নয়াদিল্লি: ঝাপসা দেখতে, চোখে ধাঁধা লেগে যায় এমন নয়, একেবারে পরিষ্কার ছবি। এক এক করে চেনা যায় প্রত্যেকটি অংশই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দৌলতে এবার এমনই শক্তিশালী MRI স্ক্যানার হাতে এল। মানুষের মস্তিষ্কের খুঁটিনাটি বুঝতে, জটিল রোগ নির্ধারণ করতে এই শক্তিশালী MRI স্ক্যানার আগামী দিনে অত্যন্ত সহায়ক হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সকলে। (Most Powerful MRI Scanner)
ফ্রান্সের অ্যাটমিক এনার্জি কমিশনের (France Atomic Energy Commission) গবেষকরা প্রথম বার ২০২১ সালে এই MRI স্ক্যানার ব্যবহার করেন। ওই যন্ত্রের সামনে প্রথম বার কুমড়ো পরখ করে দেখা হয়। মানুষের চিকিৎসায় ওই যন্ত্র ব্যবহারে ছাড়পত্র মেলে অতি সম্প্রতিই। আর তাতে একেবারে গোড়াতেই কল্পনাতীত সাফল্য মিলল। মানুষের মস্তিষ্কের অন্দরমহল একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠল স্ক্যানারে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাকরঁ এ নিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন গবেষকদের।
শক্তিশালী এই Magnetic Resonance Imaging স্ক্যানারটি মানুষের উপর প্রয়োগ করার বিষয়টি সামনে আসতেই বহু মানুষ স্বেচ্ছায় এগিয়ে যান। সকলের মধ্যে থেকে ২০ জন সুস্থ মানুষকে বেছে নেওয়া হয় স্ক্যানার পরীক্ষার জন্য। প্যারিসের দক্ষিণে যেখানে একাধিক প্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে, সেখানেই এই পরীক্ষা চালানো হয়, যাতে সাফল্য এসেছে একেবারে গোড়াতেই।
আরও পড়ুন: Sand Replacement: বাড়ি-ঘর তৈরিতে আর বালি লাগবে না ? বিজ্ঞানীরা পেলেন বিকল্প রাস্তা
জানা গিয়েছে, এত নির্ভুল, এত স্পষ্ট ছবি আগে কখনও দেখা যায়নি। গবেষণায় যুক্ত আলেহান্দ্রে ভি জানান, শক্তিশালী এই স্ক্যানার ১১.৭ টেসলা (নিকোলাই টেসলার নামানুসারে)চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে।এর ফলে সাধারণ MRI স্ক্যানারের তুলনায় এই যন্ত্র ১০ গুণ বেশি নির্ভুল এবং স্পষ্ট ছবি তুলতে পারে। সাধারণ হাসপাতালে থাকা MRI স্ক্যানারগুলির তৈরি ৩ টেসলার বেশি চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে না, তাই এতটা ফারাক বলে মত বিজ্ঞানীদের।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শক্তিশালী এই MRI স্ক্যানারের মাধ্যমে মস্তিষ্কের অতিক্ষুদ্র জালিকাগুলিও স্পষ্ট দেখা যায়। লঘুমস্তিষ্কের যে অংশ এতদিন চোখেই পড়ত না, তা-ও স্পষ্ট দেখা সম্ভব।
কোন উপায়ে এত নির্ভুল এবং স্পষ্ট ছবি তোলা সম্ভব হল, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শক্তিশালী এই MRI স্ক্যানারে ১৬ ফুট দীর্ঘ একটি সিলিন্ডার রয়েছে, যার মধ্যে বসানো রয়েছে ১৩২ টন ওজনের একটি চুম্বক। ১৫০০ amps বিদ্যুৎবহনকারী একটি কয়েল দ্বারা চালিত সেটি। মানুষ ঢুকতে পারে এমন ৯০ সেন্টিমিটারের প্রবেশপথ রয়েছে। গত দুই দশকের চেষ্টায় ফরাসি এবং জার্মান বিজ্ঞানীরে সেটি তৈরি করেছেন। আমেরিকা এবং দক্ষিণ কোরিয়াও অনুরূপ একটি MRI স্ক্যানার তৈরির কাজ করছে। তবে এখনও পর্যন্ত মানুষের উপর সেটি প্রয়োগ করতে পারেনি তারা। আলজাইমার্সের মতো রোগের কারণ বুঝতে, কোন ওষুধের কী প্রভাব পড়ছে মস্তিষ্কে, তাও বুঝতে এই যন্ত্র সহায়ক হবে বলে মত গবেষকদের।