সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব রুখতে কড়া আইন আনার ভাবনা রাজ্যের, কটাক্ষ বিরোধীদের
কলকাতা: বসিরহাটের অশান্তির প্রেক্ষিতে সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব নিয়ে বারবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বসিরহাটকাণ্ড থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আরও সতর্ক হচ্ছে রাজ্য সরকার।
সূত্রের দাবি, সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব এবং তার ফলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকাতে কড়া আইন আনছে নবান্ন। যেখানে যাবজ্জীবন পর্যন্ত সাজার সংস্থান থাকছে বলে সূত্রের দাবি।
প্রশাসনিক স্তরে এনিয়ে প্রাথমিকভাবে আলোচনাও শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে শাস্তিযোগ্য অপরাধের হিসেবে গণ্য করার ভাবনাচিন্তা করছে সরকার? সূত্রের দাবি এই তালিকায় থাকতে চলেছে, হেট ক্রাইম অর্থাৎ মনে বিদ্বেষ ছড়ানো, গুজব ছড়ানো এবং ভুয়ো তথ্য প্রকাশ করা।
অর্থাৎ মিথ্যে জেনেও এমন কিছু প্রকাশ করা, যার ফলে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি হতে পারে, এলাকার শান্তি নষ্ট হতে পারে, সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে কিংবা কারও মৃত্যু হতে পারে। সূত্রের দাবি, যে নয়া আইন নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে, তাতে একসঙ্গে অনেকের ওপর জরিমানা চাপানোর ক্ষমতাও থাকতে পারে রাজ্যের হাতে।
অর্থাৎ, তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে, অশান্তির ঘটনায় কোনও এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জড়িয়ে রয়েছে, কিংবা তারা দোষীদের সাহায্য করেছে, কিংবা দোষীদের খুঁজে বার করতে সাহায্য করেনি, কিংবা ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যপ্রমাণ চেপে গিয়েছে, তাহলে সরকার সেই সমস্ত বাসিন্দাকে একসঙ্গে জরিমানা করতে পারে।
এতো গেল শাস্তিযোগ্য অপরাধের তালিকা। কিন্তু, ভাবনাচিন্তার স্তরে থাকা এই নয়া আইনে কী কী শাস্তির সংস্থান থাকছে? সূত্রের দাবি, গুজব ছড়ানো এবং ভুয়ো তথ্য প্রকাশের জন্য থাকতে পারে ৩-৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সংস্থান।
এমন চেষ্টা করলেও এক বছরের কারাদণ্ডের সংস্থান থাকতে পারে এই আইনে। আর এমনটা করতে যারা সাহায্য করেছেন, তাদের জন্য থাকতে পারে ২ থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের সংস্থান।
এতদিন গুজবের জেরে অশান্তিতে কেউ খুন হলে, শুধু খুনে অভিযুক্তর শাস্তি হত। সূত্রের দাবি, নয়া আইনে যে গুজব ছড়াবে, তার জন্যও কড়া সাজার সংস্থার থাকছে।
কেউ যদি এমন গুজব ছড়ায়, যার ফলে কারও মৃত্যুর অথবা সম্পত্তি নষ্ট হতে পারে, তার দশ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সংস্থান থাকতে পারে এই আইনে।
এমন চেষ্টা করলে তিন বছর এবং কাউকে এমনটা করতে সাহায্য করলেও দশ থেকে ১৫ বছর বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের সংস্থান থাকতে পারে আইনে।
সূত্রের দাবি, কারাদণ্ডের সঙ্গে থাকছে জরিমানার সংস্থানও। যেমন--
- এক থেকে তিন বছরের মধ্যে কারাদণ্ড হলে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
- তিন থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে ৪ লক্ষ।
- পাঁচ থেকে সাত বছর কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে ৬ থেকে ১০ লক্ষ।
- দশ থেকে পনেরো বছরের কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ।
- যাবজ্জীবনের ক্ষেত্রে ৩০ লক্ষ টাকা বা তার বেশি জরিমানার সংস্থান থাকতে পারে আইনে।
যদিও, রাজ্যের এই ভাবনার নিয়ে ভিন্নমত বিরোধীদের। গুজব রুখতে কড়া আইনকে সমর্থন করেও সিপিএমের দাবি, এর ফলে যাতে কারও বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না হয়, সেটা অবশ্যই দেখতে হবে। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, সীমা থানা উচিত। বড় প্রেক্ষিত, স্থান কাল পাত্রে আটকে রাখা যায় না। অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে দেখা দরকার।
কঠোর আইনকে সমর্থন করলেও, তৃণমূল সরকারকে বিঁধতে ছাড়ছে না কংগ্রেস। দলীয় বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, কঠোর আইন দরকার। কিন্তু, রাজ্য সরকারের নীতির জন্য বিভেদকামী শক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
বিজেপি অবশ্য সরাসরি এ ধরনের আইনের বিরোধিতা করেছে। দলের নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, এই যে আইনের কথা ভাবা হচ্ছে, এটা কোর্টে ধোপে টিকবে না। তৃণমূল ও জামাত একত্রিতভাবে করছে, তা চাপার জন্য। সমর্থন যোগ্য নয়।