Holi 2024: নানা রঙে খেলা, হোলির নানা নাম; ফাগুয়া থেকে মশান
Various Types Of Holi In India: সারা দেশজুড়েই পালন করা হয় হোলি। কিন্তু স্থানভেদে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় হোলির বিচিত্র নাম ও বিচিত্র রীতিনীতি।
![Holi 2024: নানা রঙে খেলা, হোলির নানা নাম; ফাগুয়া থেকে মশান Holi 2024 Various Types Of Holi Across India In Bengali Holi 2024: নানা রঙে খেলা, হোলির নানা নাম; ফাগুয়া থেকে মশান](https://feeds.abplive.com/onecms/images/uploaded-images/2024/03/20/0294ca28122d52369bb69f60705c58761710940098638928_original.png?impolicy=abp_cdn&imwidth=1200&height=675)
কলকাতা: বসন্তের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বসন্তোৎসব। আর বসন্তোৎসব মানেই দোল পূর্ণিমা। দোলযাত্রায় বাংলার বুকজুড়ে আবির ও রঙের খেলা। বহু প্রাচীনকাল থেকে এই রং খেলার রীতি শুরু হয়েছিল ভারতের বুকে। তাই বাংলার বাইরে গোটা দেশেই এই খেলা হয়। বাংলায় আবির মাখানোর এই খেলা দোল নামে পরিচিত হলেও গোটা দেশে এর নাম ভিন্ন ভিন্ন। আবার নাম বিশেষে হোলির ধরনটাও আলাদা, মজার, ঐতিহ্যের। লাঠমার হোলি থেকে মশান হোলি, ফাগুয়া থেকে শিমগা তেমনই ঐতিহ্যের হোলি।
বসন্তোৎসব
প্রথমেই শুরু করা যাক বসন্তোৎসব দিয়ে। নাম বাংলার হলেও গোটা বাংলার থেকে এই রং খেলার ধরন আলাদা। কারণ এখানে রং বলতে শুধুই আবির। উৎসবের উদযাপনে বড় ভূমিকা থাকে প্রকৃতির। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই এই হোলি খেলার সূচনা হয় বীরভূমের শান্তিনিকেতনে। গোটা উৎসব পরিকল্পনার মূলেও ছিলেন কবিগুরু। আজও সেই ঐতিহ্য অমলিন রাখতে সচেষ্ট শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা।
লাঠমার হোলি
লাঠমার কথার অর্থ ‘লাঠি দিয়ে মার’। রাধার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কৃষ্ণ। তখনই গোপিনীরা মিলে এগিয়ে আসেন। সবাই মিলে তাড়া দেন কৃষ্ণকে। হাতে লাঠি থাকায় মুখেও তাদের ছিল সেই একই বুলি। কৃষ্ণ ও রাধার হোলি খেলা তাই এই বিশেষ ভাবনায় উদযাপিত হয়। উদযাপিত হয় উত্তর প্রদেশের মথুরার নিকটবর্তী নন্দগ্রাম ও বর্ষণা গ্রামে। প্রসঙ্গত, মনে করা হয়, ভারতে প্রথম হোলি খেলা শুরু হয়েছিল এখানেই। হোলির আনুষ্ঠানিক তারিখ যাই হোক না কেন, এক সপ্তাহ আগে থেকেই খেলা শুরু হয়ে যায় বর্ষণায়। হোলির থিম – লাঠমার!
ফুলের হোলি
বৃন্দাবনের মন্দির প্রাঙ্গণে এই বিশেষ হোলি উৎসব উদযাপন হয়। হোলির আগের একাদশীর দিন এই দিনটির উদযাপন হয় বাঁকেবিহারী মন্দিরে। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই ফুলের হোলি জনপ্রিয়। কোনও আবির বা রং নয়, এমনকি রংগোলা জলও থাকে না এই হোলিতে। বরং ফুল দিয়েই আবির খেলা হয় বৃন্দাবন মন্দির প্রাঙ্গণে।
হোলা মহল্লা
হোলির দিন থেকেই বছর শুরু হয় শিখদের। নববর্ষ উপলক্ষে এই দিনটি বিশেষভাবে হোলি উৎসব উদযাপন হয়। যাকে স্থানীয় সংস্কৃতিতে হোলা মহল্লা বলা হয়। শিখ ধর্মগুরু গুরু গোবিন্দ সিং প্রথম এই উদযাপন শুরু করেন। তবে এই দিনটি মূলত প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনী হয় তলোয়াড় খেলার, বিভিন্ন শিল্পকলার, কুস্তি ও পাগড়ি বাঁধার!
খাড়ি হোলি
উত্তরাখন্ডের কুমায়ুন এলাকায় এই হোলি খেলা হয়। তবে হোলি খেলার পাশাপাশি গানের আসর বসে সেখানে। সকলে মিলে স্থানীয় পোশাকে জড়ো হন হোলি উদযাপনে। তোলির পথে ঘুরে ঘুরে চলে গান। খাড়ি গান। আর খাড়ি গানের সুরেই উদযাপন হয় খাড়ি হোলির।
ফাগুয়া
ঝাড়খন্ড আদিবাসীদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় নাচ হল ফাগুয়া। এই নাচের তালে তালেই উদযাপন হয় হোলির। ভোজপুরি ভাষায় ফাগুয়া শব্দের অর্থ হলো হোলি। ঝাড়খন্ড এবং তার সংকট সংলগ্ন বিহার এলাকায় এই হোলি খেলা হয়। হোলি উদযাপনের আগে এখানে হোলিকা দহনের রীতি রয়েছে।
আয়োসাঙ
মণিপুরে হোলি আয়োসাঙ নামে পরিচিত। তবে হোলির দিন এখানে হোলি উদযাপন হয় না। বরং উদযাপন শুরু হয় ছয়দিন আগে থেকে। দোল পূর্ণিমার আগে বাংলায় যেমন ন্যাড়াপোড়ার রীতি রয়েছে, তেমনটাই রয়েছে মণিপুরেও। লোকসংস্কৃতির বড় ভূমিকা রয়েছে মণিপুরের আয়োসাঙে। লোকনৃত্যের মাধ্যমে এই হোলি উদযাপন করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের পুজো হয় উদযাপনের মাঝেই। থাবাল চোঙবা মণিপুরের বিখ্যাত লোকনৃত্য। হোলির ছয় দিন এই বিশেষ লোকনৃত্যটিই সেরা আকর্ষণ হিসেবে গোটা দেশে জনপ্রিয়।
শিমগা
মহারাষ্ট্রের হোলির নাম শিমগা। অনেকে একে রংপঞ্চমীও বলে থাকেন। উত্তর ভারতের মতোই একই রীতি মেনে এখানে হোলিকা দহন করা হয়। তবে মহারাষ্ট্রের এই হোলির বিশেষত্ব রঙের ব্য়বহারে। হোলিকা দহনের পর দিন রঙপঞ্চমীর পঞ্চম দিন। সেই দিনেই রঙের খেলা তুঙ্গে ওঠে। হোলির এই দিনটির উদযাপনের জন্য মুখিয়ে থাকেন সকল মারাঠারা।
মঞ্জল কুলি
উত্তর ভারতের থেকে দক্ষিণ ভারতের হোলি উদযাপনের চেহারা কিছুটা আলাদা। দক্ষিণ ভারতে হোলিকে উকুলি বা মঞ্জল কুলি হিসেবে পালন করা হয়। এখানে হোলির উদযাপন হয় কোঙ্কনি ও কুদুম্বিদের মধ্যে। কেরলের এই দুই উপজাতির মধ্যে রং খেলা হয় হোলির দিন। তবে হোলির রং একটু অবাক করতে পারে। কারণ রং খেলার জন্য় প্রাথমিকভাবে জনপ্রিয় হল হলুদ ! তবে এই হোলির উৎসব কোঙ্কনি ও কুদুম্বিদের মধ্য়েই সীমাবদ্ধ। কেরলের অন্য স্থানে সেভাবে হোলি খেলার কোনও ঐতিহ্য নেই।
ধুলন্দি
ভারতের পশ্চিম দিকের রাজ্য রাজস্থান। আর সেই রাজ্যে হোলির দিনে ধুলন্দি উৎসব হয়। মূলত জয়পুর ও রাজস্থানের আশেপাশের এলাকাতে অনুষ্ঠিত হয় ধুলন্দি উৎসব। অন্য়ান্য হোলি খেলার মতোই এখানে হোলিকা দহনের পর দিন হোলি খেলার উৎসব হয়। ধুলন্দি উৎসব হয় হোলির দ্বিতীয় দিনে হোলিকা দহনের পর। প্রথম দিন হোলি খেলা হয়ে গেলে কাঠ জ্বালিয়ে চারপাশে গোল হয়ে বসে সন্ধ্যে কাটে সকলের। এই বিশেষ আয়োজনটিকে ছোটি হোলি বা হোলিকা দীপক বলা হয়।
মশান হোলি
মশান হোলি হোলির আগেই পালন করা হয়। বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটে এই হোলির উদযাপন করা হয়। তবে এই খেলায় মুখ্য ঈশ্বরের স্থানে দেখা যায় শিবকে। কৃষ্ণ এখানে অনুপস্থিত। মণিকর্ণিকা ঘাটে ছাই দিয়ে এই হোলি খেলা হয়। শবদেহ পোড়ানোর পর তার ছাই কুড়িয়ে নেওয়া হয়। সেই ছাই দিয়ে সবাই হোলি খেলেন রং খেলার মতো। কথিত আছে, মহাদেব এই ঘাটে এসেছিলেন তার অনুচর ভূত, প্রেত ও অশরীরীদের সঙ্গে হোলি খেলতে। সেই থেকেই শবদাহের ছাই নিয়ে হোলি খেলার চল।
ফাকুয়া
ঝাড়খন্ড বিহারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যেমন ফাগুয়া তেমনি অসমের হোলির উৎসবের নাম ফাকুয়াহ। তবে নামে আলাদা হলেও বাংলার দোলযাত্রার সঙ্গে অনেকটাই মিল রয়েছে অসমের আবির উৎসবের। বাংলার মতই দুই দিন ধরে দোল উদযাপন করা হয়। প্রথম দিন হোলিকা দহন উৎসব পালন করা হয়। অর্থাৎ ন্যাড়াপোড়া। এর পর দিন রং আর আবির নিয়ে তুমুল খেলা।
রয়্যাল হোলি
আদতে রাজ পরিবারের হোলিকেই রয়্যাল হোলি বোঝানো হয়ে থাকে। রাজস্থানের উদয়পুরে এই হোলির উৎসব হয়। কাঠে আগুন জ্বালিয়ে প্রথম দিনের হোলিকা দহন উৎসব পালন করা হয়। এর পর দিন হোলির চিরাচরিত উৎসব। তবে রাজপরিবারের হোলি উৎসব বলে কথা। তাই বিশাল বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। আয়োজনের দায়িত্বে থাকে মেবারের রাজপুতানা পরিবার। তাদের এই আয়োজন ঘিরে প্রতি বছরই সমান উন্মাদনা থাকে সারা উদয়পুরে।
আরও পড়ুন - Holi 2024: শবদাহের পর শ্মশানের ছাই মেখে উদযাপন ! মশান হোলির নেপথ্যে কোন কাহিনি ?
ট্রেন্ডিং
সেরা শিরোনাম
![ABP Premium](https://cdn.abplive.com/imagebank/metaverse-mid.png)