Donald Trump on Gaza: আগুন নিয়ে খেলা! গাজা দখলের ঘোষণা ট্রাম্পের, তীব্র ভর্ৎসনা সৌদির, নতুন করে উত্তেজনা
Israel-Palestine Conflict: হোয়াইট হাউসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।

নয়াদিল্লি: এবার গাজা দখলের কথা শোনা গেল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে। প্যালেস্তিনীয়দের অন্যত্র সরিয়ে গাজাকে ‘পশ্চিম এশিয়ার তটভূমি’তে পরিণত করবেন বলে জানালেন। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইজরায়েলকে সমর্থন করেও, বরাবর ইজরায়েল-প্যালেস্তাইন, দুই পৃথক দেশের তত্ত্বকেই সমর্থন করে এসেছে আমেরিকা। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের এই মন্তব্য আমেরিকার বিদেশনীতির পরিপন্থী বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। তাই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। এমনকি ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে সমঝোতা গড়তে যে সৌদি আরবের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ট্রাম্প, তারাও তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। প্যালেস্তিনীয়দের অধিকারচ্যুত করা, তাঁদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা কোনও রকম ভাবে বরদাস্ত করা হবে না বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের বিদেশ মন্ত্রক। (Donald Trump on Gaza)
হোয়াইট হাউসে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে এই মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তাঁর বক্তব্য, “গাজা অধিগ্রহণ করবে আমেরিকা। গাজা আমাদের হবে। আমরা সেখানে কাজ করব। হালকা চালে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। যাঁর সঙ্গেই কথা বলেছি এখনও পর্যন্দ, সকলেরই এই প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে।” ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর সরিয়ে ফেলা হবে। সরিয়ে ফেলা হবে বোমা, বিস্ফোরক, অস্ত্রশস্ত্র। গাজার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, কর্মসংস্থান হবে, আবাসন গড়ে তোলা হবে, যেখানে স্থানীয় মানুষ বাস করতে পারবেন। তবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার উন্নয়নের কথা বললেও, ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের সেখানে পুনর্বাসন দেওয়ার কথা শোনা যায়নি ট্রাম্পের মুখে। বরং ‘মানবিকতার খাতিরে’ মিশর এবং জর্ডানের মতো দেশে ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের চলে যাওয়ার পক্ষে আবারও সওয়াল করেছেন ট্রাম্প। (Israel-Palestine Conflict)
ট্রাম্পের বক্তব্য, “(গাজা) একটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। অবিশ্বাস্য পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। আমার মনে হয় গাজার মধ্যে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। পৃথিবীর সব দেশের প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়ে থাকতে পারেন। প্যালেস্তিনীয়রাও বাস করতে পারেন সেখানে বহু মানুষ পাশাপাশি বাস করতে পারেন।” গাজায় আমেরিকা সেনা নামাবে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, “গাজার জন্য যা করণীয় করব আমরা। প্রয়োজন পডডলে, তাও (সেনা মোতায়েন) করব।” ট্রাম্পের এই মন্তব্য সমর্থন করেছেন নেতানিয়াহুও। তাঁর মতে, ট্রাম্প ইজরায়েলের ‘অত্যন্ত ভাল বন্ধু’। ট্রাম্পের পরিকল্পনা গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এতে ইতিহাসের গতিপথই বদলে যাবে। ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অন্য রকম। এতে সন্ত্রাসে জর্জরিত গাজার ভবিষ্যৎও পাল্টে যাবে বলে মত নেতানিয়াহুর।
"The U.S. will take over the Gaza Strip, and we will do a job with it, too." –President Donald J. Trump pic.twitter.com/aCqLl9Gwwn
— President Donald J. Trump (@POTUS) February 5, 2025
বলা বাহুল্য, সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিক, হামাস এবং প্যালেস্তাইন-সমর্থকরা ট্রাম্পের এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। সৌদি আরবও ট্রাম্পের সমালোচনায় সরব হয়েছে। হামাস নেতা সামি আবু জুহরি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য অত্যন্ত হাস্যকর। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা তৈরি হতে পারে বলেও দাবি সামির। হামাসের তরফে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, “নতুন করে উত্তেজনা এবং বিশৃঙ্খলা তৈরির রেসিপি বাতলে দিচ্ছেন ট্রাম্প। গাজায় আমাদের মানুষজনেরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেবেন না। দখলদারি এবং আগ্রাসন ঠেকাতে আমাদের উৎখাত করা যাবে না। ১৫ মাস ধরে লাগাতার বোমাবর্ষণের মধ্যেও মাটি কামড়ে পড়ে থেকেছেন সকলে।” ট্রাম্পের এই মন্তব্যে ইজরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যে সমঝোতা প্রক্রিয়া চলছে, তাতেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে মত কূটনীতিকদেরও।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা মানবাধিকার কর্মী ওমর বদর বলেন, “(ট্রাম্প) উনি যা বলছেন, তার অর্থ, সরকারি ভাবে আমেরিকার নীতি পাল্টে গিয়েছে। ওরা এখন প্যালেস্তাইনের শেষ দেখতে চায়। ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয়দের অন্য দেশে ফেলে দিতে চায়, অনির্দিষ্টকালের জন্য প্যালেস্তাইনের উপর দখলদারি কায়েম করতে চায় আমেরিকা। জানি না আমরা কোন গ্রহে বাস করছি, যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এমন মন্তব্য করছেন।” আমেরিকান-আরব অ্যান্টি-ডিসক্রিমিনেশন কমিটির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর আবেদ আয়ুবের বক্তব্য, “ভয়ঙ্কর কথা বলছেন ট্রাম্প। উন্মত্তের মতো কথা বলছেন। ওঁর পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। এটা কখনও হতে দেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু গত এক-দেড় বছরে যা ঘটেছে, তাতে আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা আর কে করেছে?”
আটল্যান্টিক কাউন্সিলের সদস্য, প্যালেস্তিনীয়-আমেরিকান আহমেদ ফুয়াদ আলখাতিব বলেন, “গাজা কোনও রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট নয়, যে চাইলেই আমেরিকা তা দখল করতে পারে। গাজার প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের মাতৃভূমি। আসল বিষয়কে উপেক্ষা করে এসব কথা বলা হচ্ছে।” আমেরিকার কংগ্রেসের একমাত্র প্যালেস্তিনীয় সদস্য রশিদা তলেবের মতে, “প্রকাশ্যে একটি জাতিকে নির্মূল করার ডাক দিচ্ছেন ট্রাম্প। গণহত্যাকারী, যুদ্ধাপরাধীর পাশে দাঁড়িয়ে এসব বলছেন উনি।” আসল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতেই ট্রাম্প এসব বলছেন, এভাবে গাজা দখল করা যাবে না বলে দাবি ডেমোক্র্যাটিক সেনেটর ক্রিস মার্ফির।
ঘরছাড়া প্যালেস্তিনীয় মিশর এবং জর্ডানে থিতু হতে যে পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্প, তা নিয়েও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আরব দেশগুলি ইতিমধ্যেই সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সৌদি আরব সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্যালেস্তিনীয়দের উৎখাত করা যাবে না। পৃথক প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র ব্যাতীত ইজরায়েলের সঙ্গে কোনও রকম সম্পর্কে অনাগ্রহী তারা। শুধুমাত্র প্যালেস্তাইনই নয়, নিজের মাটি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার বিষয়টি গোটা আরব দুনিয়ার কাছেই অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাই সৌদি আরব ট্রাম্পের প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে। তাদের এই অবস্থান পশ্চিম এশিয়ার ভূরাজনীতির জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বাহরাইনের মতো দেশ ‘আব্রাহাম চুক্তি’ স্বাক্ষর করলেও, সৌদি আরব এখনও সেই চুক্তিতে সই করেনি। ইজরায়েলের সঙ্গে তাদের বোঝাপড়া গড়ে তুলতে আমেরিকার তরফে কম চেষ্টা-চরিত্র হয়নি। সম্প্রতি সেই নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল আমেরিকা এবং ইজরায়েল। কিন্তু ট্রাম্পের মন্তব্যে এখন বেঁকে বসেছে সৌদি আরবও।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগে পর্যন্ত, এতদিন ইজরায়েল এবং প্যালেস্তাইন, দউই পৃথক রাষ্ট্রেই অনুমোদন ছিল আমেরিকা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের। ওয়েস্টব্যাঙ্ক, পূর্ব জেরুসালেম, গাজা এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইজরায়েল যে যে এলাকা জবরদখল করেছিল, সব নিয়ে নিজস্ব পৃথক রাষ্ট্র চান প্যালেস্তিনীয়রা।
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
