রিষড়াকাণ্ড: জেল হেফাজত শাহিদের, সাসপেন্ড করল কলেজ, মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ নিগৃহীতা
হুগলি: রিষড়াকাণ্ডে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। এমনকী অভিযুক্ত শাহিদ হাসান খানকে নিজেদের হেফাজতেও চাইনি তারা। আদালতে আত্মসমর্পণের পর ছাত্রনেতাকে জেল হেফাজতে পাঠিয়েছেন বিচারক। যার জেরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিগৃহীতা ছাত্রী। বলেন, অ্যারেস্ট করলে ভাল হত। কিন্ত সেটা তো হল না। যেভাবে আমাকে মারধর করা হয়েছে, তাতে আমি কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি। এরপর তো জামিন পেয়ে যাবে। শুধু নিগৃহীতাই নন, বিভিন্ন মহল থেকেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাট্যব্যক্তিত্ব কৌশিক সেন বলেন, পুলিশ অ্যারেস্ট করল না, পুলিশ কী করবে, নিজেই মাথা লুকোয়, পুলিশির পদক্ষেপ রাজনীতির ওপর নির্ভরশীল। প্রভাবশালী ব্যক্তির ছেলে। আরেক অভিনেতা বাদশা মৈত্র বলেন, পুলিশের তো কিছু করার নেই, রাজনীতির ওপর নির্ভর করে। যদিও, পুলিশ সূত্রে বক্তব্য, এটা শ্লীলতাহানির মামলা। অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার মতো কিছু নেই। তাই হেফাজতে চাওয়া হয়নি। শুক্রবার শ্রীরামপুর আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়ে অভিযুক্তের আইনজীবী দাবি করেন, মিডিয়া ট্রায়ালের ওপর ভিত্তি করে এই অভিযোগ হয়েছে। এবিপি আনন্দ-র কাছে জামিন চাইতে আসিনি। মাননীয় এসিজেএম-এর কাছে জামিনের আবেদন জানাচ্ছি। ধৃতের বিরুদ্ধে একটিমাত্র ধারা জামিন অযোগ্য। এটা একেবারেই রাজনৈতিক ঘটনা, ইউনিয়ন ভিত্তিক ঘটনা। কলেজে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ থাকতে পারে। এই ধরনের ঘটনায় রং লাগানো হয়েছে। এক বা দু’দিন নয়, ৪৫ দিন পর এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং সেটা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে। এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া হোক। পাল্টা সরকারি আইনজীবী সওয়ালে বলেন, জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্তকে জামিন দেওয়া উচিত হবে না। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেলা হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এদিকে, এই প্রেক্ষাপটেই সামনে এসেছে নিগৃহীতার লেখা একটি চিঠি। চিঠিতে তারিখ রয়েছে ৫.১২.১৭। অর্থাৎ যে দিন ইউনিয়ন রুমে ঘটনাটি ঘটে, তার পরের দিন। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে লেখা চিঠিতে ছাত্রী লিখছেন, গতকাল আমি সব ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে জিএস এবং ক্যাশিয়ারকে লাথি মারি। আমরা একে অপরের সঙ্গে ঝগড়া করি, পরে মিটিয়ে নিই। ভবিষ্যতে আমি জিএস এবং ইউনিয়নের অন্য সদস্যদের নামে অভিযোগ করব না। গতকাল আমি আমাদের কলেজের জিএস-এর সঙ্গে ইউনিয়ন রুমে মারপিট করেছি, এটা আমার ভুল। এই চিঠিকেই হাতিয়ার করছেন অভিযুক্ত জিএসের আইনজীবী। পাল্টা অভিযোগকারিণীর দাবি, তাঁকে হুমকি দিয়ে জোর করে এই চিঠি লেখানো হয়েছিল। এই প্রেক্ষাপটে অভিযোগকারিণীর সঙ্গে অভিযুক্তের কয়েকটি ছবিও সামনে এসেছে। ছাত্রীর দাবি, তাঁরা আগে বন্ধু ছিলেন, তাই ছবি থাকাও স্বাভাবিক। এদিকে, ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা ঘিরে তুঙ্গে চাপানউতোর। ছাত্রী নিগ্রহের প্রতিবাদে এদিন কলেজের গেটের বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং এসএফআই। পাল্টা আদালতে চত্বরে সদ্য প্রাক্তন জিএসকে ফাঁসানোর অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান তাঁর কিছু অনুগামী। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে, মাকে সঙ্গে নিয়ে বালি থেকে কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যান নিগৃহীতা কলেজ ছাত্রী। সেখানে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গোটা বিষয়টি জানান তিনি। ছাত্রীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে অভিযোগ জমা দিতে বলেছেন। অভিযুক্ত জেলে গেলেও আতঙ্কে পিছু ছাড়ছে না নিগৃহীতার। বলেন, এখনও কলেজ যেতে ভয় লাগছে। ইতিমধ্যে অভিযুক্ত শাহিদ খানকে সাসপেন্ড করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এক মাস আগে ঘটনা ঘটলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে জানতে চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূল সভাপতির কাছেও রিপোর্ট চেয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।