সবাই থাকবে, বিজেপি থাকবে না, লালুপ্রসাদের সভা থেকে কটাক্ষ মমতার
পটনা: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে সাম্প্রদায়িক হিংসার অভিযোগে ভর করে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিহারের সভা থেকে নোট বাতিল নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে টানলেন ইন্দিরা জমানার প্রসঙ্গ। তৃণমূলনেত্রী বললেন, ভয় পাই না। লড়াই করি। ভয় পেলে হবে না। লালুপ্রসাদ যাদবের ডাকে বিহারে সভা। কিন্তু, সেখানে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধী, মায়াবতী গরহাজির। ফলে বিজেপি-বিরোধী জোটের সভায় লালু ছাড়া স্পটলাইট ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকেই। তিনিও লাখো মানুষের ভিড়কে হতাশ করেননি। শুরু থেকে শেষ অবধি চড়া সুরে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি এবং মোদী সরকারকে। কখনও তুলেছেন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ। এদিন তৃণমূলনেত্রী বলেন, এই গভর্নমেন্ট অফ দি এজেন্সি, বাই দি এজেন্সি, ফর দি এজেন্সি। বিরোধিতা করলেই জেলে ঢোকাচ্ছে। আমার লোকসভার দলনেতাকে জেলে ঢুকিয়েছে। আমিও বলেছি, কত জেল বানাবে। বিজেপি যা বলবে ঠিক, বাকি সবাই চোর। কখনও সরব হয়েছেন সাম্প্রদায়িক হিংসা প্রসঙ্গে। বললেন, দাঙ্গা লাগানোর কাজ। রোজ দাঙ্গা করার চেষ্টা। একে আটকাবই। পরক্ষণেই আবার ছুড়ে দিয়েছেন চ্যালেঞ্জ। তৃণমূলনেত্রী বলেছেন, হামসে জো টকরায়েগা, চুরচুর হো জায়েগা। নোট বাতিল প্রসঙ্গে মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে এদিন তৃণমূলনেত্রী টেনে আনেন ইন্দিরা জমানায় সঞ্জয় গাঁধীর বিতর্কিত নির্বীজকরণ পর্বের প্রসঙ্গও। বলেন, নসবন্দি করে ইন্দিরা গেছিল। নোটবন্দি করে মোদী সরকার যাবে। কেন করল, আজও বোঝা যায়নি। আক্রমণ শানিয়েছেন জিএসটি নিয়েও। বলেছেন, জিএসটি-র নামে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ভোটে দেখা গিয়েছে, বামেদের সরিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে বিজেপি। সামনের বছর আবার রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ভিনরাজ্যে দাঁড়িয়ে মমতার মোদী সরকারকে আক্রমণ থেকে স্পষ্ট, সময় যত এগোচ্ছে তৃণমূল-বিজেপির লড়াইয়ের পারদ ততই চড়ছে। দু’বছর আগে বিহারের মাটিতে মাথা তুলেছিল লালু-নীতীশ-রাহুলের মোদী-বিরোধী মহাজোট। যারা দেশজুড়ে প্রবল মোদী হাওয়ার মধ্যেও বিহার বিধানসভায় বিজেপির জয়রথ রুখে দিয়েছিল। এবার টার্গেট লোকসভা। আর সেই বিহারেই আবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হল বিরোধীরা। লালুপ্রসাদের ডাকা সেই সভামঞ্চ থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়লেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, সবাই থাকবে, বিজেপি থাকবে না। একদিকে, বিজেপিকে আক্রমণ, তো অন্যদিকে বিজেপি বিরোধী জোটকে শক্তিশালী করার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিনের মঞ্চ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, বিরোধীরা একজোট থাকলে মোদী সরকার ২০১৯-এ আর জিতে ফিরবে না। বিরোধী ঐক্যের ছবি স্পষ্ট করে, এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় শোনা গিয়েছে লালুপ্রসাদের প্রশংসা। বলেন, যারা মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে, মানুষ তাকে ধোঁকা দেবে। নীতীশকে ছাড়বে, লালু থাকবে। কখনও আবার তিনি তারিফ করেছেন অখিলেশ, তেজস্বীর মতো তরুণ নেতাদের। তৃণমূলনেত্রী বলেন, অখিলেশ, তেজস্বী এগিয়ে যাক। বিহারে সভা, আর নীতীশ কুমারের প্রসঙ্গ আসবে না, তা কীকরে হয়! বিহারে মহাজোটের মুখ্য চরিত্র নীতীশ কুমার এখন মোদীর ঘরের লোক। এই প্রেক্ষিতে তাঁর বিরুদ্ধেও সুর চড়াতে ছাড়েননি মমতা। বলেছেন, যারা বিজেপির সঙ্গে তারাও থাকবে না। মানুষকে ধোঁকা দিলে মানুষও ধোঁকা দেবে। বিশ্বস্ততা প্রসঙ্গেও নীতীশ ছাড়া বাকি সকলের নাম করে ঘুরিয়ে খোঁচা দিতেও ছাড়েননি। বললেন, লালু, শরদ, অখিলেশকে বিশ্বাস করতে পারি। লালুপ্রসাদের ডাকে বিরোধীদের সভায় এদিন ভিড় করেন কাতারে কাতারে সমর্থক।