অক্সিজেনের অভাবে মায়ের মৃত্যু দেখেছিলেন, এখন রোগীদের বাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছেন জীগনেশ
করোনার অতিমারীতে যখন বহু মানুষ অসহায় প্রয়োজন একটা সাহায্যের হাত, তখন তাঁদের কাছে বন্ধু হয়ে উপস্থিত হচ্ছেন তিনি...
সন্দীপ সরকার, কলকাতা: চোখের সামনে করোনা আক্রান্ত মায়ের মৃত্যু দেখেছেন। দেখেছেন অক্সিজেনের অভাবে মাকে ছটফট করতে। এরপরই মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন উত্তর কলকাতার ব্যবসায়ী জীগনেশ ঠক্কর।
মাদার টেরিজা বলেছিলেন, যদি তুমি একশো মানুষকে সাহায্য করতে সক্ষম না হও, তাহলে অন্তত এক জনকে সাহায্য করো।
করোনার অতিমারীতে যখন বহু মানুষ অসহায় প্রয়োজন একটা সাহায্যের হাত, তখন তাঁদের কাছে বন্ধু হয়ে উপস্থিত হচ্ছেন জিগনেশ ঠক্কর।
কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন। একবার জানতে পারলেই হল, ছুটে যান উত্তর কলকাতার খান্না মোড়ের বাসিন্দা, পেশায় এই ব্যবসায়ী। নিজেই স্কুটারে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেন অসুস্থের বাড়িতে।
জিগনেশ ঠক্কর বললেন, কতজনকে সাহায্য করেছি হিসেব রাখিনি, সিলিন্ডারগুলো কোথায় আছে জানি, ফোন এলেই যার প্রয়োজন তার কাছে নিয়ে যাই।
চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন মা। তখন চারিদিকে অক্সিজেনের হাহাকার। অনেক চেষ্টার পর একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছিলেন। কিন্তু মাকে বাঁচাতে পারেননি।
এরপরই ঠিক করেন মানব সেবায় সাধ্যমতো লড়াই করে যাবেন। কেউ অক্সিজেনের জন্য ছটফট করছেন, এখবর শোনামাত্রই ভয় বা দেরি না করে পৌঁছে যান রোগীর বাড়িতে।
শুরুটা হয়েছিল একটি সিলিন্ডার দিয়ে। এখন জিগনেশের জিম্মায় পাঁচ-পাঁচটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। সবকটিই রয়েছে কারও না কারও বাড়িতে। একজনের প্রয়োজন ফুরোলে, আরেক জনের বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রাণ বায়ু।
করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে এক সময় নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন মারণ ভাইরাসে। তবে লড়াই করে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন জিগনেশ। হাসপাতাল থেকে ফিরে ফের নেমে পড়েছেন সেবায়।
এমনই আরেক অনুপ্রেরণার নাম প্রতিমা দেশমুখ। হাওড়ার উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতালে চিফ মেট্রন। বয়স ৬০-এর কোঠা পেরিয়েছে অনেকে আগেই। করোনা ওয়ার্ডে মানুষের সেবা করতে করতে আক্রান্ত হয়েছেন কোভিডে।
৩ দিন অচৈতন্য থাকার পর, ৩ বার পজিটিভ রিপোর্ট আসার পরেও জয় করেছেন করোনাকে। করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কার মধ্যেও কাজ করে চলেছেন অকুতোভয় প্রতিমা।