Iran Drought: জলশূন্য হওয়ার পথে শহর, মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান খরা, রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা ইরানে
Iran Water Crisis: ইরানের এই তীব্র জলসঙ্কট ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতেও।

নয়াদিল্লি: ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি বা সমৃদ্ধির জন্য নয়। ইরানের মসজিদে মসজিদে এই মুহূর্তে একই প্রার্থনা সকলের। দুই হাত তুলে, আকাশের দিকে শুধু কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি চাইছেন সাধারণ মানুষ। কারণ জলসঙ্কট ক্রমশ তীব্র হচ্ছে সেখানে। পরিস্থিতি এতটাই চরমে পৌঁছে গিয়েছে যে, রাজধানীই তেহরান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা চলছে। ইরানের এই তীব্র জলসঙ্কট ধরা পড়েছে স্যাটেলাইটের তোলা ছবিতেও। (Iran Water Crisis)
ইরানের রাজধানী তেহরানে ১.৫ কোটি বেশি মানুষের বসবাস। আর সেখানেই জলসঙ্কট সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। এই খরা চললে, শীঘ্রই তেহরান আর বসবাসযোগ্য থাকবে না। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুজ পেজেশকিয়ান ইতিমধ্যেই সেই মর্মে সতর্ক করেছেন নাগরিকদের। এমনকি রাজধানী খালি করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনার কথাও জানিয়েছেন। (Iran Drought)
নভেম্বর মাসে নাগরিকদের সতর্ক করতে গিয়ে পেজেশকিয়ান জানান, ডিসেম্বর শেষ হতে হতে যদি বর্ষার আগমন না ঘটে, সেক্ষেত্রে সরকারকে দৈনিক জল খরচের মাত্রা বেঁধে দিতে হবে সরকারকে। এর পরও যদি সঙ্কট না ঘোচে, সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা করতেই হবে। তিনি বলেন, “জল খরচ বেঁধে দেওয়ার পরও যদি বৃষ্টি না হয়, সেক্ষেত্রে জলই থাকবে না আর। তাহলে তেহরান খালি করে দিতে হবে নাগরিকদের।”
রাজধানী অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা আগেও মাথাচাড়া দিয়েছে ইরানে। পূর্বতন সরকারের আমলেও এমন গুঞ্জন শোনা গিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম। তাই আর সম্মতি-অসম্মতির বালাই নেই, রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পরিস্থিতি না পাল্টালে তেহরান বসবাসযোগ্য থাকবে না বলে জানিয়েছেন খোন পেজেশকিয়ান।
কিন্তু ইরানের রাজধানীর এমন অবস্থা হল কেন? জলে কেন দেউলিয়া হতে হল তেহরানকে? এর নেপথ্যে একাধিক কার্যকারণ রয়েছে। সর্বপ্রথম তেহরানের লাগামছাড়া সম্প্রসারণকে দায়ী করছেন বিশেষেজ্ঞরা। গ্রাম্য এলাকায় পরিকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা না পৌঁছনোয়, শিক্ষা ও জীবনজীবিকার সন্ধানে রাজধানী তেহরানে ভিড় ক্রমশ বেড়েছে। ফলত বেড়েছে জলের চাহিদাও, যা পূরণ করার মতো জল নেই তেহরানের মাটির নীচে।
জলের প্রাচুর্যতা কোনও কালেই ছিল না ইরানে। শুষ্ক মাটিকে ফসল উৎপাদনের জন্য নিবিড় সেচের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল তারা। ভর্তুকিযুক্ত জল ও শক্তির ব্যবহার বেড়েছে সেখানে। ফলে নদী-নালা তো বটেই, মাটির নীচ থেকেও অত্যধিক মাত্রায় জল তোলা হচ্ছে। এর ফলে ভূগর্ভস্থ জলের জোগানও তলানিতে এসে ঠেকেছে এই মুহূর্তে। যে প্রধান জলাধার থেকে তেহরানে জল সরবরাহ করা হয়, তাতে এই মুহূর্তে ১১ শতাংশ জল পড়ে বলে Mehr News-কে জানিয়েছেন তেহরানের প্রাদেশিক জল ও পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ডিরেক্টর জেনারেল মহসিন আরদাকানি। তেহরানের উপকণ্ঠে যে লাটিয়ান বাঁধ রয়েছে, সেটিতে জল পড়ে রয়েছে ৯ শতাংশ। তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আমির কবীর বাঁধে ৮ শতাংশ জল পড়ে রয়েছে। ইরানের বৃহত্তম শহর মাশাদের জনসংখ্যা ৩০ লক্ষ প্রায়। সেখানকার জলাধারে ৩ শতাংশ জল আছে এই মুহূর্তে।
১৯৭৯-এর বিপ্লবের সময় থেকেই ইরান জলের ব্যাপারে আগ্রাসী। পর পর বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। নদীর অভিমুখ শহরের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয় পর্যন্ত। সেচ ব্যবস্থার প্রসার ঘটে। খাদ্যে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে, পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা এড়াতে এত খননকার্য চলে যে, দেশের ভৌগলিক পরিবেশে তার প্রভাব পড়ে। হ্রদগুলি ক্রমশ শুকিয়ে যেতে শুরু করে, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর নেমে যেতে শুরু করে, বাড়তে শুরু করে জলে লবণের মাত্রা। ইরানের প্রায় সর্বত্রই এখন একই অবস্থা।
পাশাপাশি, ইরানে খরা দেখা দেওয়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনাবৃষ্টি। ২০২০ সাল থেকে স্বাভাবিকের থেকে অস্বাভাবিক রকম কম বৃষ্টি হচ্ছে ইরানে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবও পড়ছে সেখানকার জলবায়ুর উপর। ১৯৭৭ সালের পর, ২০২৫ ইরানের জন্য উষ্ণতম বছর ছিল। তেহরান-সহ অন্য শহরগুলির অবস্থাও সঙ্কটজনক। এই নিয়ে পর পর ষষ্ঠ বছর খরা দেখা দিয়েছে ইরানে। ইরান সরকার কৃত্রিম উপায়ে মেঘ বুনে বৃষ্টি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু গোটাটাই কাগজে কলমে, বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ।
পাশাপাশি, পরিকাঠামোগত খামতিও রয়েছে। জানা গিয়েছে, শহরাঞ্চলে যে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়, সেগুলির অবস্থা তথৈবচ। পানীয় জলের ৩০ শতাংশই পুরনো, জীর্ণ পাইপ থেকে চুঁইয়ে পড়ে নষ্ট হয়। ফলে সরকারের উপরও অনাস্থা জন্মেছে মানুষের। এখন ঈশ্বরই ভরসা তাঁদের।






















