‘তুমি যাবে না, বলো আমি কী নিয়ে থাকব?’ শিখার কথা আর শুনলেন না সোমেন
“আমি আর পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আর বেঁচে থাকতে ভাল লাগছে না শিখা।”
কলকাতা: ছোড়দা আর নেই। বৃহস্পতিবার সারাদিন বন্ধু, সতীর্থ, শিষ্য আর প্রিয়জনদের শেষ পুষ্পার্ঘ্য নিয়ে বিদায় নিলেন সোমেন মিত্র।
৭২ সাল থেকে সরাসরি সংসদীয় রাজনীতিতে। শিয়ালদা কেন্দ্র থেকে জিতে ৭ বার বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া। ৩ বারের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ। যার মধ্যে ২ বার ভোটাভুটিতে জয়। শেষ দিন পর্যন্ত ওই পদেই ছিলেন ইন্দিরা পন্থী কংগ্রেসের এই বর্ষীয়ান নেতা। ২০০৯ সালে একবার সাংসদও হয়েছিলেন। জোড়াফুল চিহ্নে জিতেছিলেন ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র থেকে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতিতে প্রিয় পরবর্তী সময়ে তিনি ছিলেন বাংলা কংগ্রেসের অন্যতম সফল নেতা ও নীতি নির্ধারক।
আরও পড়ুন: দলীয় নেতাদের কথায় কষ্ট পেয়েছিলেন, চাপ বাড়ছিল, রাজনীতি করতে দেওয়াই ভুল হল: শিখা মিত্র
একুশে জুলাই অসুস্থ হয়ে দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হন সোমেন মিত্র। কিডনিজনিত সমস্যা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত কংগ্রেস নেতা চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন। প্রদীপ ভট্টাচার্যকে ফোনে জানিয়েছিলেন, “চিন্তার কারণ নেই। ফের কথা হবে।” সেই কথা অসমাপ্তই থেকে গেল।
আরও পড়ুন: অপেক্ষা করেও শেষ দেখা হল না, পুষ্পস্তবক রেখেই চলে এলেন মমতা
যাওয়ার দিনেও একটু একটু করে ছুঁয়ে গেলেন নিজের ‘স্বপ্নের বিধানভবন’, বিধানসভা সহ আমহার্স্ট স্ট্রিট, রডন স্ট্রিট। 'অমর রহে' স্লোগান আর রজনীগন্ধায় ঢেকে শেষবার যখন বাড়ি এলেন, সোমেনের অপেক্ষায় তখন ব্যাকুল নয়নে দাঁড়িয়ে গোটা পাড়া। রডন স্ট্রিট তখন ভিড়ে ভিড়। লাল শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে শিখা মিত্র। স্ট্রেচারে শায়িত সোমেনকে দেখেই তাঁর চিৎকার, “না তুমি যাবে না। যাবে না”। শেষবার গলা জড়িয়ে বলছেন, “আমি কী নিয়ে থাকব বলো”। সোমেন শুনলেন না!
বুধবার ছেলের মোবাইল থেকে ভিডিও কলে যখন কথা হয়, শিখাকে সোমেন বলেছিলেন, “আমি আর পারছি না। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আর বেঁচে থাকতে ভাল লাগছে না শিখা।” প্রত্যুত্তরে শিখা বলেছিলেন, “তুমি এমন কথা কেন বলছ?” কোনও উত্তর দেননি সোমেন, যেমন দিলেন না আজও!