পঞ্চায়েতের মনোনয়ন ঘিরে রণক্ষেত্র বীরভূমের নলহাটি, তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে মাথা ফাটল প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের
বীরভূম: বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েতের মনোনয়ন দাখিলের চতুর্থ দিনেও মুড়ি-মুড়কির মতো পড়ল বোমা। চলল তির-ধনুক নিয়ে মিছিল। হল রক্তপাত। তবে এই ক’দিন ধরে যে লড়াইটা তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ছিল, এদিন সেখানে ঢুকে পড়ল সিপিএমও। বীরভূমের নলহাটি এক নম্বর ব্লকে সকাল সাড়ে এগারোটা নাগাদ তির-ধনুক নিয়ে মিছিল করে মনোনয়ন পেশ করতে বিডিও অফিসের দিকে এগোতে শুরু করে সিপিএম। নেতৃত্বে ছিলেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম। কিন্তু, বিডিও অফিসের সামনে পৌঁছতেই তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়। সিপিএমের মিছিল লক্ষ্য করে উড়ে আসে ইট, বোমা। সেই সঙ্গে লাঠি নিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মিছিলের ওপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। খণ্ডযুদ্ধে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। কিন্তু, সেই অবস্থাতেই তিনি প্রার্থীদের নিয়ে বিডিও অফিসে ঢুকে যান। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মেরেছে। রামচন্দ্র ডোমের ওপর হামলার ঘটনার নিন্দা করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর ট্যুইট, বীরভূমের নলহাটিতে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোমের উপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বামকর্মীরা যথাসাধ্য প্রতিরোধ করে ভিতরে ঢুকতে পেরেছে। তবে সিপিএম যখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলছে, তখন তৃণমূল আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে সিপিএমের অস্ত্র মিছিল নিয়েই। মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, একটি জেলায় সিপিএম অস্ত্র নিয়ে মিছিল করছে। এখানে এসে বলছে তৃণমূল করেছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, সিপিএমের অস্ত্র মিছিল দেখলাম। পায়ের তলায় মাটি নেই। পাল্টা জবাব দিয়েছে সিপিএম। রামচন্দ্র ডোমের দাবি, এগুলো ট্র্যাডিশনাল আর্ম। রক্তাক্ত এক ব্যাক্তি মাটিতে পড়েছিলেন। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করতে যায়। কিন্তু চারদিকে তখন পরিস্থিতি অশান্ত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশকে শূন্যে গুলি চালাতে হয়। এই ঘটনায় রামচন্দ্র ডোম সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে তৃণমূল। নলহাটি এক নম্বর ব্লকের মতো, নলহাটি দু’নম্বর ব্লকেও সকাল ১০টা থেকে দেখা গিয়েছে দুষ্কৃতী তাণ্ডব। বিডিও অফিসের বাইরে মুহূর্মুহূ পড়েছে বোমা। মুরারইতে সিপিএম প্রার্থীরা মিছিল করে মনোনয়ন দিতে এলে তাঁদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। শেষমেশ মনোনয়ন না দিয়েই ফিরে যান সিপিএম প্রার্থীরা। তৃণমূল অবশ্য হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ময়ূরেশ্বরে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা জটিল মণ্ডলের নেতৃত্বে দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায় বাইক বাহিনীকে। হাতে ঝাণ্ডা ও লাঠি নিয়ে ষাটপলসা এলাকায় ঘুরে বেড়ায় তারা। অনেকে বলছেন, মনোনয়ন পর্বেই বীরভূম যা খেল দেখাচ্ছে, এরপর ভোটে কী হবে, তা ভেবে শঙ্কিত অনেকেই।