অভিভাবক-কর্তৃপক্ষ বৈঠক নিষ্ফলা, আপাতত খুলছে না জিডি বিড়লা, কাল বিকেলে ফের কথা
কলকাতা: অভিভাবক-কর্তৃপক্ষ বৈঠকে কোনও রফাসূত্র না মেলায় ফলে আপাতত খুলছে না জিডি বিড়লা।অধ্যক্ষার অপসারণের দাবিতে অনড় অভিভাবকরা। কাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময় চাইল স্কুল। লালবাজারে জিডি বিড়লার অধ্যক্ষাকে প্রায় ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ পুলিশের। ৫ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু, জি ডি বিড়লা স্কুলে এখনও কাটল না অচলাবস্থা। নিষ্ফলা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক। স্কুল কবে খুলবে কি না, তা নিয়ে মঙ্গলবারও সিদ্ধান্ত হল না। অভিভাবকরা এখনও অধ্যক্ষার পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে অনড়। এই প্রেক্ষাপটে ফের বৈঠক হবে বুধবার। স্কুল কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে ডেডলাইন বেধে দিলেন অভিভাবকরা। বৈঠকে অংশ নেওয়া ফোরাম সদস্যরা সাফ জানিয়ে দেন, আমরা আমাদের দাবি থেকে সরছি না। দীর্ঘ মিটিং হয়েছে। এতক্ষণ ধরে এই নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এই বিষয় ছাড়া কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা নয়। সিদ্ধান্ত নিতে কাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। কাল বিকেলে ফের স্কুল-অভিভাবক বৈঠক। বৈঠকের পর অভিভাবকরা বলেন, আমরা স্কুল চালু রাখতে বলেছি। স্কুল থাকবে, বাচ্চারাও থাকবে। আজ প্রথম ধাপ পেরোলাম, কাল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। ফোরামের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, কালকেও বিকেল ৪টে থেকে স্কুলের সামনে হবে জমায়েত। বৈঠকে অংশ নেওয়া ফোরাম সদস্যের দাবি, কাল থেকে খুলুক স্কুল, কর্তৃপক্ষ লিখিয়ে নিতে চাইছিল। আমরা বলেছি সমস্যার সমাধান হোক, তারপর খুলুক স্কুল। তাঁরা যোগ করেন, বৈঠকে স্কুলের তরফে আমাদের খাবার দিতে চেয়েছিল। আমরা তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছি। ত্রিপাক্ষিক এই বৈঠকে ছিলেন পুলিশ ও স্কুল শিক্ষা দফতরের প্রতিনিধিদিরাও। অশোক হল গ্রুপ অফ স্কুল মুখপাত্র সুভাষ মোহান্তি বলেন, অধ্যক্ষাকাকে সরাতে হবে। একমাত্র শর্ত দিচ্ছে। দেখা যাক কী হয়। ওনার দোষ প্রাইমা ফেসি এসটাবলিসমেন্ট হতে হবে। তাঁর যোগ্যতা ছিল বলেই না চাকরি করছিলেন। মবের ডিমান্ড তাই সরানো যায়! কিছু না পেলে। বৈঠকের আগে নির্যাতিতা শিশুটির বাবা-মা স্পষ্ট করে দেন, যে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁরা চান না, তাঁর নেতৃত্বেই আজকের বৈঠক হোক। তা হলে তাঁদের যাবতীয় আন্দোলন অর্থহীন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তাঁরা। যদিও এদিন সকালেই লালবাজার থেকে তলব পেয়ে সেখানে চলে যান জিডি বিড়লা স্কুলের অধ্যক্ষা শর্মিলা নাথ। অধ্যক্ষাকে প্রায় ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ১০টায় নির্ধারিত সময় থাকলেও, সকাল সাড়ে নটাতেই লালবাজারে পৌঁছে যান পকসো আইনে অভিযুক্ত অধ্যক্ষা। এর কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসেন যুগ্ম কমিশনার ক্রাইম বিশাল গর্গ, ডিসি ডিডি-২ নীলু শেরপা চক্রবর্তী। পৌঁছে যান উইম্যান্স গ্রিভ্যান্স সেলের তদন্তকারী অফিসাররাও। সূত্রের খবর, সকাল সাড়ে দশটা থেকে গোয়েন্দা বিভাগের অফিসে অধ্যক্ষাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। প্রথম পর্বের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জিডি বিড়লা স্কুলের অধ্যক্ষাকে গোয়েন্দা দফতর থেকে যুগ্ম কমিশনার ক্রাইমের অফিসে আনা হয়। সেখানেও একপ্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, ধৃত ২ শিক্ষক সম্পর্কেও অধ্যক্ষাকে প্রশ্ন করেন তদন্তকারীরা। কেন শারীর শিক্ষিকা নেওয়া হয়নি তা নিয়েও তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়েন অধ্যক্ষ। গোটা জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়াটির অডিও এবং ভিডিও রেকর্ডিং করা হয়। বিকেল পাঁচটা নাগাদ লালবাজার থেকে বেরিয়ে যান অধ্যক্ষা। যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) বিশাল গর্গ জানিয়েছেন, জি ডি বিড়লা স্কুলের অধ্যক্ষের বয়ান বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাঁকে ফের তলব করা হতে পারে। ক্লাস টিচারকেও ডাকা হবে। তবে কবে, তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এদিকে, লালবাজার সূত্রে খবর, অধ্যক্ষার বয়ানে কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। অধ্যক্ষার কাছে স্কুলের কিছু নথি চেয়েছে পুলিশ। স্কুলে কতজন আয়া আছেন, এক একজন আয়া কতজন পড়ুয়াকে দেখেন, এই সংক্রান্ত রেজিস্টার চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। অধ্যক্ষাকে যেদিন লালবাজারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, সেদিন ডাকা হয়েছিল শিশুর মা ও বাবাকে। সন্তানকে নিয়ে কলকাতা পুলিশের সদর দফতরে যান তাঁরা। সেখানে শিশুর বাবার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। নির্যাতিত শিশুর পরিবারের আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, বাবার বয়ান রেকর্ড করল। মা-বাচ্চার বাড়িতে গিয়ে স্টেটমেন্ট রেকর্ড করা হবে। মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হবে। জিডি বিড়লাকাণ্ডে এদিন হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির এজলাসে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাকারীর দাবি, শিশু-নির্যাতনের অভিযোগের তদন্তে সিট গঠন করতে হবে। প্রতি স্কুলে বসাতে হবে সিসি ক্যামেরা। এ সপ্তাহেই মামলার শুনানির সম্ভাবনা। এদিকে, স্কুলের ভিতরে যখন বৈঠক চলছিল, নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয় স্কুলের বাইরে। একদল বহিরাগত বিক্ষোভে চলে আসায় প্রতিবাদ করেন অভিভাবকরা। সেখান থেকে বচসা, ধাক্কাধাক্কি। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঠেকাতে স্কুলের গেটে মোতায়েন করা হয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। এর আগে, বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়কে হাতজোড় করে সেখান থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন জিডি বিড়লা কাণ্ডে নিগৃহীতা শিশুর বাবা-মা। যে অভিভাবকরা বিপদে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এখনও তাঁদের সঙ্গে নিয়েই আগামী লড়াই লড়তে চান তাঁরা। স্কুলের প্রিন্সিপালকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল রাতভর স্কুলের গেটে অবস্থান করেন রূপা। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক চাপের কারণেই শিশুর বাবা মাকে তাঁর কাছে এই অনুরোধ করতে হল।