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেসও চাওয়া হবে। পাশাপাশি, তদন্তকারীরা জানতে চাইবেন, কারা ওই ‘ভারচুয়াল সিম’-এর জন্য টাকা দিয়েছিল। যদিও, তদন্তকারীরা আশঙ্কা করছেন যে, ভুয়ো নথি দিয়ে জঙ্গিরা এই টাকা পাঠিয়েছে সম্ভবত। ঠিক যেমনটা মুম্বই হামলার আগে করেছিল জঙ্গিরা। প্রসঙ্গত, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি নিয়ে হামলা চালায় জইশ জঙ্গিরা। ৪০ জন জওয়ান মারা যান। প্রত্যুত্তরে, পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে আকাশপথে অভিযান চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান।