রানাঘাট সন্ন্যাসিনী ধর্ষণকাণ্ডে বাংলাদেশি নজরুলের আমৃত্যু হাজতবাস, ৫ জনের ১০ বছর জেল
কলকাতা: রানাঘাটে বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী ধর্ষণকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত বাংলাদশি নজরুল ইসলামকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সাজা দিল আদালত। তার ৫ সঙ্গীকে ১০ বছরের জেলহাজতের সাজা দেন বিচারক। ‘ক্ষমার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এক সন্ন্যাসিনীর অন্তরাত্মা এতে আঘাত পেয়েছে। আমি মনে করি, একজন সন্ন্যাসিনীর সমস্ত সত্ত্বাকে যে চরম ভাবে লাঞ্ছিত করেছে, সে সর্বোচ্চ সাজা পাওয়ারই যোগ্য। সন্ন্যাসিনীর অন্তরাত্মাকে আঘাত, যিশুও ক্ষমা করবেন না।’ এই মন্তব্য করেই বুধবার রানাঘাটকাণ্ডে সাজা ঘোষণা করেন নগর দায়রা আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কুমকুম সিংহ। গতকালই, এই মামলার সকল ৬ অভিযুক্ত-- নজরুল ইসলাম, মিলন কুমার সরকার, ওহিদুল ইসলাম, মহম্মদ সেলিম শেখ, খালেদার রহমান এবং গোপাল সরকারকে ধর্ষণ ও ডাকাতি ও ষড়যন্ত্র করার জন্য বিভিন্ন ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এদিন ৫ দোষী সাজা কমানোর আবেদন জানায়। এর বিরোধিতা করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায় সরকারপক্ষ। এরপরই বিচারক জানিয়ে দেন, ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত নজরুল ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হল। অনাদায়ে আরও আড়াই বছর কারাদণ্ড। এই সময় বিচারক উল্লেখ করেন, এখনকার আইন অনুযায়ী, যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাস। এর সঙ্গে ডাকাতির দায়ে নজরুলের ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ২০ হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। পাশাপাশি, ষড়যন্ত্রের দায়ে তার ১০ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া, আরও এক মহিলাকে নিগ্রহ ও যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণিত হয় নজরুলের বিরুদ্ধে। সেখানেও তাকে যথাক্রমে, পাঁচ ও তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দেয় আদালত। অনাদায়ে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা। ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অপরাধে গোপাল সরকারের ১০ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বিচারক। সঙ্গে, দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার দায়ে ৭ বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা। বাকি ৪ জন অর্থাৎ, মিলন সরকার, ওহিদুল ইসলাম, মহম্মদ সেলিম শেখ এবং খালেদুল রহমানকে ডাকাতি ও ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অপরাধে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অনাদায়ে আড়াই বছর কারাদণ্ড। বিচারক জানিয়েছেন, জরিমানার অর্ধেক টাকা নির্যাতিতাকে দিতে হবে। তিনি যেহেতু আধ্যাত্মিক জগতের মানুষ, তাই নির্যাতিতা যদি ওই টাকা নিতে অস্বীকার করেন, তাহলে তিনি যে সংস্থার সঙ্গে যুক্ত, তাদের দিতে হবে। বিচারক জানান, সব সাজা একসঙ্গে চলবে। শাস্তি ঘোষণার পর কনভেন্ট অফ জেসাস অ্যান্ড মেরির সুপিরিয়র জেনারেল সিস্টার মনিকা জোসেফ বলেন, রেড লেটার ডে। বিচার পেলাম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। ২০১৫ সালের ১৪ মার্চ ভোররাত। রানাঘাটের গাঙনাপুর কনভেন্ট স্কুলে ঢুকে লুঠপাটের পাশাপাশি এক বৃদ্ধ সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মঙ্গলবার দোষী সাব্যস্ত করা হয় ৬ জনকে। এদিন ঘোষণা হল সাজা।