এক্সপ্লোর
Advertisement
চাকরি গেল কোথায়? উত্তর খুঁজছেন গুজরাতের তরুণরা
রাধানপুর, পাটন,ভডগাম:তেল চকচকে রাজ্য সড়ক। এতটুকু ঝাঁকুনি নেই গাড়িতে। কিন্তু যাত্রা পথ অনেকটাই। তাই তরুণযাত্রীরা একঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য ডুবে গিয়েছেন স্মার্টফোনে। বহির্জগত্ থেকে এই বিচ্ছিন্নতার মধ্যে তাঁদের ঠোঁটের নড়াচড়া, একটু-আধটু গুনগুন থেকে বোঝা যায়, তাঁরা বলিউড বা আঞ্চলিক গান বা কমেডি ক্লিপে নিমগ্ন।
পাটন শহর থেকে কুচ জেলার গাঁধীধামে যাবেন প্রিন্স পারমার। ২৩ বছরের এই তরুণ জমিহীন কৃষকের ছেলে। গাঁধীধামের একটি পোশাক কোম্পানির সুপারভাইজার এই দলিত সন্তান। পদের নাম বেশ ভারী হলেও মাইনে নিতান্তই সামান্য। মাসে ১০ হাজার টাকা। তাও তিনদিন ছুটি নিলে মাইনের অর্ধেক কেটে নেয় কোম্পানি। চাকরি-বাকরির ব্যাপার নিয়ে কথা বলতেই ক্ষোভ আর হতাশা ঝরে পড়ল এই দলিত তরুণের গলায়। বললেন, বলতে পারেন, কত টাকা আর মাইনে পাওয়া যায়? কী-ই বা পড়াশোনা করা যায়?
আর মাত্র দুদিন পরই গুজরাত বিধানসভার দ্বিতীয় দফার ভোট। পারমারের কথায় তরুণ সম্প্রদায়ের উদ্বেগই শুধু ধরা পড়ল, এমনটা কিন্তু নয়। সেই সঙ্গে ভোটের ময়দানে থাকা দলগুলির সামনেই এটা একটা বার্তা।
শুধু পারমারই নয়, নিশ্চিত অথচ সুষ্ঠু চাকরির খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন গুজরাতের অসংখ্য তরুণ।
রাধানপুরের জৈন বোর্ডিং লোকালিটিতে কংগ্রেসের অস্থায়ী অফিসে দুই সঙ্গীকে নিয়ে এলেন।কোরাদিয়া ওয়াসিমভাই মেহবুবভাই।স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে আইটিআই-এ একটি কোর্স করছেন তিনি। স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতা বললেন, কোরাদিয়া পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন। কিন্তু কংগ্রেসের ওই কর্মী চলে যেতেই ২০ বছরের তরুণ বললেন, তিনি কোনও কাজই করেন না। একটা চাকরির খোঁজ করছেন। তিনি জানালেন, পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাবা গাড়ির চালক। মাসে হাজার পাঁচেক টাকা আয়। এই অবস্থায় পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন তিনি। কথাবার্তায় উঠে এল মেহবুবেরও চাহিদা একটা ভদ্রস্থ কাজ।
পাটনের সামি তেহশিলে যাওয়ার পথে দীপকভাই দেবীপূজক নিজের চিনে তৈরি ট্যাবলেট বের করে সাম্প্রতিক বন্যায় তাঁদের এলাকার বিধ্বস্ত ছবি দেখালেন। তিনি বললেন, আমাদের সমস্ত ফসল বন্যার জলে ডুবে গিয়েছে। সরকার বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ফসল নষ্ট হওয়ার ক্ষতিপূরণ হবে সরকারের পক্ষে থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য এখন পাওয়া যায়নি।
দীপক বলছেন, তিনি আইন নিয়ে পড়বেন। তিনিও চাইছেন সংরক্ষণ। সংরক্ষণের সুযোগ পেলে তিনি একটা নিশ্চিত সরকারি চাকরি জুটিয়ে নিতে পারবেন বলে আশাবাদী দীপক।
দীপক বলছেন, সারা দেশে তাঁদের সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যা দেড় কোটি। গুজরাত সরকার তাঁদের অনগ্রসর তালিকার অন্তর্ভূক্ত করেছে। দীপকের দাবি, তাঁদের সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক সংরক্ষণের ব্যবস্থা করুক সরকার।
দেবীপূজক সম্প্রদায় ওবিসি-র অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু ওবিসি-দের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের মধ্যে আলাদা কোটা চাইছে এই সম্প্রদায়। কারণ, তাদের দাবি, তারা এতটাই প্রান্তিক যে অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অবস্থায় নেই।
ভডগাম বিধানসভা আসনের ছাপ্পি গ্রামের ভবেশ কুমারের গলাতেও একই ধরনের হতাশার সুর। ২৯ বছরের যুবক এমএ, বিএড করেছেন। কিন্তু চাকরি জোটেনি। পেট চালাতে একটা মোবাইলের দোকান চালান তিনি।
রাজ্যের ভোটের প্রচার যখন ধর্মীয় মেরুকরণের, ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নিয়ে উত্তাল তখন তরুণ সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে উচ্চবাচ্য শোনা যাচ্ছে না প্রচারে।
হার্দিক পটেলের নেতৃত্বে পতিদার আন্দোলন আসলে একই ধরনের হতাশারই প্রতিফলন।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর তথ্য অনুযায়ী, পুঁজি নির্ভর শিল্পের হাত ধরেই এগিয়েছে গুজরাতের অর্থনীতি। কিন্তু ওই শিল্প পর্যাপ্ত পরিমাণ কাজ তৈরি করতে পারেনি। তারওপর গত কয়েক বছরে উত্পাদন এক ধাক্কায় অনেকটাই পড়ে গিয়েছে।
জিএসটি ও নোট বাতিলের ধাক্কায় ক্ষতি হয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের। এতে কাজের সুযোগ আরও কমেছে।
গুজরাতের তরুণদের এই হতাশার প্রতিফলন ভোটবাক্সে পড়বে কিনা, তা বোঝা যাবে ১৮ ডিসেম্বর।
খবর (News) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে
আরও দেখুন
Advertisement
ট্রেন্ডিং
Advertisement
Advertisement
সেরা শিরোনাম
খবর
কলকাতা
খবর
খবর
Advertisement