এমপি বিড়লাকাণ্ড: সাতদিনের পুলিশ হেফাজতে মনোজ, ধোঁয়াশা দ্বিতীয় অভিযুক্তের পরিচয় নিয়ে, সিবিআই তদন্ত দাবি
কলকাতা: এমপি বিড়লাকাণ্ডে ধৃত মনোজ মান্নাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত। আরেক অভিযুক্ত গণেশের পরিচয় নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ইতিমধ্যেই নির্যাতিত শিশুর গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। এমপি বিড়লা স্কুলে সাড়ে তিন বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে সোমবার মনোজ মান্না নামে স্কুলেরই এক কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার তাঁকে আলিপুরের পকসো আদালতে পেশ করা হয়। হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, মনোজকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গণেশ নামে স্কুলের আরেক কর্মীর নাম উঠে এসেছে। মনোজ পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন, ২ জন মিলেই তারা অপরাধ সংগঠিত করেছে। সরকারি আইনজীবীর দাবি, মনোজ বলেছে, দুজন মিলে দুষ্টুমি করতাম মেয়েটার সঙ্গে। এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন মনোজের আইনজীবী। তিনি দাবি করেন, অভিযোগকারিণী মর্নিং সেকশনের ছাত্রী। আর মনোজ ডে সেকশনের কর্মী। মর্নিংয়ের ছুটির পরে তিনি স্কুলে ঢুকতেন। তা ছাড়া সিসি ক্যামেরাতেও কিছু ধরা পড়েনি। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর, ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোজকে পুলিশ হেফাজতে পাঠান বিচারক। এদিকে, ঘটনা পরম্পরায় উঠে আসা ‘গণেশ’ নামটি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। কারণ, এম পি বিড়লা স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, গণেশ নামে তাদের কোনও কর্মীই নেই! আবার অভিভাবকদের একাংশ দাবি করছে, গণেশ স্কুলেরই কর্মচারী। তবে তা ওই কর্মীর ডাক নাম হওয়ায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না রেজিস্টারে। স্কুলের জেনারেল ম্যানেজার সুরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, গণেশ নামের কোনও স্টাফ নেই। রেজিস্টারেও উল্লেখ নেই এমন নামের। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা সিবিআই তদন্ত চাইলেন। তাঁদের প্রশ্ন, ৭ মাস আগে শিশু নিগ্রহ ঘটলেও এতদিন সে ব্যাপারে কেন উচ্চবাচ্য করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও অভিভাবকদের অপর অংশ ও পড়ুয়াদের একাংশের আবার দাবি, গণেশ নামে কোনও স্কুলকর্মীর কথা তারা জানেন না। এক পড়ুয়া বলে, গণেশ বলে স্কুলে কাউকে চিনি না। আরেক অভিভাবকও বলেন, আমরা গণেশের কথা বলিনি। গণেশ নেই। অভিভাবক বিক্ষোভের জেরে পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে এমপি বিড়লায়। এদিন সকাল থেকে স্কুলের গেটে ভিড় করেন অভিভাবকরা। তাঁদের পাশে দাঁড়ান লাগোয়া কয়েকটি স্কুলের অভিভাবকরাও। অভিভাবকদের তরফে সিবিআই তদন্তের দাবি তোলা হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তোলেন তাঁরা। দাবিদাওয়া নিয়ে স্কুল থেকে বেহালা থানা পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা। সেখানে অভিযোগ দায়ের করা হয়। স্কুলের মধ্য সাড়ে ৩ বছরের এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠায় গতকাল দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এমপি বিড়লা স্কুল চত্বর। অভিভাবকরা স্কুলের সামনে জেমস লং সরণী অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। সন্ধ্যেয় অভিভাবকদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এদিন এমপি বিড়লা স্কুলে হাজিরা ছিল অত্যন্ত কম। অনেক অভিভাবকই আতঙ্কে তাঁদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাঁরা চাইছেন দ্রুত ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরুক। জেনারেল ম্যানেজার সুরেন্দ্র কুমার সিংহ বলেন, সবাই যাতে স্কুলে আসে, তার আবেদন করছি। এরইমধ্যে আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে, এদিন স্কুলের গেটে পথনাটিকা করতে যান কয়েকজন। কিন্তু মূল ফটক ছাড়েননি অভিভাবকরা। মঙ্গলবার বিকেলে, প্রাক্তনী সংসদের উদ্যোগে অভিভাবকদের সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষের একটি বৈঠক হয়। সবাই চাইছে সুবিচার। সেইসঙ্গে দ্রুত ছন্দে ফিরুক পঠনপাঠন ব্যবস্থা।