Dhankhar Tweets: ‘পছন্দমতো ভোট দেওয়ার মূল্য চোকাচ্ছেন মানুষ’, শীতলকুচি সফরের আগে ট্যুইট রাজ্যপালের
জগদীপ ধরকড় লেখেন, "অভূতপূর্ব ভোট-পরবর্তী হিংসার মাঝে দাঁড়িয়ে চটকদারি দেখানোর সময় নেই..."
কলকাতা: ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ রাজ্যপালের। জগদীপ ধনকড়ের ট্যুইট, "এ ধরনের নজিরবিহীন সঙ্কটের সময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রয়োজন। অভূতপূর্ব ভোট-পরবর্তী হিংসার মাঝে দাঁড়িয়ে চটকদারি দেখানোর সময় নেই। আমরা দু জনেই সাংবিধানিক পদে আসীন। আমি নিশ্চিত আপনি সংবিধানকে অস্বীকার করবেন না। কারণ আপনি সংবিধান মেনে চলার শপথ নিয়েছেন। সংবিধানের ধারাগুলো যে অস্বীকার করা যায় না, তা পড়ার বইতেও লেখা থাকে।"
রাজ্যপাল আরও লেখেন, "খেয়াল করুন, চারটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্বাচন হয়েছে। শুধুমাত্র এখানেই হিংসার ঘটনা ঘটেছে। নিজেদের পছন্দমতো ভোট দেওয়ার মূল্য চোকাচ্ছেন মানুষ। কীভাবে এ ধরনের ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব? এ তো গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার সামিল।"
রাজ্যপালের জেলা সফর নিয়ে গতকাল থেকেই রাজভবন ও নবান্নর মধ্যে পত্র সংঘাত চলছেই। আজ রাজ্যপাল শীতলকুচি যাচ্ছেন। রাজ্যপাল জেলায় জেলায় ঘুরে হিংসায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে দেখবেন।
গতকালই তিনি ট্যুইটে লেখেন, বিএসএফের হেলিকপ্টারে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় কোচবিহারে যাব। সেখান থেকে ভোট পরবর্তী হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাব। মাথাভাঙা, শীতলকুচি, সিতাই ও দিনহাটায় যাব। কোচবিহারের সার্কিট হাউসে মানুষের সঙ্গে কথা বলব। পরের দিন সকালে হেলিকপ্টারে অসমে যাব। সেখানকার রানপাগলি ও শ্রীরামপুর ক্যাম্পে যাব।
আর রাজ্যপালের এই সফর নিয়েই তাঁকে কড়া বার্তা দিয়ে, এক্কেবারে সম্মুখসমরে নেমেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালকে দেওয়া চিঠিতে তিনি স্পষ্ট বলেছেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি পাওয়ার পরই, রাজ্যপালের সচিব তাঁর জেলা সফর চূড়ান্ত করবেন। সেই সফর ব্যক্তিগত হোক বা সরকারি, রাজ্যপালের সচিব সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলবেন।
ধনকড়কে লেখা চিঠিতে মমতা বলেন, সোশাল মিডিয়া থেকে জানতে পারলাম, একতরফা ভাবে বৃহস্পতিবার আপনি (রাজ্যপাল) কোচবিহার ও অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কয়েক দশকের প্রথা ভেঙে জেলা সফর করছেন। আমি তাই আশাকরি, আপনি রীতি মেনে চলবেন এবং এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন।
শুধু তাই নয়, চিঠিতে প্রশাসনিক কর্তাদের রাজ্যপালের ডেকে পাঠানো নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বরের চিঠিতে আপনাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, যে মুখ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাকে এড়িয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক না করতে এবং তাঁদের ডেকে না পাঠাতে। আমি জানতে পেরেছি, আপনি জেনে বুঝে তা এড়িয়ে যাচ্ছেন। শুধু সরকারি কর্মীদের নির্দেশ দেওয়াই নয়, তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি রিপোর্ট তলব করছেন। আপনাকে আমি অনুরোধ করছি ও পরামর্শ দিচ্ছি, এগুলো করবেন না। মুখ্যসচিবকে বলছি, নিয়ম মেনে পদক্ষেপ করতে।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া চিঠির কিছুক্ষণের মধ্যেই ফের ট্যুইট করে রাজ্যপাল বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির প্রতিক্রিয়ায়, আমি তাঁকে অনুরোধ করছি, তিনি যেন যে সংবিধানকে সাক্ষী করে শপথ নিয়েছেন, সেই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরও একবার ভেবে দেখেন। মানুষ যে নিদারুণ দুঃখে রয়েছে, এখন সেই দুঃখ মোচনের সময়। আমি আশ্বস্ত করছি যে, আমি সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে থেকে সমস্ত ধরনের সহযোগিতা করব।
এরইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে প্রথা না ভাঙার যে অনুরোধ করেছিলেন, তার পাল্টা সংবিধানের ১৫৯ ধারার উল্লেখ করে রাজ্যপাল বলেছেন, সংবিধানের ১৫৯ ধারা অনুযায়ী ‘আমার সম্পূর্ণ সাধ্য ও ক্ষমতা অনুযায়ী আমি সংবিধান ও আইন রক্ষা করব এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করব। আমার শপথবাক্য অনুযায়ী যা করা উচিত, আমি তার সবটাই করব।
এরইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে এই দু’ পাতার চিঠি দিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে ফের একবার গণতন্ত্রের লজ্জা আখ্যা দিয়ে, রাজ্যপাল দাবি করেছেন, বারবার তাঁর সতর্কবার্তা সত্ত্বেও প্রশাসন, সাংবিধানিক নিয়ম কানুন ও আইনের শাসন থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে।