৬০ শতাংশ বিল চোকানোর পরও ছাড়া হয়নি রোগীকে, রাখতে বলা হয় গায়ের গয়না, বাড়ির দলিল,ফিক্সড ডিপোজিট, অভিযোগ পরিবারের
কলকাতা: সাত দিনেই বিল হয়েছিল সাত লক্ষ টাকার! তার পুরোটা না মেটাতে পারায় রোগীর পরিবারের ফিক্সড ডিপোজিটের নথি আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীর পরিবার নাকি নিজে থেকে এই কাগজপত্র রেখে গিয়েছে। যদিও, রোগীর পরিজনদের পাল্টা দাবি, এই কথা হাস্যকর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অঙ্কটা অনায়াসে বলতে পারেন। কিন্তু, সাধারণ মধ্যবিত্তদের কাছে তো এই অঙ্কটা রাতারাতি জোগাড় করা পাহাড় ভাঙার সামিল! সঞ্জয়ের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশিরা চেয়েচিন্তে সাড়ে চার লক্ষ টাকা জোগাড় করতে পেরেছিল। কিন্তু, তাতে হয়নি! অভিযোগ, তাঁরা কাকুতি মিনতি করেছিলেন! কিন্তু তাও ছাড়েনি অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষপর্যন্ত রোগীকে এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পেতে ফিক্সড ডিপোজিটের সার্টিফিকেট জমা দিতে হয় বলে অভিযোগ! মৃত সঞ্জয়ের সঞ্জয়ের বন্ধুর দাবি, তাঁরা আমরা বলি আমাদের রেখে দিন, ওকে যেতে দিন। তাও ছাড়েনি। ফিক্সড ডিপোজিটের কাগজ জমা দিতে হয়েছে। এসএসকেএমে দাঁড়িয়ে একই অভিযোগ করেন মদন মিত্রও। তৃণমূল নেতা বলেন, গয়না গাঁটি নিয়েছে, এফডি নিয়েছে, বাড়ির দলিল নিয়েছে। দে আর দ্য ব্লাড সাকার, ড্রাকুলা, চামার। অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা নাকি ফিক্সড ডিপোজিট সার্টিফিকেট চাইনি! সিওও জয় বসু বলেন, এগুলো আমরা নিতে চাইনি। রোগীর পরিবারই দিয়েছে... নিমাই’দার প্রশ্ন - আপনাদের নেওয়ার অধিকার আছে? না নেই। কিন্তু, রোগীর পরিবারই দিয়েছে। যদিও, মৃত সঞ্জয়ের প্রতিবেশী সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, এটা হাস্যকর। মিথ্যে কথা বলছে। আমরা নিজেরা বললাম আমরা থাকছি। পেশেন্টকে ছেড়ে দাও। এখন মিথ্যে বলছে। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষকে মদন মিত্র বলেন পুরো টাকা ফিরিয়ে দিতে। জয় বসু জানান, সব টাকা ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু, টাকা ফেরালেই কি সাত খুন মাফ? সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরও এমনটা হয় কী করে? কবি শঙ্খ ঘোষ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর এত বড় এক শ্রদ্ধেয় পদক্ষেপের পরেও যে এমন ঘটনা ঘটতে পারল, এতে বোঝা যায় কোনো কোনো হাসপাতালে কী পরিমাণ অমানবিক কাণ্ড চলছে। সঞ্জয়ের দেড় বছরের ছেলে বুঝে উঠতে পারছে না তাঁর জীবন থেকে কী চলে গেল! যাঁরা বুঝতে পারছেন, তাঁরাও অসহায়। সন্তান হারালেন বৃদ্ধ বাবা-মা এবং স্বামী হারালেন মাত্র তিন বছর আগে বিয়ে হওয়া এক যুবতী। সঞ্জয়ের মৃত্যু তুলে দিল সেই অবধারিত প্রশ্ন, অর্থ না থাকা মানে কি বাঁচার অধিকারটুকুও নেই?