Child In Mental Stress : আইসোলেশনে মানসিক যন্ত্রণায় শিশু? খুশি মনে করোনাজয়ের টিপস
কীভাবে করোনাকালে শিশুদের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, বিস্তারিত আলোচনা করলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার এবং মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার।
কলকাতা: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হার আগেরবারের থেকে বেশি । উপসর্গ থাক বা না থাক, কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এলে শিশুকেও নির্দিষ্ট সময় থাকতে হবে আইসোলেশনেই। ২০২০-র ফেব্রুয়ারি থেকে দেশজুড়ে করোনার চোখ রাঙানি । তখন থেকেই শিশুদের বাইরে যাওয়া বন্ধ। চলছে অনলাইন ক্লাস।বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ নেই। উপরন্তু ক্রমাগত বড়দের মধ্যে আলোচনা। পারিপার্শ্বিক থেকেই করোনার ভয়াবহতা নিয়ে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেছে শিশুমনে। ফলে কচিকাঁচাদের উপর মানসিক চাপ ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এর উপর যদি শিশুরাই করোনা সংক্রমিত হয়, তবে বেশ কিছুদিন ছোট্ট বাড়ির মধ্যে একখানা ঘরে তাদের দিনযাপন করতে হয়। সেটি আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ বাড়ির বড়দের কাছে । শিশুদের বয়সভেদে মানসিকতাও ভিন্ন । কীভাবে করোনাকালে শিশুদের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, ABP LIVE এর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করলেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার এবং মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার।
অভিজ্ঞ চিকিৎসক ডা. অগ্নিমিতা সরকার জানালেন, বাড়ির কেউ করোনা আক্রান্ত হলে শিশুদের করোনা পরীক্ষা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। উপসর্গ না থাকলেও পরীক্ষা করাতে হবে ।
শিশুদের আইসোলেশন এর নিয়ম-কানুন
- শিশুর যদি কোন উপসর্গ না থাকে তাহলে অনলাইন ক্লাস করতেই পারে। তাতে মনটা কিছুটা অন্যদিকে যাবে । আক্রান্ত শিশুটিকেও অন্য ঘর এবং বাথরুম ব্যবহার করতে হবে।
- সাধারণত শিশুরা সংক্রমিত হয়ে থাকে মা-বাবার জন্য । তাই বাবা মায়ের মধ্যে কেউ যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে শিশু যেন তাঁর সঙ্গেই থাকে।
তিনিও যদি বেশি অসুস্থ হন, তাহলে পরিবারের অন্য কেউ তার দেখাশোনা করতে পারে । সেক্ষেত্রে তাকে ডাবল মাস্ক ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। শিশুটির কাছাকাছি আসার পরই ভালো করে স্নান করে নিতে হবে। সম্ভব হলে হাতে গ্লাভস পরে থাকা বাঞ্ছনীয় । - শরীরে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মনিটর করতে হবে । প্রতি ৫ ঘন্টায় একবার করে অক্সিমিটার রিডিং নেওয়া প্রয়োজন । মাঝে মাঝে দেখে নিতে হবে শিশুদের জ্বর এল কিনা । টেম্পারেচার থাকলে তালিকা তৈরি করতে হবে।
- যদি দেখা যায় শিশুটির শ্বাস নিতে কোনও সমস্যা হচ্ছে বা খাওয়ার ইচ্ছে হারিয়ে ফেলছে অথবা ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়েছে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে ।
- অভিভাবক যদি করোনা আক্রান্ত হন, সেক্ষেত্রে সরাসরি ডাক্তারকে ফোন করে সম্পূর্ণ পরিস্থিতির কথা বলে, কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে পরামর্শ চাইতে হবে । কোনওভাবেই যেন কোভিড আক্রান্ত অভিভাবক বাচ্চাটিকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চেষ্টা না করেন। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।
- কোভিড আক্রান্ত শিশুর স্বাদের অনুভূতি চলে যেতে পারে। তাই এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বাচ্চাকে প্রচুর পরিমাণে জল জাতীয় জিনিস খাওয়াতে হবে ।প্রয়োজনে ওআরএস খাওয়াতে পারেন।
- এসবের মধ্যে সবথেকে চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে একটি বাচ্চাকে মানসিকভাবে তরতাজা রাখা। ঘরের মধ্যে থেকেই নানা রকম ইনডোর গেমস-ও ব্যস্ত রাখতে পারেন । ওরা যা করতে পছন্দ করে, এ সময় সেই কাজ করার স্বাধীনতা দিতে হবে। নইলে তারা মানসিকভাবে আরও চাপে পড়তে পারে।
- সম্ভব হলে অভিভাবকের শরীর যদি মোটামুটি সুস্থ থাকে তাহলে বাচ্চাকে গল্প পড়ে শোনানো বা পছন্দমতো কোনও কাজে উৎসাহিত করতে হবে।
- বাচ্চার সামনে রোগ সংক্রান্ত আলোচনা এড়িয়ে চলতে হবে।
- শরীর অসুস্থ হলেও ঘরদোর অগোছালো নোংরা রাখা চলবে না পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে ঘর মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী ।
- একই ঘর এবং একই মুখ দেখতে দেখতে বাচ্চাটা যখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে । তখন সম্ভব হলে তাদের ভিডিও কলে প্রিয় বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হয়।
- অনেক সময় দেখা যায় মা-বাবার মধ্যে কেউ একজন করোনা আক্রান্ত বা দুজনেই আক্রান্ত । কিন্তু বাচ্চাটির রিপোর্ট নেগেটিভ। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাটি যদি পরিবারের অন্য কারও সঙ্গে থাকার সুযোগ পায়, তাহলে তিনিও বাচ্চাটিকে মজার মজার কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন ।
- যদি সদ্যোজাতের মা করোনা আক্রান্ত হন তাহলে শিশুটিকে নিজের কাছে রাখা ছাড়া উপায় নেই । সে ক্ষেত্রে বাচ্চাটি মাতৃদুগ্ধ পান করতে পারে। এখনও পর্যন্ত তাতে কোনো সমস্যা হয়নি।
আইসোলেশন এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলা যেমন অত্যন্ত জরুরী তেমনই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। মনোবিদ অধ্যাপিকা (পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বারাসাত) শ্রীময়ী তরফদার এই প্রসঙ্গে শেয়ার করলেন কিছু টিপস।
- মনে রাখতে হবে যে সব বাচ্চাদের একটু বোধবুদ্ধি হয়েছে তারা টিভি দেখে বা বাড়ির বড়দের আলোচনা শুনে করোনা সম্পর্কে একটা ভয়াবহ ধারণা মনের মধ্যে তৈরি করে নেয়। তাদের মা-বাবা যখন করোনা আক্রান্ত হয় তখন অভিভাবকদের নিয়ে একটা ভয়ঙ্কর চিন্তাভাবনা শুরু করে শিশুরা । এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সহজভাবে বিষয়টি বোঝানোর জরুরী।
- নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি জানালেন, যখন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন তার দুই পৌনে দু বছরের যমজ সন্তানরা মাকে দেখার জন্য ছটফট করছিল। সেই সময় মাস্ক পরে নিরাপদ দূরত্বে থেকে কিছু সময় বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। একটু কথাবার্তা বললে বাচ্চারা মানসিকভাবে অনেকটা স্বস্তি পায়।
- কোনও কোনও বাচ্চা ভিডিও কলে বাবা-মাকে দেখে খুবই খুশি হয়। আবার কারও কারও বাবা-মাকে ছুঁতে না পারার কষ্টটা বেড়ে যায়। আক্রান্তকে বুঝতে হবে তার বাচ্চা কী চাইছে।
- চার থেকে পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চারা একটু একটু বুঝতে শেখে তাদের আতঙ্ক টা আবার অন্যরকম। তারা ছোট্ট বাচ্চার মত কান্নাকাটি করেনা। আবার মনের ভাব স্পষ্ট করে বোঝাতেও পারেনা। শুধু মনে মনে একটা পাহাড়প্রমাণ অভিমান করে । অথবা জমা হতে থাকে প্রিয়জনকে হারানোর ভয় । মনোবিদ শ্রীময়ী তরফদার জানালেন, এই সময় বাচ্চারা মা বাবাকে একটু বেশি সময় দেখতে পাচ্ছে যেহেতু তাঁরা বাড়ি থেকেই কাজ করছেন। তাই হঠাৎ করে মা-বাবার আইসোলেশন মানসিকভাবে পীড়া দিতে পারে।
কীভাবে মন ভাল রাখবেন এই বয়সী বাচ্চাদের? মনোবিদ এর মতে - - ওদের সঙ্গে যতটা সম্ভব অন্য বিষয়ে আলোচনা করুন । অযথা রোগ নিয়ে তাদেরকে মনে ভয় সৃষ্টি করবেন না আবার কোনও বাচ্চাকে ভুল ধারণা দেবেন না । পরিস্থিতি বিচার করে তার মা বাবার অবস্থা বা পরিবারের অন্য কারও অবস্থা সম্পর্কে তাদের মনে একটা স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করুন ।
- যে আঁকতে ভালবাসে, তাকে সেই সময় মনের ভাবগুলো আঁকার মাধ্যমে প্রকাশ করতে বলতে পারেন । তাদেরকে মন থেকে উৎসাহিত করার জন্য সেই আঁকা ছবি মোবাইলে তুলে তার প্রিয়জনদের বা বন্ধুদের পাঠাতে পারেন। নাচের ভিডিও তুলে প্রিয় মানুষের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন।
- কোনও শিশুর বাড়ির পরিস্থিতি যদি বেশি খারাপ হয় অর্থাৎ তার অভিভাবকদের শারীরিক অবস্থা যদি খারাপ হয়, তবে সে সম্পর্কে একটি আগাম ধারণা শিশুকে দেবেন । হঠাৎ করে কোনও দুঃসংবাদ এলে সেটা মেনে নেওয়া একটি শিশুর পক্ষে বেশি কঠিন ।
- এ সময় অনেকেই বলছেন বা অভিযোগ করছেন একটি ঘরের মধ্যে থাকতে থাকতে শিশুদের মধ্যে মোবাইল দেখার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষত আইসোলেশনে থাকলে তো বটেই । সেক্ষেত্রে শিশুটিকে জোর না করে তাকে বোঝানো দরকার -' এখন তুমি একটু বেশি সময় মোবাইল দেখছে বা ভিডিও গেম খেলছো, ঠিক আছে । কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার পর এতটা কিন্তু করা যাবে না'
মনে রাখতে হবে বড়রাই গত বছর থেকে করোনা, লকডাউন এইসব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে মানিয়ে নিতে নাকানিচোবানি খাচ্ছে। কিন্তু তাদের থেকেও বেশি কষ্টে আছে ছোটরা। যাদের জীবনের এই সময়টা মাঠে খেলাধুলা করে বা বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটি করে কাটানোর কথা !!
Check out below Health Tools-
Calculate Your Body Mass Index ( BMI )