কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা বিভাগে রেজাল্ট নিয়ে বেনিয়ম, ‘টিউশনে ফল প্রকাশ’
‘শ্যামবাজারের কাছে এক কলেজের জার্নালিজমের অধ্যাপক যিনি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ান, তিনি নিজের টিউশনে রেজাল্ট জানিয়ে দেন।’
কলকাতা: ২০১৭ সালের ব্যাচ। ‘ফোর্থ সেমেস্টার’- এর পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখ। ৬০ জন পড়ুয়ার ফল প্রকাশ করতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা বিভাগের সময় লাগল ৮ মাস। আড়াইশো দিন পর পড়ুয়ারা রেজাল্ট জানল ঠিকই তবে হাতে পেল না মার্কশিট। সম্ভবত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবার কোনও বিভাগীয় কর্মী ফোনে ফোনে পড়ুয়াদের রেজাল্ট জানালেন। শতাব্দী প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ তালিকায় থাকলেও গণজ্ঞাপন ও সাংবাদিকতা বিভাগের এমন ‘বেনিয়ম’ এবং ‘অব্যবস্থা’ এড়িয়ে যাওয়ার নয়।
রেজাল্ট দেরিতে প্রকাশ, সময়ে পরীক্ষা না হওয়া এই বিভাগের দীর্ঘদিনের রোগ। তার ওপর ‘অভিভাবকহীন’ থাকা! অতীতে ডঃ তপতী বসু, ডঃ সৌমেন্দ্রনাথ বেরার মতো অধ্যাপকরা এই বিভাগের প্রধান ছিলেন। মাঝে দায়িত্ব নিয়েছিলেন প্রাক্তন রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী। এখন দায়িত্বে লাইব্রেরি সায়েন্সের বিভাগীয় প্রধান পীযূষ কান্তি পানিগ্রাহী।
পড়ুয়াদের অভিযোগ, ‘সেকেন্ড সেমেস্টার’ দেওয়ার একবছর পর ‘থার্ড সেমেস্টার’ হয়েছে। সেটাও রীতিমতো ‘প্রতিবাদ করে পরীক্ষা আদায়’ করে নিয়েছেন তাঁরা। এখন যারা ‘থার্ড সেমেস্টার’-এ, তাঁরা জানেন না, কবে হবে ‘ফোর্থ সেমেস্টার’! আর যে পড়ুয়ারা ডিসেম্বরে ‘ফার্স্ট সেমেস্টার’ দিয়েছেন তাঁরা সন্দিহান কবে হবে পরের পরীক্ষা। করোনা এবং লকডাউনের মধ্যে ‘অনিশ্চয়তা’ বাড়ছে আগামী শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়েও। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরই অনেকে বেশ চিন্তিত।
তবে এসবের মধ্যে বেনজির ভাবে টিউশনে ফল প্রকাশের বিষয়টি জানাজানি হতেই শুরু হয়েছে শোরগোল। পড়ুয়াদের একাংশের অভিযোগ, ‘শ্যামবাজারের কাছে এক কলেজের জার্নালিজমের অধ্যাপক যিনি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ান, তিনি নিজের টিউশনে রেজাল্ট জানিয়ে দেন।’ আর তারপরই রেজাল্ট নিয়ে বিভাগীয় প্রধানকে ফোনাফুনি শুরু করেন পড়ুয়ারা।
যদিও অধ্যাপক পীযূষ কান্তি পানিগ্রাহী জানিয়েছেন, “মার্চেই রেজাল্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তবে লকডাউনের কারণে তা বের করা সম্ভব হয়নি।” আরও একধাপ এগিয়ে তাঁর দাবি, “অতীতে একবছর লেগে যেত, এখন তো তাড়াতাড়িই রেজাল্ট বার করা হচ্ছে।” ফলপ্রকাশে বিলম্বের কারণে অনেক পড়ুয়াই নেট পরীক্ষায় বসতে পারেননি বলেও অভিযোগ। বেনিয়ম এবং এভাবে ‘টিউশনে ফলপ্রকাশ’ ও চূড়ান্ত ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারবেন না, বলবে বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।