এখনই লোকসভা ভোট হলে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও ২০১৪-র তুলনায় ভোট শতাংশ কমবে, ইঙ্গিত এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএস জনমত সমীক্ষায়
কলকাতা: লোকসভার আসন সংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ঝড় তুলেছিল বিজেপি। মোদী সরকারের চার বছরের মাথায় কী ভাবছে এই রাজ্যগুলি? এই চার বড় রাজ্যের মানুষের মন আঁচ করার চেষ্টা করেছি আমরা।
উত্তরপ্রদেশ:
উত্তরপ্রদেশে লোকসভা আসন ৮০টি। এখানকার বারাণসী থেকেই নরেন্দ্র মোদী সাংসদ। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জোট একাই পেয়েছিল ৭৩টি আসন। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ৫টি এবং কংগ্রেস মাত্র ২টি আসন পেয়েছিল। ২০১৪-র নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি জোট পেয়েছিল ৪৩ শতাংশ ভোট। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএস-এর সমীক্ষা অনুযায়ী চার বছর পর এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে বিজেপি জোটের ভোট কমে হতে পারে ৩৫ শতাংশ। গত লোকসভা নির্বাচনে একা লড়ে অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি পেয়েছিল ২২ শতাংশ ভোট। সমীক্ষা অনুযায়ী, এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে এসপি’র ভোট বেড়ে হতে পারে ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত লোকসভা নির্বাচনে মায়াবতীর দল বহুজন সমাজ পার্টি উত্তরপ্রদেশে ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে বিএসপি’র ভোট সামান্য কমে হতে পারে ১৯ শতাংশ। কিন্তু, তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই সমীক্ষা অনুসারে অখিলেশ ও মায়াবতীর প্রাপ্ত ভোট যোগ করলে দাঁড়াচ্ছে ৪৬ শতাংশ। উল্টোদিকে বিজেপি জোটের ভোট ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ, পিসি-ভাইপো কিন্তু একজোট হলে বিজেপিকে টেক্কা দিতে পারে। গাঁধী পরিবারের বংশভিটে উত্তর প্রদেশে গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মাত্র ৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএস-এর সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে কংগ্রেসের ভোট সামান্য বেড়ে হতে পারে ১২ শতাংশ। গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে অন্যান্যর ঝুলিতে গিয়েছিল ৭ শতাংশ ভোট। এবারও তারা সেই ভোট ধরে রাখতে পারে। অর্থাৎ প্রশ্ন হল, যদি অখিলেশ-মায়াবতীর সঙ্গে রাহুল একজোট হন, তাহলে কি ২০১৪-য় বিজেপিকে দিল্লি পৌঁছনোর অন্যতম প্রধান রাস্তা উত্তরপ্রদেশে ধাক্কা খেতে পারেন মোদী-অমিত শাহ?
মহারাষ্ট্র:
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে মোদী ঝড় উঠেছিল। ৪৮ আসন বিশিষ্ট মহারাষ্ট্রে বিজেপি পেয়েছিল ২৩টি আসন। তাদের শরিক শিবসেনা ১৮টি আসন পেয়েছিল। একা লড়ে শরদ পওয়ারের এনসিপি চারটি এবং কংগ্রেস মাত্র দু’টি লোকসভা আসন পেয়েছিল। স্বভিমানী পক্ষ পেয়েছিল একটি আসন। কিন্তু, তারপর আরব সাগর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। শরিক শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক এখন অত্যন্ত তিক্ত। কেন্দ্র এবং রাজ্যে এখনও দু’দল সরকারে থাকলেও, উদ্ধব ঠাকরে জানিয়ে দিয়েছেন ২০১৯-এ তারা একা লড়বে। উল্টোদিকে, চার বছর আগে লোকসভা ভোটে আলাদা লড়লেও, ফের একবার সনিয়া গাঁধীর দলের সঙ্গে শরদ পওয়ারের জোট হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা। এই পরিস্থিতিতে এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহারাষ্ট্রে কী হতে পারে? ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি মহারাষ্ট্রে পেয়েছিল ২৭ শতাংশ ভোট। শরিক শিবসেনা পেয়েছিল ২৪ শতাংশ ভোট। অর্থাৎ দু’দল মিলিয়ে ৫১ শতাংশ ভোট। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি সিএসডিএস-এর সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে মহারাষ্ট্রে বিজেপির ভোট বেড়ে হতে পারে ২৯ শতাংশ। শিবসেনার ভোট কমে হতে পারে ১৯ শতাংশ। ২০১৪-য় কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে ১৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে তারা ২২ শতাংশ ভোট পেতে পারে। শরদ পওয়ারের এনসিপি ২০১৪ সালে মহারাষ্ট্রে ১৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখন তারা বেড়ে ১৮ শতাংশ ভোট পেতে পারে। বিগত লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে অন্যান্যর ঝুলিতে গিয়েছিল ১৪ শতাংশ ভোট। এখন তারা কমে ১২ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এখন রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন হল, দেবেন্দ্র ফড়নবীশ কি পারবেন বিজেপির সাফল্য ধরে রাখতে? না কি মোদী বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সবচেয়ে পুরনো শরিক শিবসেনাই বিজেপির অঙ্ক গুলিয়ে দিতে পারে ২০১৯-এ?
মধ্যপ্রদেশ:
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে মোদী ঝড় উঠেছিল মধ্যপ্রদেশে। এখানে লোকসভার ২৯টি আসনের মধ্যে ২৭টিই দখল করেছিল বিজেপি মাত্র দু’টি লোকসভা আসন পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু, এখনই লোকসভা ভোট হলে কি সেখানে ফের একবার মোদী-ঝড় উঠতে পারে? ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা ভোট হলে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট এক ধাক্কায় কমে হতে পারে ৪০শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএসের সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা ভোট হলে মধ্যপ্রদেশে বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে কংগ্রেস প্রায় ৫০শতাংশ ভোট পেতে পারে। মধ্যপ্রদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, মায়াবতীর বিএসপি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে তারা ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে অন্যান্যর ঝুলিতে গিয়েছিল ৪ শতাংশ ভোট। এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে তারা একই ভোট ধরে রাখতে পারে। চলতি বছরেই মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। গত প্রায় দেড় দশক ধরে মধ্যপ্রদেশ বিজেপির দখলে। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে শিবরাজ সিংহ চৌহান। বারবার ক্ষমতা ধরে রাখতে পটু চৌহান ইতিমধ্যেই বিজেপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি সংসদীয় বোর্ডেও জায়গা পেয়েছেন! এহেন শিবরাজ কি পারবেন ক্ষমতা ধরে রাখতে? উল্টোদিকে ভারতীয় রাজনীতির পোড় খাওয়া হেভিওয়েট কমল নাথকে প্রদেশ সভাপতি করে মধ্যপ্রদেশ পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়েছে কংগ্রেস। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের মেলবন্ধন ঘটাতে এবং গোষ্ঠীবাজি বন্ধ করতে, কমলনাথ, দিগ্বিজয় সিংহের সঙ্গে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে জুড়ে দিয়েছেন রাহুল গাঁধী। কিন্তু, এই ত্রয়ী কি পারবে কংগ্রেসকে দীর্ঘদিন বাদে মধ্যপ্রদেশে সাফল্যের মুখ দেখাতে? ২০১৩-র বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ৪৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু, এখনই বিধানসভা ভোট হলে তারা কমে গিয়ে ৩৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে। পাঁচ বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশে পেয়েছিল ৩৬ শতাংশ ভোট। সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই বিধানসভা ভোট হলে তারা বিজেপিকে টেক্কা দিয়ে ৪৯ শতাংশ ভোট পেতে পারে। ২০১৩-র বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে মায়াবতীর দল ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এখনই বিধানসভা ভোট হলে তারা কমে ৫ শতাংশ ভোট পেতে পারে। ২০১৩-র বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে অন্যান্যর ঝুলিতে গিয়েছিল ১৩ শতাংশ ভোট। এখনই বিধানসভা নির্বাচন হলে তারা ১২ শতাংশ ভোট পেতে পারে। অর্থাৎ সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা ভোট হলে মধ্যপ্রদেশে ধাক্কা খেতে পারে বিজেপি। লাভ হতে পারে কংগ্রেসের। উল্টোদিকে সমীক্ষায় ইঙ্গিত এখনই বিধানসভা ভোট হলে দেড় দশক বাদে মধ্যপ্রদেশ বিজেপির হাতছাড়া হতে পারে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রদেশে নির্বাসিত কংগ্রেস, সাফল্যের মুখ দেখতে পারে।
রাজস্থান:
২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে যে রাজ্যগুলিতে মোদী ঝড় উঠেছিল, তার মধ্যে অন্যতম মরু রাজ্য রাজস্থান! এখানে লোকসভার ২৫টি আসনের মধ্যে ২৫টিই জিতেছিল বিজেপি। মোদী সরকারের চার বছর পূর্তিতে কী বলছে বিজেপি শাসিত রাজস্থান? লোকসভা ভোট যদি এখনই হয় তাহলে কি মরু রাজ্যে ফের মোদী ঝড় উঠতে পারে? ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানে বিজেপি ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবিপি আনন্দ-লোকনীতি-সিএসডিএস-এর সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে তাদের ভোট এক ধাক্কায় কমে ৪৫ শতাংশ হতে পারে। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানে কংগ্রেস ৩০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কিন্তু, একটিও আসন পায়নি। আর সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে সেই কংগ্রেসেরই ভোট একধাক্কায় বেড়ে ৪২ শতাংশ হতে পারে। অন্যদিকে চার বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে রাজস্থানে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি পেয়েছিল ২ শতাংশ ভোট। সমীক্ষা অনুযায়ী এখনই লোকসভা নির্বাচন হলে মায়াবতীর দলের ভোট বেড়ে হতে পারে ৩ শতাংশ। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে রাজস্থানে অন্যানের ঝুলিতে গিয়েছিল ১২ শতাংশ ভোট। এখন তারা পেতে পারে ১০ শতাংশ ভোট। চলতি বছরের শেষেই রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচন। এখন সেখানে ক্ষমতায় বিজেপির বসুন্ধরা রাজে সরকার। সম্প্রতি দু’টি লোকসভা উপ নির্বাচনে বিজেপির থেকে আসন ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। তাতেই রাজ্য পুনর্দখলের গন্ধ পেয়ে নতুন উদ্যমে সচিন পায়লটের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে বড় প্রশ্ন, বিতর্কে জেরবার বিজেপির বসুন্ধরা সরকার কি রাজস্থানে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে? ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে বিজেপি পেয়েছিল ৪৫ শতাংশ ভোট। ক্ষমতা দখল করেছিল তারা। কিন্তু এখনই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন হলে বসুন্ধরার নেতৃত্বাধীন বিজেপির ভোট কমে হতে পারে ৩৯ শতাংশ। উল্টোদিকে পাঁচ বছর আগে রাজস্থানের যুদ্ধে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৩ শতাংশ ভোট। কিন্তু, এখনই বিধানসভা নির্বাচন হলে কংগ্রেসের ভোট একলাফে ১১ শতাংশ বেড়ে হতে পারে ৪৪ শতাংশ। মায়াবতীর দল বিএসপি ২০১৩-র বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে পেয়েছিল ৩ শতাংশ ভোট। এখন ভোট হলে তারাও বেড়ে পেতে পারে ৪ শতাংশ ভোট। পাঁচ বছর আগে বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে অন্যানের ঝুলিতে গিয়েছিল ১৯ শতাংশ ভোট। এখন তারা কমে ১৩ শতাংশ ভোট পারে। অর্থাৎ, সমীক্ষা অনুযায়ী রাজস্থান বিজেপির হাতছাড়া হতে পারে, ফের একবার হাতের হাত ধরতে পারেন মরুবাসী।