(Source: ECI/ABP News/ABP Majha)
মেধা তালিকায় স্কুলকে ঢোকাতে বেনজির ‘জালিয়াতি’, পরীক্ষার আগেই ফার্স্ট বয়ের ‘হাতে উত্তর’, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক
জলপাইগুড়ি: মাধ্যমিকে পাস করার জন্য এতদিন ছাত্রদের টুকলি করতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু, এবার মাধ্যমিকে স্কুলকে মেধাতালিকায় তুলে আনতে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠল বেনজির জালিয়াতির অভিযোগ।
স্কুলের অন্য শিক্ষকদের দাবি, পরীক্ষার অনেক আগেই প্রশ্নপত্র বার করে, তার উত্তর লিখে স্কুলের ফার্স্ট বয়ের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন প্রধান শিক্ষক। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি সুভাষনগর হাই স্কুলে। এক-আধ দিন নয়, স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, মাধ্যমিক পরীক্ষার একেবারে শুরু থেকে এই কাণ্ড ঘটিয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায়।
অভিযোগ, সকাল সাড়ে ১০টায় প্রশ্নের প্যাকেট আসে স্কুলে। প্রশ্নের প্যাকেট আসার পরেই নিয়ে যাওয়া হত পাশের ঘরে। ২ মিনিটের মধ্যেই খোলা হত প্রশ্নের প্যাকেট। প্রশ্নের প্যাকেট খুলে উত্তর বলে দেওয়া হত ফার্স্ট বয়কে। ১১টার মধ্যেই উত্তর পৌঁছে যেত ফার্স্ট বয়ের হাতে। ভুগোল পরীক্ষার দিন শিক্ষিকার বাড়িতে যায় প্রশ্নপত্র। সেখান থেকেই উত্তর লিখে আসত ফার্স্ট বয়ের হাতে।
ভাল ফলের জন্য মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে ছাত্রদের উজ্জীবিত করেন শিক্ষকরা। কিন্তু, ময়নাগুড়ির এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক যা করেছেন বলে অভিযোগ, তাতে হতভম্ব অন্য শিক্ষকরা। শুধু ফার্স্ট বয় নয়, স্কুলের আরেক পরীক্ষার্থীকেও প্রধান শিক্ষক এরকম অসৎ উপায়ে সাহায্য করেছেন বলে অভিযোগ। জানা গিয়েছে, অঙ্ক পরীক্ষার দিনও বেনজির ‘জালিয়াতি’ করা হয়। অশিক্ষক কর্মীর মেয়েকে সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলে কড়া নজরদারি থাকে। তার মধ্যে এমনটা সম্ভব হল কী করে? বিষয়টি প্রথম নজরে আসে এই স্কুলের পরিদর্শক বিশ্বনাথ ভৌমিকের। তাঁর দাবি, সকাল সোয়া এগারোটায় প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খোলার কথা থাকলেও অঙ্ক পরীক্ষার দিন তিনি দেখেন প্রধান শিক্ষক পৌনে এগারোটা নাগাদই প্যাকেট খুলে ফেলছেন।
নিয়মমাফিক অতিরিক্ত সুপারভাইজারের উপস্থিতিতে প্রশ্নের প্যাকেট খোলার কথা থাকলেও, তাঁকে প্রধান শিক্ষক পান আনতে পাঠিয়ে দেন বলে অভিযোগ। কিন্তু, পুরো ঘটনা দেখে ফেলেন স্কুলের পরিদর্শক বিশ্বনাথ ভৌমিক। তিনি বলেন, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়েছে। আমার কাছে কাল থেকে অনেকে অভিযোগ জানাচ্ছেন। সলভ করানো হচ্ছে। এটা বাংলা থেকে অঙ্ক পর্যন্ত হয়েছে। ফার্স্ট বয়কে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। পুরোটা পর্ষদকে জানিয়েছি।
প্রধান শিক্ষক অবশ্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যারা অভিযোগ করছে, ঘটনা প্রমাণ করে দেখাক। এছাড়া কিছু বলব না। সুযোগ পেয়ে যা খুশি বলে যাচ্ছে। অঙ্কের দিন খুলেছিলাম। যুক্তি ছিল। কাউন্সিলকে জানাব। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে শুক্রবার প্রধান শিক্ষক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের শুক্রবার তলব করা হয়েছে। যে ছাত্রকে অসৎ উপায়ে সাহায্য করা হয়েছে, তাঁর পরীক্ষাও বাতিল হতে পারে বলে জানিয়ছে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়।
ময়নাগুড়ি স্কুলের ফার্স্ট বয়ের পরিবার অবশ্য কোনও অসৎ উপায় নেওয়ার অভিযোগ মানতে চায়নি। তার দাবি, সব মিথ্যে কথা বলা হচ্ছে। ময়নাগুড়ি বয়েজে সিট পড়ে। ১০.৪৫-এ বেরোত। কীভাবে পৌঁছে দেবে। অভিযোগের মূল্য নেই। প্রথম দিন থেকে নাকি বলা হচ্ছে। ভৌমিকের সঙ্গে ব্যক্তিগত রেষারেষি আছে।
মাধ্যমিকের মেধা তালিকায় স্কুলের নাম তুলতে এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন জালিয়াতির যে অভিযোগ উঠেছে, তাতে হতবাক শিক্ষামহল।